রবিবার ● ৭ জুলাই ২০১৩
প্রথম পাতা » নিউজ আপডেট » গাজীপুর সিটির প্রথম মেয়র অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
গাজীপুর সিটির প্রথম মেয়র অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
শনিবার অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
অধ্যাপক মান্নানের টেলিভিশন প্রতীক পেয়েছে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা’র দোয়াত-কলম মার্কায় পড়েছে ২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট। ফলে এক লক্ষ ছয় হাজার ৫৭৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
শনিবার বিকেল চারটায় গাজীপুর সিটির এই প্রথম নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ন’ঘণ্টার মাথায় চূড়ান্ত ফল পাওয়া সম্ভব হয়।
এর আগে গত ১৫ জুন রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার বিরোধীদের নিরঙ্কুশ জয়ের পর গাজীপুরেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর জয় অনেকটা নিশ্চিত ছিলো বলেই ধারণা করা হচ্ছিলো।
তবে নানামুখী নাটক এ নির্বাচনকে জমিয়ে দিয়েছিলো বেশ। শুধু তাই নয়, জয় নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেনকে জোর করে বসিয়ে দিয়ে বড় নাটকটা তৈরি করেছিলো ক্ষমতাসীনরাই।
উল্লেখ্য, ১৬ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চুড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। টঙ্গী ও গাজীপুর পৌরসভা, গাজীপুর সদর উপজেলার বাসন, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, কাউলতিয়া ও গাছা ইউনিয়নকে নিয়ে ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি করর্পোরেশন। যা দেশের ১১তম সিটি কর্পোরেশন। নবগঠিত এ সিটি কর্পোরেশনকে ৫৭টি ওয়ার্ডে বিভক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ১৯টি। যার মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৬৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৮১ ও মহিলা ভোটার ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৩ জন।
সোয়া ১০ লাখের বেশি ভোটার ভোট দেবেন এ নির্বাচনে। নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে থাকছে বাড়তি নিরাপত্তা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ৭ জন হলেও লড়াইটা মূলত দুই জনের মধ্যে। একজন মহাজোট সমর্থিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান এবং অপরজন ১৮ দল সমর্থিত বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নান।
সাম্প্রতিককালের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত ও ঘটনাবহুল নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে গাজীপুরে। নাগরিক কমিটির ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে নানা টানাপোড়েনের পর দলের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। সমর্থন দেন আজমত উল্লা খানকে।
নির্দলীয় এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক তারকারা। তবে নির্বাচন কেন্দ্রীক প্রচারণার অন্যান্য ইস্যুদেরকে ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরামহীন টানাহেঁচড়া।
দুই প্রার্থীই দাবি করেন জাপার কর্মী সমর্থকরা তাদের পক্ষে আছেন। ঢাকায় এসে এরশাসের সঙ্গে দেখা করে আওয়ামী লীগ - বিএনপির দুই প্রার্থীই দাবি করেন তারা এরশাদের আশীর্বাদ পেয়েছেন। দুই প্রার্থীই শুধু নয় সমর্থনের জন্য দেখা করেছেন দুই দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারাও।
গত বুধবার পর্যন্ত জাপার কর্মীদের বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় থাকতে দেখা গেছে। এরকম এক পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেন মহাজোটের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে। নির্বাচনী প্রচারণায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। দুই প্রার্থীই দাবি করেন হেফাজতের সমর্থন আছে তাদের পক্ষে।
সিটি করপোরেশন হওয়ার পর গাজীপুরের এটি প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে তরুণ ও শ্রমিক ভোটারকে বিশাল ফ্যাক্টর বলে মনে করা হচ্ছে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী সাত জন। কাউন্সিলরের ৫৭টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৯ জন আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলের ১৯টি পদে লড়ছেন ১২৮ জন। ভোটারের সংখ্যা ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৬৪ জন। নির্বাচনে মোট ৩৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৩৫টিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত ১৫ জুন চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থীদের পরাজয়ের পর ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তা নিয়ে জল্পনা আর হিসেব নিকেশের আবহের মধ্যেই এসে যায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন।
ফলে জনপ্রিয়তার প্রশ্নে এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বিশাল এক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের ইতিহাসেও গাজীপুর আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাটি হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে চার সিটির সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মরিয়া বিরোধীদল বিএনপিও।
গাজীপুরে জয়ী হয়ে তারা প্রমাণ করতে চায় সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। শেষ পর্যন্ত দুদলই আত্মবিশ্বাসী নিজ নিজ দলের জয়ের ব্যাপারে। তবে কে হবেন গাজীপুরের প্রথম নগরপিতা সেটি নির্ধারণ করবেন সাধারণ ভোটাররাই।