শনিবার ● ৭ জানুয়ারী ২০১২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে অর্ধ আয়ুকাল এড়ানো সম্ভব হয়েছে
পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে অর্ধ আয়ুকাল এড়ানো সম্ভব হয়েছে
আগামী বিশ বছরে বিশ্বে পারমানবিক শক্তি উত্পাদনের ক্ষমতা দ্বিগুণ বেড়ে যাবে, এই খবর “রসঅ্যাটম” সংস্থার ডিরেক্টর সের্গেই কিরিয়েঙ্কো জোর গলায় বলেছেন. তবে এটা সত্য যে, আগে এই পূর্বাভাস ছিল আরও আশাব্যঞ্জক. জাপানের ফুকুসিমা পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে বিপর্যয়ের পরে কিছু ইউরোপীয় রিয়্যাক্টর সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, বহু দেশে নেতারা পারমানবিক শক্তি ব্যবহার বিষয়ে আপত্তি প্রকাশ করেছিলেন. রাশিয়াতে ফুকুসিমা ঘটনার দুই মাস পরে সমস্ত পারমানবিক কেন্দ্রে চাপ- পরিস্থিতিতে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল, এই খবর রাশিয়ার জাতীয় গবেষণা কেন্দ্র কুরচাতভ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টরের পরামর্শদাতা নিকোলাই কুখারকিন দিয়ে বলেছেন:
“সমস্ত কেন্দ্র ও রিয়্যাক্টরে নতুন পরিস্থিতির বিচার করে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল. আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়ে সমীক্ষা করেছি, সমস্ত রকমের সম্ভাব্য খুঁটিনাটি বিচার করে দেখা হয়েছিল. আমাদের পারমানবিক কেন্দ্র গুলিকে আরও বেশী করে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হয়েছে ফুকুসিমা দূর্ঘটনার পরে. তবে দেশে পারমানবিক শক্তি ব্যবহার অস্বীকার করার কোন কথাই হয় নি”.
বাস্তবে, পারমানবিক শক্তি সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা বাদ দিয়েছে শুধু জার্মানী. ইউরোপীয় সঙ্ঘের অন্যান্য দেশ সম্বন্ধে যা বলা যেতে পারে, তা হল সেই সব দেশের নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন যে, বর্তমানে চালু কেন্দ্র গুলির সময়সীমা পার হয়ে গেলে, তারা আর নতুন কেন্দ্র করবেন না. জাপানের বিপর্যয় প্রত্যেককেই ভাবতে বাধ্য করেছে শান্তিপূর্ণ পরমাণু ব্যবহারের প্রসঙ্গে বিশেষ ভাবে, এই বিষয়ে বিশ্বাস নিয়ে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেই রুবিনোভ বলেছেন:
“সারা বিশ্ব জুড়েই পারমানবিক শক্তি বিকাশের গতি শ্লথ হয়েছে, তা দেখা যাচ্ছে. এখন বহু প্রকল্পকেই বাদ দেওয়া হবে. এটা হবে, যেমন আমেরিকাতে, যেখানে যথেষ্ট হবে কয়লা চালিত শক্তি উত্পাদন কেন্দ্র দিয়ে এই পারমানবিক কেন্দ্রের বদলী করলে”.
পারমানবিক শক্তি উত্পাদনের বিকল্প বিচার করে দেখলে খুব একটা বেশী নেই - সেই গ্যাস ও কয়লা. কিন্তু এর একটাও উত্সকে বিশেষ করে গ্রহণের সময়ে পরিবেশের উপরে প্রভাব ভুললে চলবে না, এই বিষয়ে বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেই রুবিনোভ মনে করেছেন. কয়লা চালিত কেন্দ্র গ্যাস চালিত কেন্দ্রের চেয়ে বেশী পরিবেশ দূষণ করে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস ছড়িয়ে, অথচ শক্তি উত্পাদন করে দ্বিগুণ কম, তাই তিনি বলেছেন:
“আমি মনে করি যে, এটা একমাত্র উপায় যা জল বিদ্যুত প্রকল্প বিচারে না আনলে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, গ্যাসের ব্যবহার বাড়বে. কয়লা জ্বালালে পরিবেশে দূষণ প্রচুর, যদিও বর্তমানে উপায় বের হয়েছে দূষণ কমানোর. কিন্তু তার পরেই আসবে অর্থনৈতিক কারণ - এই ধরনের প্রযুক্তি সমেত কেন্দ্র গ্যাস চালিত কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশী দামী”.
ইউরোপে বিগত সময়ে শেল গ্যাস নিয়ে খুব মাতামাতি হয়েছে, মনে করা হয়েছে যে, তা অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক হবে. কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, এই গ্যাস উত্পাদনে পরিবেশ দূষণ হয়. শেল গ্যাস ব্যবহার করে শক্তি উত্পাদন করতে গেলে ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নির্গত হয়. পুনর্ব্যবহারের যোগ্য জ্বালানী উত্স এখনও বেশী উন্নত হয় নি.
বহু বিশেষজ্ঞই মনে করেছেন যে, বর্তমানের পরিস্থিতিতে বিশ্বের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটানোর একমাত্র পথ - পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র গুলির নিরাপত্তার ব্যবস্থা বৃদ্ধি ও পারমানবিক শক্তি তথাকথিত দ্রুত নিউট্রন রিয়্যাক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে উত্পাদন করার প্রয়োজন. কাজ করার সময়ে এই রিয়্যাক্টর অনেক বেশী নিউট্রন উত্পন্ন করে, ফলে প্রায় সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা সম্ভব হয় ও শক্তি উত্পাদন প্রায় একশ গুণ বাড়ানো সম্ভব হয়. রাশিয়াতে দ্রুত নিউট্রন ব্যবহারকারী রিয়্যাক্টর বসানো হয়েছে বেলোইয়ারস্ক পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে.