শনিবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সোপা আইন চুপিসাড়ে নেওয়া যাবে না
সোপা আইন চুপিসাড়ে নেওয়া যাবে না
ইন্টারনেটে ধর্মঘট আশানুরূপ ফল দিয়েছে. আমেরিকার কংগ্রেস স্টপ অনলাইন পাইরেসী অ্যাক্ট অথবা ইন্টারনেট চালু থাকা অবস্থায় বিনা অনুমতিতে অন্যের বুদ্ধিজাত সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে আইন, যাকে সোপা (SOPA) বলে নাম দেওয়া হয়েছে, তা গ্রহণ করার সময় অনির্দিষ্ট কালের জন্য পেছিয়ে দিয়েছে. বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন যে, বর্তমানের ভাষ্যে এই দলিল গৃহীত হবে না. আইনের ভাষ্যের বিরুদ্ধে বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারনেট কোম্পানীরা বক্তব্য জানিয়েছে. বিশ্বকোষ “উইকিপিডিয়া”, সমাজিক ব্লগ “রেডডিট”, ছবি ও ফোটোর হোস্টিং “টুইটপিক”, ব্লগ প্ল্যাটফর্ম “ওয়ার্ল্ডপ্রেস” ও আরও বহু রিসোর্স সাময়িক ভাবে নিজেদের কাজ বন্ধ করেছেন প্রতিবাদে সামিল হয়ে. সামাজিক সাইট ফেসবুকের স্রষ্টা এবং প্রধান মার্ক ত্সুকেরবার্গ কংগ্রস সদস্যদের না দেখেই গলা কাটা বন্ধ করে, অন্যভাবে মালিক পক্ষের সুরক্ষা করতে আহ্বান জানিয়েছেন. সেই গুলি এখনই রয়েছে ও তা কাজও করছে সাফল্যের সঙ্গে, এই কথা বলেছেন আঞ্চলিক সামাজিক তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্রের ডিরেক্টর সের্গেই প্লুগোতারেঙ্কো:
“আজ সবচেয়ে বড় কনটেন্ট- প্রোভাইডারেরা, সমস্ত বড় হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম গুলি কপিরাইট হোল্ডারদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন ও বেআইনি কনটেন্ট ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন. অন্য বিষয় হল যে, কপিরাইট হোল্ডারেরা সব সময়ে এটা ব্যবহার করতে জানেন না আর বলে থাকেন যে, কোম্পানী গুলি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না আর চুরি করছে. আমার দৃষ্টিকোণ থেকে সমঝোতায় আসা উচিত্, সে ভাবে ইন্টারনেটের কাজের রীতি বদলানোর দরকার নেই, যা সোপা আইনে প্রস্তাব করা হয়েছে”.
সোপা আইন খুবই সক্রিয়ভাবে লবি করেছে আমেরিকার বৃহত্তম সিনেমা শিল্পের কোম্পানী ও সাউন্ড রেকর্ডিং কোম্পানীরা. তাঁরা প্রস্তাব করছেন, যে কোন ধরনের রিসোর্সের দিকে পৌঁছনোর পথ আদালতের রায় বের হওয়ার আগে বন্ধ করার, যা লাইসেন্স বিহীণ প্রোডাক্ট প্রচার করছে. এই প্রসঙ্গে দেখা হচ্ছে না যে, রিসোর্স বা সাইটের মালিক এই বেআইনি কনটেন্ট প্রচারের সঙ্গে জড়িত কি না. এটা খুবই জটিল করে তুলবে প্রোভাইডারের জীবন, সার্চ এঞ্জিন ও গ্রাহকদের জীবনও, যাঁদের ব্যবসা ইন্টারনেটের সঙ্গে জড়িত. সোপা আইনের ভাষ্য তাদের সকলকেই অপরাধের অংশীদার করে তুলবে, এই কথা উল্লেখ করে আলোচনা সংস্কৃতি তহবিলের প্রতিযোগিতা গোয়েন্দাগিরি দপ্তরের প্রধান আন্দ্রেই মাসলোভিচ বলেছেন:
“এমনকি সাধু গ্রাহকও এর পরে আইন ভঙ্গকারীদের তালিকায় পড়তে পারে, কোন রকমের খারাপ কাজ না করেই. কনটেন্টের কপিরাইট হোল্ডার নির্ণয় করা এই আইনে এমন ভাবে লেখা হয়েছে, যা যে কোন পক্ষের হয়েই কাজে লাগানো যেতে পারে. আন্তর্জাতিক বাজারে এটা হতে দেওয়া যায় না, আর তা ইন্টারনেটে তো একেবারেই নয়”.
