মঙ্গলবার ● ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » ই-ক্যাব চালু করল ই-কমার্স সেবাকেন্দ্র
ই-ক্যাব চালু করল ই-কমার্স সেবাকেন্দ্র
তানিম,কন্টেন্ট কাউন্সিলরঃ
আজ থেকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) চালু করল ই-কমার্স সেবাকেন্দ্র। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকেউ বিনামূল্যে এ সেবাকেন্দ্রে যোগাযোগ করে ই-কমার্স ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট’ বিবিধ তথ্যসহ নানা ধরনের সেবা পাবেন। এছাড়াও ই-ক্যাব ২০১৫ সালকে ‘ই-কমার্স বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিসিএসের সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) প্রেসিডেন্ট আখতারুজ্জামান মঞ্জু, ই-ক্যাবের সভাপতি রাজিব আহমেদ, ই-ক্যাব ডিরেক্টর (গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স) রেজওয়ানুল হক জামী এবং ই-ক্যাবের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সারাজীতা। অনুষ্ঠানে ই-কমার্স সেবাকেন্দ্রের উদ্দেশ্য ও সেবাসমূহ এবং ‘ই-কমার্স বর্ষ’ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
ই-ক্যাব সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচশ’র মতো ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে। এছাড়া ফেসবুকে কমপক্ষে ৩০০০ পেজ রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবাসমূহ অনলাইনে বিক্রি করছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এরপরও বাংলাদেশে ই-কমার্স এখনো সেভাবে জনপ্রিয় নয়। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বড় শহরেই ই-কমার্স এখনো সীমিত রয়েছে। দেশীয় ই-কমার্স খাতকে গতিশীল করতে হলে সবার আগে ই-কমার্সকে আমাদের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই ই-ক্যাব ২০১৫ সালকে ‘ই-কমার্স বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ই-কমার্স নিয়ে আমাদের বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। নতুন ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্যে আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিলিতভাবে বেশ কয়েকটি কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছি। যেসব তরুণ-তরুণী ই-কমার্স ব্যবসায় আসতে চায় তাদের ই-কমার্স ব্যবসায়ের বিভিন্ন সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা এসব কর্মশালায় জানানো হবে।
আপনারা আরও জানেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের জন্য কোনো সুনির্দি’ নীতিমালা নেই। এ লক্ষে আমরা দেশীয় ই-কমার্স খাতের সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে মিলে পলিসি ডায়ালগ বা নীতি-সংলাপ করব। এসব সংলাপ থেকে সংগৃহীত তথ্য এবং পরামর্শ নিয়ে আমরা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করব, যেন সরকার ই-কমার্স খাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করে। এছাড়া ই-কমার্স মেলা, সেমিনারসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন আমরা করব। এছাড়াও বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত নিয়ে গবেষণা এবং ই-কমার্স খাতের ওপর একটি ই-নিউজলেটার প্রকাশ করা হবে।
রেজওয়ানুল হক জামী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হলেও এ দেশের রয়েছে অসীম সম্ভাবনা। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে আমাদের তরুণ-তরুণীরা। বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগ হচ্ছে ১০-২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণী। এরাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। এদের মধ্যে অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এবং নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ে তুলতে চায়। ই-কমার্স তাদেরকে সেই সুযোগ দিতে পারে। আমি খুবই আনন্দিত, ই-কমার্স সেবাকেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে এবং যারা ই-কমার্স খাতের নতুন ব্যবসায় করতে চান, তারা এ সেবাকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পাবেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় অংশই মফস্বল শহর এবং গ্রামে বাস করেন। এসব জায়গায় অনেক উদ্যমী তরুণ-তরুণী রয়েছেন, যারা ই-কমার্স ব্যবসায় শুরু করতে চান, কিন্তু কী করবে তা জানেন না। ই-ক্যাবই বাংলাদেশের প্রথম ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন, যারা প্রথমবারের মতো এ ধরনের সেবাকেন্দ্র খুলে সেবা দিতে যাচ্ছে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকেউ এ সেবাকেন্দ্রে যোগাযোগ করে ই-কমার্স সম্পর্কে বিনামূল্যে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। ই-কমার্স সেবাকেন্দ্রে যেসব সেবা পাওয়া যাবে, তা হলো : নতুন উদ্যোক্তারা ই-কমার্স ব্যবসায় শুরুর সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন, পেমেন্ট গেটওয়ে ও ডেলিভারি সার্ভিস সম্পর্কে জানতে পারবেন, যেকোনো অভিযোগ বা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারবেন এবং ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের জন্য সব ধরনের টেকনিক্যাল সহযোগিতা পাবেন।’ ই-কমার্স সেবাকেন্দ্রের কারিগরী সহযোগীতায় রয়েছে ইউনিকো সলিউশন।
ই-ক্যাব সেবাকেন্দ্রের যোগাযোগ নম্বর : ০৯৬১৩ ২২২ ৩৩৩
বিসিএসের সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ই-কমার্স সেবাকেন্দ্র খুবই সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। ই-কমার্স খাতের বিকাশের জন্য দরকার সাধারণ মানুষের কাছে একে জনপ্রিয় করে তোলা এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস ই-কমার্স সেবাকেন্দ্র এ ক্ষেত্রে খ্বুই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে এক দশকের বেশি সময় ধরে ই-কমার্স থাকলেও এ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এখনো বেশির ভাগ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্যাশ-অন-ডেলিভারি করে থাকে। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন করতে এখনো সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পণ্য ডেলিভারি একটি বিশাল সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে দরকার সমন্বিত প্রচেষ্টা। ই-ক্যাব ২০১৫ সালকে ‘ই-কমার্স বর্ষর’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এবং বছরব্যাপী দেশীয় ই-কমার্স খাতে বিরাজমান সমস্যাসমূহ সমাধানে সকলকে নিয়ে কাজ করে যাবে। আমি আশা করব, ২০১৬ সালে ই-কমার্স খাত যেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) প্রেসিডেন্ট আখতারুজ্জামান মঞ্জু বলেন, ‘ই-কমার্সের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য ইতোমধ্যেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। সে বিচারে অদূর ভবিষ্যতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্সের ওপর জোর দেবে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দেরিতে ই-কমার্স শুরু হলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে আমাদের তরুণ-তরুণীদের। তারা ই-কমার্স সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। যেসব ই-কমার্স কোম্পানি রয়েছে তাদের বেশিরভাগই তরুণ উদ্যোক্তা। সময় এসেছে এখন দেশের সর্বত্র ই-কমার্সকে ছড়িয়ে দেয়ার। আমাদের দেশের জেলা-উপজেলাগুলোতে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছে, যারা ই-কমার্স খাতে আসতে চায়। ই-ক্যাবের ই-কমার্স সেবাকেন্দ্র সেসব তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় আর্শীবাদ হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালকে ই-কমার্স বছর হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যা দেশের ই-কমার্স খাতের জন্য খুবই ইতিবাচক। এর ফলে দেশের ই-কমার্স খাত যেমন উপকৃত হবে, দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও ই-কমার্স আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে মোবাইল ফোনে কথা বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-কমার্স সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধন করেন মোস্তাফা জব্বার।