রবিবার ● ১৯ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনের সব অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না
আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনের সব অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না
ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েগুলোর (আইজিডব্লিউ) মাধ্যমে গত সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি মিনিট কল এসেছে দেশে। প্রতি মিনিট কলে নির্ধারিত হারে বৈদেশিক মুদ্রাও আসার কথা। তবে আইজিডব্লিউগুলোর ফরেন কারেন্সি (এফসি) অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, এ সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় ৩০ কোটি ডলার কম অর্থ দেশে এনেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট পুনর্নির্ধারণ করে বিটিআরসি। এতে মিনিটপ্রতি সর্বনিম্ন কল টার্মিনেশন রেট ১ দশমিক ৭৫ ও সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ সেন্ট নির্ধারণ করা হয়। এর আগে প্রতি মিনিট কলের সর্বনিম্ন রেট ছিল ১ দশমিক ৫ সেন্ট, যদিও ওই সময় পর্যন্ত আইজিডব্লিউ অপারেটররা ২ সেন্ট হারে কল টার্মিনেশন করেছে।
আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত বিটিআরসির সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, সর্বনিম্ন কল টার্মিনেশন রেট অনুযায়ী আয় ভাগাভাগি করবে আইজিডব্লিউ। তবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের জন্য বিটিসিএলসহ সব আইজিডব্লিউকে সর্বোচ্চ কলরেটে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন করতে হবে। এর অন্যথা হলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা কম আনা হয়েছে বলে বিবেচনা করবে বিটিআরসি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা নেবে সংস্থাটি।
এফসি অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রদানের বিষয়েও আইজিডব্লিউগুলোকে ২০১৫ সালের মার্চে এক নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। এতে বলা হয়, দুই মাস পরপর এ তথ্য দিতে হবে। পূর্ববর্তী দুই মাসের এফসি অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত ব্যাংক বিবরণী পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয় তাদের।
সম্প্রতি আইজিডব্লিউগুলোর ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের ব্যাংক বিবরণী পরীক্ষা ও যাচাই করে দেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সর্বোচ্চ রেটে নির্দিষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এফসি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেশে এনেছে মাত্র চারটি আইজিডব্লিউ। এগুলো হলো ওয়ানএশিয়া অ্যালায়েন্স, বিজিটেল, বাংলাটেল ও প্লাটিনাম। এছাড়া সর্বনিম্ন রেটের চেয়ে বেশি, কিন্তু সর্বোচ্চ রেটের কম হারে বৈদেশিক মুদ্রা এনেছে এমন আইজিডব্লিউ রয়েছে ১১টি। এগুলো হচ্ছে বাংলাট্র্যাক কমিউনিকেশনস, মীর টেলিকম, নভোটেল, গ্লোবাল ভয়েস টেলিকম, ইউনিক ইনফোওয়ে, ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশনস, ডিবিএল টেলিকম, সংবার্ড টেলিকম, সেল টেলিকম, এইচআরসি টেকনোলজিস ও এসএম কমিউনিকেশনস। অন্যদিকে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনের সর্বনিম্ন রেটের চেয়েও কম হারে বৈদেশিক মুদ্রা এনেছে এফসি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। অপারেটরগুলো হলো রুটস কমিউনিকেশনস, র্যাংকস টেলিকম, ফার্স্ট কমিউনিকেশনস, ভেনাস টেলিকম, মসফাইভ টেল, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে লিমিটেড (বিআইজিএল) ও সিগমা টেলিকম। নির্ধারিত হারে অর্থ না আনা এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে তিন বছরে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে রুটস কমিউনিকেশনসের মাধ্যমে, ৮৮২ কোটি মিনিট। প্রতিষ্ঠানটির এফসি অ্যাকাউন্টের তথ্য ও প্রকৃত টার্মিনেশনের মধ্যে ৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের পার্থক্য রয়েছে। সর্বোচ্চ রেটে প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টে ১৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলার আসার কথা থাকলেও এসেছে ৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। আইজিডব্লিউগুলোর মধ্যে এফসি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা এনেছে মীর টেলিকম। প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে তিন বছরে এফসি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার এনেছে।
এছাড়া গ্লোবাল ভয়েস ১৩ কোটি ৭০ লাখ, ইউনিক ইনফোওয়ে ১৩ কোটি, ডিজিকন ১২ কোটি, নভোটেল ১১ কোটি ৩৬ লাখ, বাংলাট্র্যাক ১০ কোটি ৬০ লাখ, এইচআরসি টেকনোলজিস ৫ কোটি ৫ লাখ, বাংলাটেল ৪ কোটি ৪৪ লাখ, সেল টেলিকম ৩ কোটি ৬৫ লাখ, র্যাংকস টেলিকম ৪২ লাখ, ডিবিএল টেলিকম ৪০ লাখ, ফার্স্ট কমিউনিকেশন ২ কোটি ৮৭ লাখ, ভেনাস টেলিকম ২ কোটি ২৪ লাখ, সংবার্ড টেলিকম ৯১ লাখ, মসফাইভ টেলিকম ১৩ লাখ, প্লাটিনাম কমিউনিকেশনস ১ কোটি ৫৪ লাখ, বিজিটেল ৬৯ লাখ, বিআইজিএল ৩২ লাখ, সিগমা টেলিকম ৩৬ লাখ, ওয়ানএশিয়া অ্যালায়েন্স ৯৭ লাখ ও এসএম কমিউনিকেশনস ৮৩ লাখ ডলার আয় করেছে এ সময়ে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এরই মধ্যে বিটিআরসির কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি।