রবিবার ● ২৬ জানুয়ারী ২০১৪
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকিং নেটওয়ার্ক-এ হামলা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকিং নেটওয়ার্ক-এ হামলা
হ্যাকিং এখন সমগ্র বিশ্বের একটি দৈনন্দিন সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অনেক বিত্তশালী ব্যক্তির পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে। ফলে তারা ব্যাপকভাবে আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকিং নেটওয়ার্কটি ভারত, চীন ও রোমানিয়ায় অবস্থিত। এ নেটওয়ার্ক সাইবার হামলার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ সংগঠিত নেটওয়ার্কের সদস্যরা ভারত, চীন ও রোমানিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হামলা চালিয়ে আসছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) সদস্যরা ভারতের চারটি স্থানে হামলা চালান। এর মধ্যে রয়েছে মুম্বাই, পুনে ও গাজিয়াবাদ। এ শহরগুলোয় হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন সাইবার অপরাধীসহ তাদের নেতা অমিত বিক্রম তিওয়ারিকে গ্রেফতার করা হয়। তিওয়ারি ভারতের একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার সন্তান বলে এক সূত্রে জানানো হয়।
এদিকে ভারতের ক্রিকেট লিগ ‘ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ’ (আইপিএল)-এর বেশকিছু কর্মকর্তার সঙ্গেও তিওয়ারির যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। আইপিএলের এ কর্মকর্তারা অন্য কর্মকর্তার বিভিন্ন কৌশল ও গোপন তথ্য জানতে তিওয়ারির সাহায্য নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে আইপিএলের কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা তিওয়ারির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের নাম জানাতে না পারলেও এ ধরনের যে ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সংঘবদ্ধ এ নেটওয়ার্ক অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর তথ্য জানতে এ নেটওয়ার্ককে দিয়ে কাজ করায়। বিবাহ-সংক্রান্ত সমস্যা থেকে শুরু করে করপোরেট কারণেও হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটছে বলে সূত্র থেকে জানানো হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, বিক্রম তিওয়ারিই ভারতের প্রধান হ্যাকার। তার নির্দেশে ও বুদ্ধিতেই ভারতে সব ধরনের সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়। তবে উল্লেখ্য, তাকে যারা হ্যাকিংয়ের বিনিময়ে অর্থ প্রদান করে, তাদের অধিকাংশই ভারতের নাগরিক নয়। বিদেশীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে দেশী অনেক প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার প্রমাণও সংগঠনটির বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে।
তবে সিবিআই ধারণা করছে, তিওয়ারি ছাড়াও এ নেটওয়ার্কে আরো অনেক রুই-কাতলা আছেন, যারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। তারা যে দেশে নেই, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে সিবিআই। তারা ভারতের বাইরে থেকে তিওয়ারির মাধ্যমে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানায়, তারা এফবিআই থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েই এ হামলা পরিচালনা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নেটওয়ার্কটি বেশকিছু সময় ধরেই সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত। জাতীয় নিরাপত্তা, করপোরেট হ্যাকিং, অর্থ আত্মসাত্, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সাইট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়া থেকে নেটওয়ার্কটি প্রায় সব ধরনের সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
সিবিআই কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০০টির মতো ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের পাশাপাশি তিওয়ারিরও হাত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সিবিআই। এ ৯০০ ই-মেইলের মধ্যে ১৭১টি অ্যাকাউন্টই ভারতীয়দের। উল্লেখ্য, এ ই-মেইল অ্যাকাউন্টগুলোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অনেক সময় ধরে হ্যাকারদের হাতে ছিল। হ্যাকাররা এ অ্যাকাউন্টগুলোয় বিভিন্ন ওয়েবসাইট অপারেটরদের ২৫০ থেকে ৫০০ ডলারের বিনিময়ে প্রবেশাধিকার দিত।
ভারতের পাশাপাশি চীন ও রোমানিয়ায়ও হ্যাকারদের আস্তানায় একই ধরনের হামলা চালিয়েছেন দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সিবিআইয়ের পরিচালক রানজিত সিনহা এক বিবৃতিতে জানান, এটি একটি আন্তর্জাতিক হামলার অংশ। রোমানিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ডিপার্টমেন্ট অব কমবেটিং অরগানাইজড ক্রাইম (ডিসিসিও), সিবিআই ও চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ও এ হামলায় সহযোগিতা করেছে।
ভারত, চীন, রোমানিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার অপরাধের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিওয়ারির মতো অনেক শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এখন হ্যাকিংকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে; যা সভ্য সমাজের জন্য অনেকটাই হুমকিস্বরূপ। উল্লেখ্য, তিওয়ারি পুরে থেকে প্রকৌশল ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ২০০৩ সালে তিনি একটি ক্রেডিট কার্ড প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিংয়ের অপরাধে গ্রেফতার হন।
কয়েক মাস ধরেই এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা নয়াদিল্লিতে সিবিআইয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করছেন। এ সময় এ হ্যাকারদের আস্তানা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বেশ কয়েকবার গোয়েন্দা কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়েছে। পরে সম্পূর্ণ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই সম্প্রতি এ হামলা চালানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্রে জানানো হয়।
তবে এ খাতের রুই-কাতলারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের ধরতে আরো বড় অভিযান চালানো হবে বলে জানায় সিবিআই। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান হামলার কারণে হ্যাকারদের সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক তথ্য উঠে আসবে।