রবিবার ● ৩০ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » ইসিআর বাধ্যতামূলক ২৪ ব্যবসায়
ইসিআর বাধ্যতামূলক ২৪ ব্যবসায়
আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড, মিষ্টান্ন ভান্ডার, বিউটি পারলার, তৈরি পোশাকের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ ২৪ ধরনের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব ব্যবসায় কাগজে-কলমে হিসাব রাখার দিন শেষ। দিনে ১৩ হাজার ৭০০ টাকার বেশি বেচাকেনা হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব রাখতে হবে। সে জন্য এখন থেকে ২৪ ধরনের ব্যবসায় ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর), ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি), সেল ডেটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) কিংবা পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
১৩ জুন থেকে ২৪ ধরনের ব্যবসায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতিমধ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন হলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখতে হবে। অর্থাৎ নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী বার্ষিক লেনদেন ভ্যাটমুক্ত সীমার ওপরে উঠলেই ইসিআর মেশিন, ইএফডি, এসডিসি, পিওএস ব্যবস্থা থাকতে হবে। নতুন ভ্যাট আইনটি আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন করা হবে।
যেসব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইসিআর মেশিন লাগাতে হবে, সেগুলো হলো আবাসিক হোটেল; রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকান; ডেকোরেটর্স ও ক্যাটারার্স; মোটরগাড়ির গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ ও ডকইয়ার্ড; বিজ্ঞাপনী সংস্থা; ছাপাখানা ও বাঁধাই সংস্থা; কমিউনিটি সেন্টার; মিষ্টান্ন ভান্ডার; স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার এবং সোনা-রুপার দোকানদার এবং স্বর্ণ পাকাকারী; আসবাব বিক্রয়কেন্দ্র; কুরিয়ার ও এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস; বিউটি পারলার; হেলথ ক্লাব ও ফিটনেস সেন্টার; কোচিং সেন্টার; সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাব; তৈরি পোশাকের দোকান; ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালিসামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র; শপিং সেন্টার ও শপিং মলের সব সেবা প্রদানকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান; ডিপার্টমেন্টাল স্টোর; জেনারেল স্টোর ও সুপারশপ; বড় ও মাঝারি ব্যবসা (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান; যান্ত্রিক লন্ড্রি, সিনেমা হল এবং সিকিউরিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় হিসাব রাখার উদ্যোগটি অবশ্যই ভালো। তবে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় আছে। এর আগে একবার ইসিআর মেশিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন ইসিআর, ইএফডি কিংবা পিওস-এসব ব্যবস্থা যাতে সঠিকভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লাগানো হয়, তা নজরদারিতে রাখতে হবে।
এদিকে স্বয়ংক্রিয় হিসাব পদ্ধতির জন্য ব্যবহৃত মেশিনের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, তারও একটি নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। সেখানে বলা হয়েছে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখার মেশিনে ভ্যাটের বিদ্যমান হারগুলো গণনার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিক্রেতাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। মেশিন হতে হবে ব্যাটারিতে চার্জযোগ্য কিংবা বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা থাকতে হবে। ক্রেতাকে যে রসিদটি দেওয়া হবে, তাতে ব্যবসার নাম; ঠিকানা; ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) ; পণ্য বা সেবার নাম, মূল্য, ভ্যাট হার; টাকা পরিশোধের মাধ্যম (নগদ, কার্ড, চেক, ক্রেডিট) ; সময় ও তারিখ থাকতে হবে। এ ছাড়া রসিদে বারকোড বা কিউআর কোডও থাকতে হবে।
যেসব ব্যবসায় বাধ্যতামূলক
আবাসিক হোটেল; রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকান
ডেকোরেটর্স ও ক্যাটারার্স; মোটরগাড়ির গ্যারেজ
ওয়ার্কশপ ও ডকইয়ার্ড; বিজ্ঞাপনী সংস্থা
ছাপাখানা ও বাঁধাই সংস্থা; কমিউনিটি সেন্টার; মিষ্টান্ন ভান্ডার
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, সব রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীর পক্ষে এই মুহূর্তে ইসিআর মেশিন বা ফিসক্যাল ডিভাইস লাগানো সম্ভব নয়। সেই ধরনের প্রস্তুতিও নেই। আগে অনেকেই প্যাকেজ ভ্যাট দিতেন। কিন্তু এখনকার ৫০ লাখ টাকার বেশি লেনদেন সেটা নির্ধারণ করতে ঝামেলা হবে। আগামীকাল শনিবার এ বিষয়ে সমিতির সদস্যদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
এর আগেও ২০০৭ সালে কিছু ব্যবসায় ইসিআর মেশিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তখন ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, নতুন ইসিআর মেশিন লাগালে ব্যবসার খরচ বাড়বে, যা পণ্য বা সেবার মূল্য বাড়িয়ে দেবে।
এমন প্রেক্ষাপটে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য দুই বছর আগে এনবিআরের পক্ষ থেকে কেনা দামে ব্যবসায়ীদের ইসিআর মেশিন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ইসিআর মেশিন এখনো আসেনি। ব্যবসায়ীরাও ইসিআর মেশিন পাননি। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ৫০ হাজার ইসিআর মেশিন আমদানি করার জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এসব ইসিআর দেশে আসবে।
এই বিষয়ে মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, এনবিআরকে কেন এসব মেশিন আমদানি করে সরবরাহ করতে হবে। এতে যাঁরা মেশিন পাবেন না, তাঁরা অজুহাত পাবেন। আসলে এই ধরনের মেশিন লাগানোর দায়দায়িত্ব ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছেন না। তাই শেষ পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব রাখার উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
বড় ব্যবসায়ীদের হিসাব রাখার জন্য এনবিআর সফটওয়্যার নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ১১টি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে এনবিআর। কিন্তু এখনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ওই সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সফটওয়্যার নেননি।
বার্ষিক পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য এনবিআরের নির্ধারিত সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা চাইলে সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো