বুধবার ● ১৫ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » অ্যাপ হালনাগাদ করে নেয়ার পরামর্শ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের
অ্যাপ হালনাগাদ করে নেয়ার পরামর্শ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের
ফেসবুক নিয়ন্ত্রিত মেসেজিং প্লাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য খোয়া গেছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ ১৫০ কোটি ব্যবহারকারীকে যত দ্রুত সম্ভব অ্যাপ হালনাগাদ করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। খবর বিবিসি।
হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের দাবি, নির্দিষ্ট কিছু ব্যবহারকারীকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলা অত্যন্ত দক্ষ ও উন্নত প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন সাইবার অপরাধীদের কাজ বলে মনে করা হচ্ছে। মাসখানেক আগেই এ হামলার বিষয় ধরতে পারেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা ভেঙে গ্রাহক তথ্য হাতিয়ে নিতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ভয়েস কলিং ফিচার। এ হামলার সঙ্গে ইসরায়েলি নিরাপত্তা কোম্পানি এনএসও গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা কোড ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপে হামলা চালানো হয়।
জানা গেছে, নির্দিষ্ট কোনো স্মার্টফোন থেকে ভয়েস কল করা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনে। কেউ ফোন কল ধরুক বা না ধরুক, স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্মার্টফোনে ইনস্টল হয়ে যাবে হ্যাকিংয়ের স্পাইওয়্যার। এভাবে বিপুলসংখ্যক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যে প্রবেশ করেছে সাইবার অপরাধীরা।
বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে গত শুক্রবারই প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার প্যাচ সরবরাহ করা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ হালনাগাদ করে নিলে তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। সাইবার অপরাধীরা হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস কল ফিচার কাজে লাগিয়ে নজরদারির সফটওয়্যার ডিভাইসে ইনস্টল করানোর অভিনব পদ্ধতি বের করেছে, যা হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে ইনস্টল করালেও ডিভাইসের কল লগে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকে না।
হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের নিরাপত্তা দল চলতি মাসের শুরুর দিকে নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্তের পর তা মানবাধিকার গ্রুপ, নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও মার্কিন বিচার বিভাগকে অবহিত করা হয়। ইসরায়েলি এনএসও গ্রুপ ছাড়াও এ হামলার পেছনে সরকারি মদদপুষ্ট কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপ এর আগে ‘সাইবার অস্ত্রের ডিলার’ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নকৃত সফটওয়্যার নির্দিষ্ট ডিভাইস থেকে স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়া অবস্থানগত তথ্য, মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার তথ্যও সংগ্রহ করতে পারে। এনএসও গ্রুপের সফটওয়্যার সন্ত্রাস ও অপরাধ ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুমোদিত সরকারি সংস্থা ব্যবহার করতে পারে।
অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে এনএসও গ্রুপ জানিয়েছে, তারা সিস্টেম পরিচালনা করে না। অনেক লাইসেন্স ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তা নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করে। যেকোনো অভিযোগ উঠলে তার তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এমনকি সিস্টেম বন্ধ করে দেয়া হয়।
বিশ্বব্যাপী ১৫০ কোটি মানুষ মেসেজিং, ভয়েস ও ভিডিও কলের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন। সাম্প্রতিক হামলায় কারা ভুক্তভোগী এবং কতসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্য খোয়া গেছে তা এত দ্রুত বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। তবে এ হামলা কেবল নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, অতীতেও তারা এনএসও গ্রুপের উন্নয়নকৃত টুল দিয়ে সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল।
অ্যামনেস্টি টেকের ডেপুটি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডানা ইংলেটন জানান, আপনি কিছু না করলেও আপনার ফোনে আক্রমণ করতে পারে তারা। সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীদের নজরদারিতে রাখার প্রচুর প্রমাণ আছে। এর জন্য জবাবদিহি থাকা উচিত।