এখানে ইন্টারনেটে যারা সম্পত্তি চুরি করছে, তাদের সম্পূর্ণ রকমের স্বাধীনতা দেওয়ার কথা উঠছে না. অনেক দেশই বহুদিন ধরে কনটেন্ট যারা বদ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচার করছে, তাদের মোকাবিলা করছে, কিন্তু সোপা আইনের লেখকেরা এত সোত্সাহে কপিরাইট হোল্ডারদের জন্য আইন তৈরী করেছে যে, তাদের বিচার অনুযায়ী আইন লঙ্ঘণকারীদের মধ্যে এমনকি ঘরে তোলা ভিডিও ফিল্মের স্রষ্টারাও পড়বেন, যদি তারা অন্য কোনও উত্স থেকে আবহ সঙ্গীত ব্যবহার করে বসেন. এই ক্ষেত্রে পাইরেসী দোষে দোষী যেমন হবেন এই ক্লিপের স্রষ্টা, তেমনই সেই সাইট, যেখানে এটা রাখা হবে. সারা বিশ্বে তখন তখনই প্রচুর মামলা হবে ও আদালতের কাজই মাথায় উঠবে, এই বলে সাবধান করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা. এমনকি এই আইন যদি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নেওয়া হয় ও তা শুধু আমেরিকায় তৈরী হওয়া জিনিস নিয়েও হয়, তবুও সকলেরই সমস্যা হবে, এই বলে সাবধান করে দিয়ে ইন্টারনেট বিশ্লেষক আস্কার তুগানবায়েভ উল্লখে করেছেন:
“ইন্টারনেটে কোন আইন ভঙ্গের সময়ে বোঝা যায় না কোন দেশের আইন প্রয়োগ করা দরকার সেই দেশের যেখানে গ্রাহক রয়েছেন, নাকি সেই দেশের যেখানে কপিরাইট হোল্ডার বসে আছেন? প্রত্যেক দেশই এটা নিজেদের মত করে ব্যাখ্যা করে থাকে”.
এই আইনের বিরুদ্ধে বিপুল গণ আন্দোলন বৃথা হয় নি. মার্কিন কংগ্রেস এই আইনের পক্ষে ভোট গ্রহণ পিছিয়ে দিয়েছে. কিন্তু কংগ্রেস সদস্যরা পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন য়ে, তাঁরা সোপা আইন বরবাদ হতে দেবেন না. বড় ইন্টারনেট কোম্পানী গুলির ধর্মঘটের উত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রক মেগাআপলোড. কম সাইট বন্ধ করে দিয়েছে - যা বিশ্বের পাঁচটির মধ্যে একটি বড় ফাইল এক্সচেঞ্জ করার সাইট. আমেরিকার সরকারের দাবীতে নিউজিল্যান্ড সরকার এই কোম্পানীর চারজন কর্মচারী, যারা এই সাইটের মালিক, তাদের গ্রেপ্তার করেছে. তাদের নামে কপিরাইট আইন লঙ্ঘণের দোষে অভিযোগ আনা হয়েছে ও ৫০ কোটি ডলার ক্ষতি করার অভিযোগ করা হয়েছে.