বুধবার ● ২২ অক্টোবর ২০১৪
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিয়ে ফোরজি আসছে বাংলাদেশে !!
দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিয়ে ফোরজি আসছে বাংলাদেশে !!
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়ছে না গতি। টুজি থেকে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর থ্রিজিতে উন্নিত হয়েছে বাংলাদেশ। এখন ফোরজি নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে গাইডলাইন চূড়ান্ত করার পরই ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নেবে বিটিআরসি। কিন্তু ঢাকায় সদ্য সমাপ্ত কমনওয়েলথ টেলিকমিউনিকেশন্স অর্গানাইজেনশন (সিটিও) ফোরামের সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ডেটা মার্কেট লং টার্ম ইভল্যুয়েশনের (এলটিই) মতো দ্রুতগতির ইন্টারনেট চালুর জন্য প্রস্তুত হয়নি। এ প্রযুক্তি চালুর উপযোগী হতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত বিটিআরসির ১৬৮তম কমিশন সভায় দেশে ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম অবমুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের (আইটিইউ) স্বীকৃতি অনুযায়ী ৬৯৮-৮০৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গটি ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নামে পরিচিত। বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে এরই মধ্যে ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং এলটিই প্রযুক্তি সেবা চালু হয়েছে। বিশেষ করে উন্নত অনলাইন ব্যাংকিং এবং ‘মেশিন টু মেশিন ইন্টারনেট সংযোগ’ সেবার জন্য এলটিই প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।
বাংলাদেশে বর্তমানে দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামে থ্রিজি সেবা দিচ্ছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর এই স্পেকট্রামের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়, যার মূল্য ছিল প্রায় চার হাজার ৮১ কোটি টাকা। আর টেলিটকের ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের মূল্যসহ এর পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ অবিক্রীত ছিল।
বিটিআরসির কমিশন সভায় ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম অবমুক্তকরণে গাইডলাইন তৈরির জন্য কমিশনার (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) মনিরুল আলমকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে গাইডলাইন চূড়ান্ত করার পরই ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিটিও ফোরামের সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের ডেটা মার্কেট লং টার্ম ইভল্যুয়েশনের জন্য প্রস্তুত হয়নি।
তবে একই সেমিনারে এলটিই বাজার তৈরি না হওয়ার এমন বক্তব্যের পর সিটিও ফোরামের আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস ফোরজি বা এলটিই প্রযুক্তি কবে নাগাদ আসছে জানতে চাইলে বলেন, ২০১১ সালে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ থ্রিজির জন্য প্রস্তুত হয়নি। আবার থ্রিজি যখন এলো তখন বলা হলো- পাঁচ বছর আগেই এ প্রযুক্তি চালু করা উচিত ছিল। চেয়ারম্যান বলেন, অপারেটররা এ প্রযুক্তির ব্যবসা আছে বলে মনে করলে তারা অবশ্যই ফোরজি নেবে। প্রযুক্তি মানুষের হাতে না দিয়ে সরকারের হাতে রাখার কোনো অর্থ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার অব্যবহৃত স্পেকট্রাম অবশ্যই বাজারে আসা উচিৎ। সুনীল কান্তি বলেন, থ্রিজি দেওয়ার পর ছয় মাস যেতে না যেতেই তারা (অপারেটররা) বলেছে- অবিক্রিত তরঙ্গ থেকে আরো পাঁচ মেগাহার্টজ করে নেয়া যায় কি না। তার মতে, ব্যবসা সফল হওয়ায় অপারেটররা অল্প সময় না যেতেই আরও বেশি তরঙ্গ পেতে আগ্রহী হয়েছে।
সেমিনারে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের বাজারে এলটিই সেবার জন্য আরও সময় দরকার। ব্যবসায়িক বিষয়টি তুলে ধরে ওই কর্মকর্তা বলেন, এখনও বাংলাদেশে এক মেগাবাইট স্পিডের ব্যান্ডউইথের দাম এক হাজার টাকা। আবার অপারেটরদের গ্রাহক প্রতি মাসিক রাজস্ব আয় দেড়শ টাকার মধ্যে। একইভাবে অপারেটরদের আয়ের মাত্র ৬ শতাংশ আসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এই পরিস্থিতিতে অপারেটর, সরকার, সকল স্টেক হোল্ডার এবং রেগুলেটরকে আরও আলোচনা করতে হবে বলে ওয়াহিদুজ্জামান উল্লেখ করেন।
এদিকে দ্বিতীয় দিনের সেমিনারে প্রযুক্তি সরবরাহকারী কোম্পানি হুয়াইউ এর মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক বিভাগের কনসালটেন্ট হারিশ বাট বলেন, দুই বছর আগেও এলটিই ডিভাইসের মূল্য ছিল ৫০০ ডলার। আর এখন সেটি আড়ইশ ডলারে নেমে এসেছে। খুব দ্রুত তা আরও কমে আসবে। তখন বাংলাদেশের মতো বাজারে এলটিই প্রসার সহজ হবে।(এম. মিজানুর রহমান সোহেল)