বৃহস্পতিবার ● ২৮ আগস্ট ২০১৪
প্রথম পাতা » উপকূলের প্রযুক্তি » অসংখ্য মোবাইল সীম সমুদ্র-নদীতে, সমস্যায় রয়েছে জেলেরা, মোবাইল অপারেটরগুলোকে ভাবতে হবে
অসংখ্য মোবাইল সীম সমুদ্র-নদীতে, সমস্যায় রয়েছে জেলেরা, মোবাইল অপারেটরগুলোকে ভাবতে হবে
।।কন্ট্রিবিউটিং এডিটর -রফিকুল ইসলাম মন্টু ।।
মাছ ধরতে গিয়ে উপকূলের জেলেদের অসংখ্য মোবাইল সীম সমুদ্র কিংবা নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে । জলদস্যুদের হামলা, ঝড়ের তান্ডব কিংবা স্বাভাবিক সময়ে মাছ ধরতে গিয়ে সীমসহ মোবাইল হারাচ্ছে তারা। কিন্তু এ সীম তুলতে তাদেরকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেকে ব্যবহৃত নাম্বারের সীম তুলতে না পেরে নতুন সীম কিনতে বাধ্য হচ্ছে। এতে যেমনি অব্যবহৃত সিমের পরিমান বাড়ছে তেমনি বাংলাদেশের প্রকৃত মোবাইল ব্যবহারকারির সংখ্যা কত তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সরেজমিনে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের নানা সমস্যা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তারা এসব তথ্য জানান।
সমুদ্র ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে জেলেরা বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল ব্যবহার করে। এ সময় নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হারায় মোবাইল সীম। কিন্তু বিচ্ছিন্ন এইসব এলাকায় হারিয়ে যাওয়া সীম উত্তোলনের সুযোগ না থাকায় তারা প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়েন।
চরমোন্তাজের সাগর বাজারের জেলে হাবিবুর রহমান বলেন, এক মাসে তিনবার গ্রামীন সীম হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই এলাকায় হারানো সীম উত্তোলনের কোন সুযোগ না থাকায় নতুন সীম কিনে নিয়েছি। এখান থেকে পুরানো সীম উত্তোলন করতে রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরে যেতে হয়। সেখানে যেতে যেমন খরচ আছে, তেমনি সময়ও পাওয়া যায় না।
চর বেষ্টিনের আরেক জেলে জহিরুল ইসলাম বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ডাকাতেরা মোবাইল নিয়ে যায়। কখনো ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে মোবাইল হারাই। আবার মাছ ধরতে গিয়ে পকেট থেকেও মোবাইল পড়ে যায়। মোবাইল সীম হারানোটা জেলেদের কাছে একটা বড় সমস্যা। কিন্তু এই এলাকায় পুরানো সীম তুলতে গিয়ে আমরা অনেক সমস্যায় পড়ছি।
জেলে ও স্থানীয় মোবাইল সার্ভিস সেন্টারগুলোর পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য অধিকাংশ জেলে গ্রামীণ সীম ব্যবহার করে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে রবি। বর্ষাকালে ছোটখাট নানা দুর্যোগের কারণে সীম হারানোর ঘটনা বেশি ঘটে। তখন জেলেদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। স্থানীয়ভাবে হারিয়ে যাওয়া সীম উত্তোলনে সমস্যা, আবার কাজ রেখে একদিন কিংবা দু’দিনের জন্য সীম উত্তোলনের জন্য উপজেলা সদরে যাওয়াও সম্ভব হয় না। অথচ মাছ ধরার জন্য নৌকা-ট্রলারে অবস্থানকালীন সময়ে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটও জরুরি।
পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীর একটি দ্বীপ ইউনিয়ন চরমোন্তাজ। ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র স্লুইজ বাজারে মৌসুমে হাজার হাজার জেলের ভিড় জমে। মাছের মৌসুম ছাড়াও এখানে অবস্থান করে অনেক জেলে। এই বাজারে আসা জেলেরা জানান, এখানে রবির একটি সার্ভিস সেন্টার আছে; কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেই গ্রামীণের কোন সার্ভিস সেন্টার এখানে নেই।
মোবাইল অপারেটর রবির সার্ভিস সেন্টারে কিছুক্ষণ অবস্থান করে মোবাইল সীম হারানো জেলেদের সমস্যা আরও ভালো করে বোঝা গেলো। ওই সেন্টারে আসা বেশ কয়েকজন জেলে জানান, সাগর-নদী এলাকায় নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায় বলে আমরা গ্রামীণ সীম ব্যবহার করি। কিন্তু সীম হারিয়ে গেলে তা আর তুলতে পারি না। জেলেদের সুবিধার্ধে সাগরপাড়ের এই এলাকায় আমরা গ্রামীনের সেবা চাই। কারণ সীমের জন্য উপজেলা সদও পর্যন্ত যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
চরমোন্তাজের স্লুইজ বাজারে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের পাশাপাশি রবি সার্ভিস সেন্টারের পরিচালক মো. আল-মামুন বলেন, বর্ষাকালে ইলিশ ধরার মৌসুমে এই বাজার বিভিন্ন এলাকার জেলেদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে। তখন বাড়িতে থাকা স্বজনদের খোঁজ খবর নিযে বহু জেলে এখানে হারানো সীম উত্তোলনের জন্য আসে।
শুধু চরমোন্তাজ নয়, রাঙ্গাবালীর দ্বীপ ইউনিয়ন চালিতাবুনিয়া, ভোলার দ্বীপ ইউনিয়ন কুকরী মুকরীতেও জেলেদের কাছ থেকে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেবা নিশ্চিত করতে দ্বীপ এলাকায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে বিশেষ নজর রাখার দাবি জানান তারা।