রবিবার ● ১২ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নামে ২০০ কোটি টাকার প্রতারণা!
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নামে ২০০ কোটি টাকার প্রতারণা!
আউট সোর্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগে রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুস সালাম পলাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগের ফাঁদ পেতে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্নজনের ২০০ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার দুপুরে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম।
এর আগে গত ১০ মে রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ সময়ে তার ফ্ল্যাট, রেক্স আইটির ধানমন্ডির অফিস থেকে ঢাকা মেট্রো গ ২৯-০০১৭ নম্বরের একটি সেলুন কার, নগদ ছয় লাখ ৭১ হাজার টাকা, কিছু বিদেশি মুদ্রা, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ, কম্পিউটারের হার্ডডিক্স ও বিপুল পরিমাণ ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। পলাশের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মানিলন্ডারিং, প্রতারণা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে।
মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি আউট সোর্সিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা রি পেইড মার্কেটিংয়ের প্রচারণা চালাত। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় রেক্স আইটিতে বিনিয়োগ করলে ৫০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত রিটার্নের অবিশ্বাস্য অফার দেওয়া হতো। এই প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদেরকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হতো। ৈপ্রশিক্ষণার্থীরাও মনে করত এখানে বেশি লাভ পাওয়া যাবে। তাই অনেকে এখানে বিনিয়োগ করেন। এর বাইরেও অফারটি বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে দেওয়া হলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ডিজিটাল প্রতারণার শিকার কয়েকজনের অভিযোগ পেয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার গোপনে খবর নিয়ে সত্যতা পায়। পরে অভিযুক্ত আবদুস সালাম পলাশ ভিকটিমদের টাকা ফেরত দেওয়ার ভয়ে দেড় মাস আগে গা ঢাকা দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তিনি ঠিকানা গোপন করেন এবং বারবার মোবাইল নম্বর পাল্টাতে থাকেন। তবে তিনি প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে নতুন নতুন প্রজেক্ট খুলে বিনিয়োগকারীদের বিশেষ বিশেষ অফার দিতেন। তিনি দেশের বাইরে যাবারও প্রচারণা চালাতেন।
মোল্লা নজরুল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আবদুস সালাম পলাশ জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রথমে ফ্রি মার্কেটিংয়ে ক্যাম্পেইনে আগ্রহীদের নিয়োগ করা হতো, পরে তাদের পেইড মার্কেটিংয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। বিনিয়োগকারীদের বলা হতো পেইড মার্কেটিং করতে তাদের পোপাল অথবা ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েসহ কার্ড থাকতে হবে। আর বাংলাদেশে যেহেতু পোপালের কার্যক্রম নেই তাই তারা সরাসরি এখানে মার্কেটিং করতে পারবেনা। যেহেতু আবদুস সালাম পলাশ এই পেশার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত তাই তার আমেরিকান অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার মাধ্যমেই ক্যাম্পেইন চলবে। তাদের সন্দেহ দূর করার জন্য এডভারটেন গোল্ড নামের একটি সাইট তৈরি করেন, যা দেখতে অবিকল এডভারটেনের মতো।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আবদুস সালাম পলাশের জন্ম ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি। তার বাড়ি লক্ষীপুরের চন্দ্রগঞ্জের কল্যাণপুরে। তিনি ২০০৭ সালে সোনাইমুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজজের বসুন্ধরা শাখা থেকে পরে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ধানমন্ডি চাটার্ড ইউনির্ভাসিটি কলেজে সিএ পড়া শুরু করলেও তা শেষ করতে পারেননি। ২০১০ সালে আউট সোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন। ২০১৬ সালে তিনি নআইটি ভিশনে ট্রেইনার হিসেবে নয় মাস চাকরি করেন। এরপর ২০১৭ সালে কয়েকজন অংশীদারের রেক্স আইটি প্রতিষ্ঠা করেন। পলাশ প্রথমে রেক্স আইটিতে প্রশিক্ষণ করালেও পরে তিনি প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়েন।