রবিবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০১৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » শেষ হলো উদ্ভাবনের উৎসব, জাতীয় হ্যাকাথনে ১০টি সেরা সমাধান
শেষ হলো উদ্ভাবনের উৎসব, জাতীয় হ্যাকাথনে ১০টি সেরা সমাধান
জাতীয় দশ সমস্যার সমাধানে নতুন উদ্ভাবনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো টানা ৩৬ ঘন্টার ম্যারাথন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা তথা জাতীয় হ্যাকাথন। শনিবার ঢাকার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) তে শুরু হওয়া এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় এই হ্যাকাথনে বেরিয়ে এসেছে উদ্ভাবনী সমাধান। ১০টি জাতীয় সমস্যার সমাধান দিয়ে হ্যাকাথনে সেরা দল নির্বাচিত হয়েছে ১০টি দল। তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০ লাখ টাকার ইনোভেশন ফান্ড দিচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। নির্বাচিত ১০টি দলের মধ্যে ট্রাফিক জ্যাম- এই সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম গ্রাভিটি বিডি। নিরাপদ সড়ক- এই সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে মোবাইও এ্যাপ লি. এর টিম মোবিওম্যান। সাইক্লোন সেন্টার ব্যবস্থাপনা সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টিম ইউআইইউ এ্যাম্বাসাডর। দূর্নীতি দমন বিষয়ক সমস্যার সমাধান দিয়েছে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ট্রিলিয়ন পিক্সেল। নিরাপদ পানি পরিবহন বিষয়ক সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে ব্রেন স্টেশন নামক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ক সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টিম ত্রিমাত্রিক। যৌন হয়রানি বিষয়ক সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে রূপম আইটি লিমিটেড এর আরআইটিএল ডাক। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সাইন্স এর টিম বাডিস ড্রিম। সেনিটেশন বিহেবিহারাল চেইঞ্জ বিষয়ক সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে কসমিউটার পোর্টসিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। অসংক্রামক রোগের বৃদ্ধি সমস্যার সমাধান দিয়ে প্রথম হয়েছে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ব্রাক উ হেন্ক।
হ্যাকাথনের সমাপনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী স্থাপতি ইয়াফেস ওসমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, একই বিভাহের যুগ্ম সচিব জনাব শ্যামা প্রসাদ ব্যাপারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এর সভাপতি জনাব ইঞ্জিনিয়ার একেএমএ হামিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিউবির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জনাব ডিএস ফয়সাল হায়দার। আরো উপস্খিত ছিলেন ইএটিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান, বিডি ভেঞ্চার লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসাইন এবং প্রকল্প পরিচালক মিনা মাসুদ উজ জামান। সমাপনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এমসিসি লি. এর নির্বাহী পরিচালক আশ্রাফ আবির।
শনিবার কর্মশালার মাধ্যমে এই হ্যাকাথনের উদ্বোধন করেছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এতে অংশ নিয়েছিল ২৯৮ টি দল। এরমধ্যে শিক্ষার্থীদের দল ছিল ২৪৪টি। ৫৪টি প্রফেশনাল দল। দূনীর্তি, প্রশ্নফাঁস, সড়ক নিরাপত্তা, লঞ্চডুবি, যৌন হয়রানি, স্যানিটেশন, যানজট, মাতৃস্বাস্থ্য, বলতে দ্বিধা এমন স্বাস্থ্যসমস্যা এবং সাইক্লোন ব্যবস্থাপনার দশটি সমস্যায় অ্যাপ্লিকেনশন তৈরির মাধ্যমে সমাধান খোঁজার চেষ্টায় নেমেছিল এক হাজার ৭৪৫ জন তুখোড় প্রোগ্রামার।
একযোগে ৩৬ ঘন্টার কর্মযজ্ঞ শেষে গতকাল রবিবার বিকেলে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে বেছে নেওয়া হয় সেরা ১০টি দলকে। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দলের সদস্যদের একটাই লক্ষ্য ছিল, নির্ধারিত ১০টি জাতীয় সমস্যা সমাধান করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা। অবশেষে সেই প্রতিযোগিতায় বেরিয়ে এলো নানা উদ্ভাবন।
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ‘ট্রিলিয়ন পিক্সেল’। সাকিব হাসান (টিম লীডার), শিহাবুল হোসেন সানি, তাসিন আলম তানিম, মারুফ-উর রহমানের এই দল দুনীতি দমন নিয়ে। সাকিব হাসান তার বিজয়ী এ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে বলেন, দুর্নীতি হতে পরে এমন কোন স্থানে এই এ্যাপ্লিকেশনটা চালু করলে এটা পরিপার্শ্বের অডিও রেকর্ড করতে শুরু করবে এবং একটি নির্দিষ্ট সার্ভারে তথ্য পৌছে যাবে। যেখান থেকে কর্তৃপক্ষ অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
টিম ‘গ্রাভিটি বিডি’ নামের দলটি এসেছে আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এ দলে আছেন আদনান আহমেদ খান (টিম লীডার), মো. আরমান আহমেদ, বিশ্বজিৎ পান্ডে, বাপ্পী দত্ত, রাশিদুল হাসান। এই দলটি এমন একটি এ্যাপ্লিকেশনের নমুনা তৈরী করেছে যেখানে সে তার গন্তব্য এ্যাপ্লিকেশনে ইনপুট দিলে সে ঐ সময়ে ঐ পথে চলাচলকারীরা ঐ ব্যক্তিকে লিফট দিতে পারবে।
হ্যাকাথন বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান আয়োজক এমসিসি লিমিটেডের সিইও আশ্রাফ আবির আবির জানান, হ্যাকাথনে প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোন সমস্যা যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে পুরো টিম ব্যস্ত ছিল। ৩৬ ঘন্টার একটানা শ্রমের প্রেক্ষিতে যে উদ্ভাবন বেরিয়ে আসছে তা জাতীয় জীবনের বহু সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে।
জনগনের মতামত ও বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় এই হ্যাকাথনের জন্য ১০টি জাতীয় সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। সম্মেলনে এক হাজার ৭০০ প্রোগ্রামার, ফ্রিল্যান্সার, শিক্ষার্থী, অ্যাপনির্মাতা ৩৪০টি টিমে বিভক্ত হয়ে অংশ নেন। পাশাপাশি ৪৯টি পেশাদার কোম্পানি অংশ নেয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আয়োজনে হ্যাকাথন বাস্তবায়ন করেছে এমসিসি লিমিটেড। সহযোগিতায় রয়েছে ইএটিএল, বেসিস, সিম্ফোনি, গ্রামীণফোন, রবি, সোলকোয়েস্ট, গুগল ডেভেলপার গ্রুপ, বেটার স্টোরিজ ও বিডি ভেঞ্চার লিঃ।
প্রসঙ্গত: বিশ্ব জুড়ে হ্যাকাথন ম্যারাথন কোডিং ইভেন্ট হিসেবে স্বীকৃত। হ্যাকাথনে ডেভেলপারদের দক্ষতার চূড়ান্ত প্রদর্শনী হয়।