শুক্রবার ● ২৭ জানুয়ারী ২০১২
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » বদলে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের চরের জীবন, বাড়ি বাড়ি সৌরবিদ্যুত
বদলে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের চরের জীবন, বাড়ি বাড়ি সৌরবিদ্যুত
রাজু মোস্তাফিজ, চর বলরামপুর গ্রাম থেকে ফিরে ॥ বদলে যাচ্ছে দুর্গম চরের মানুষের জীবন। তাদের বাড়িতে এখন সোলার বিদ্যুত ব্যবহার হয়। সন্ধ্যার পর পুরো গ্রাম আলোকিত হয়ে ওঠে। বিদ্যুতের আলোতে বাড়ির শিশুরা পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সবের পাশাপাশি চরের মানুষ তাদের ভাগ্য উন্নয়নে বাড়ির উঠোনে পেঁপেসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত করেছে। আবাদের পাশাপাশি এসব সবজি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাস, কচাকাটা, কেদার, নুনখাওয়া ও কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ২৫টি চরে আরডিআরএস জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
কুড়িগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৫৫ কি.মি. দূরে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাস ইউনিয়নের চর বলরামপুর গ্রাম। দুধকুমোর নদ পার হয়ে প্রায় এক কি.মি. দূরে চর বলরামপুর গ্রাম। নৌকা থেকে নেমেই ধু ধু বালুচর। চরের জমিতে মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত।গ্রামের প্রতিটি বাড়িঘর মাটি দিয়ে উঁচু করা। প্রতিটি বাড়ি বন্যার সময় পানিতে তলিয়ে যেত। আরডিআরএস কর্তৃপক্ষ বাড়িগুলো উঁচু করে দিয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে চরের মানুষ পেঁপেঁসহ বিভিন্ন শাক-সবজি আবাদ করেছে। চার দিকে সবুজের সমারোহ। বাড়িতে বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েল এবং পরিবেশ রক্ষায় স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন। বাড়ির চালে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। অন্ধকার রাতে কুপির পরিবর্তে ছেলেমেয়েরা সোলার লাইট ব্যবহার করছে।
চর বলরামপুর গ্রামের কোহিনুর (৩০), মমতা (৩৫), নবিজন (৪২) ও আনোয়ারা (২৮) জানান, তাদের বাড়ির ভিত উঁচু করায় বন্যার পানিতে বাড়ি তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই। আগে প্রতিবছরের বন্যায় তাদের নানা দুর্ভোগ হতো, জানমাল ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হতো। এখন আর হয় না। আরডিআরএস কতর্ৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়। তাতেই তারা এখন পরিবেশের বিরম্নপ প্রভাবের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে সহজভাবে। কৃষক আবদুল জলিল (৪৫) দুই বিঘা জমিতে করলা ও মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেছেন দু’মাস আগে। কিছুদিনের মধ্যে সবজি বিক্রি করতে পারবেন।
গ্রামের কৃষক হাকিম উদ্দিন (৫৫), ইসাহাক জানান, তাদের বীজ-সার সবই আরডিআরএস থেকে দেয়া হয়েছে।
একই গ্রামের তারা বানু (৪৫) বলেন, তার বাড়িতে রয়েছে সদস্যদের নিয়ে গঠিত ধান ব্যাংক। অভাবের সময় এ ধান তারা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। মাটির রাসত্মা তৈরি করে দেয়ায় গ্রামের মানুষ যোগাযোগ করতে পারছেন নৌকা-ঘাট পর্যনত্ম। গ্রামের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া সহজ হয়েছে। ধীরে ধীরে তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী বিলকিস (৯), মেরিনা (১০), পারম্নল (৮) জানায়, তারা ধারিয়া হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাদের গ্রামের প্রতিটি ছেলে মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যায়।
আরডিআরএস’ এর জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কেএম মারম্নফুজ্জামান বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের সবাইকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা চর বলরামপুর গ্রামের মতো নাগেশ্বরী উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ২৫টি চরাঞ্চলের লোকজনকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
তিনি আরও জানান, প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০টি গ্রামে দুর্যোগ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার ১০০০ সদস্যের মাধ্যমে সচেতনতার কৌশল বৃদ্ধি কার্যক্রম চলছে। মোট ৬০ বাড়ি ঘর উঁচুকরণ, ২ কিমি সংযোগ সড়ক স্থাপন, ৬০ জনকে উঁচু বাড়িতে ঘর মেরামতের জন্য সিমেন্ট খুঁটি প্রদান, ৬০টি পরিবারকে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা প্রদান, নিরাপদ পানির নিশ্চয়তার লক্ষ্যে নলকূপ স্থাপন ২৫টি, ২৪৩ জনকে সোলার প্যানেল প্রদান সহ প্রশিক্ষণ, ১০০ জনকে জৈব সার উৎপাদনে কম্পোস্ট পিট তৈরি ও সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।