বৃহস্পতিবার ● ৪ জুলাই ২০১৩
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » চট্রগ্রামে তিনদিনব্যাপি ঈদ ই-বাণিজ্য মেলা শুরু
চট্রগ্রামে তিনদিনব্যাপি ঈদ ই-বাণিজ্য মেলা শুরু
ঢাকা ও সিলেটে ই-বাণিজ্য মেলা সফলভাবে সম্পন্ন করার পর আজ (৪ জুলাই বৃহষ্পতিবার) থেকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্রগ্রামে শুরু হয়েছে ঈদ ই-বাণিজ্য মেলা ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা। ‘ঘরে বসে কেনাকাটার উৎসব’ শ্লোগান নিয়ে আয়োজিত এ মেলা চট্রগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও চট্রগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে সহায়ক ‘চট্রগ্রাম ঈদ ই-বাণিজ্য মেলা ২০১৩ ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা’ এর আয়োজনে সহযোগিতা করছে মাসিক ‘কমপিউটার জগৎ’। আজ সকাল ১১ টায় মেলার শুভ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের মাননীয় সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান।
চট্রগ্রাম জেলা প্রশাসক মো: আবদুল মান্নান এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, চট্রগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন ড. ইবরাহীম খান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রফেসর মোহাম্মদ ইফতেখার মনির এবং মেলার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ এহ্তেশাম উদ্দিন মাসুম।
প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের মাননীয় সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, বহি:বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অনেক আগেই ই-বাণিজ্যের সূচনা হলেও তা বেশি দুর এগুতে পারেনি। এর মূল কারণ আমাদের মাঝে এই বিষয়ে সচেতনার অভাব। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় ও মাসিক কমপিউটার জগৎ স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রথমে ঢাকায় ও পরে সিলেটে ই-বাণিজ্য মেলা করে। বিভাগীয় শহরগুলোতে ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজনের ধারাবাহিকতায় চট্রগ্রামে এ মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্র্রগ্রামে ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে এই সেক্টরটি অনেকাংশে এগিয়ে যাবে। এখান থেকে দর্শনার্থীরা ই-বাণিজ্য কি, কিভাবে ঘরে বসেই নিজের মোবাইল বা কমপিউটারের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করা যায় সেটি জানতে পারবেন। এছাড়া ঘরে বসেই ব্যাংকগুলোর লেনদেন সম্পন্ন করার বিষয়টি জানানোর জন্য এবারের মেলায় অনেকগুলো ব্যাংক অংশগ্রহণ করেছে। তিনি আরো বলেন, সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। লার্নি অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প এর মধ্যে অন্যতম। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী দুই বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ই-বাণিজ্যসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ করতে মোবাইল অ্যাপস স্টোর তৈরির কার্যক্রম চলছে। চট্রগ্রামের পর দেশের বাইরে বাংলাদেশের ই-বাণিজ্যকে প্রসারিত করতে আগামী সেপ্টেম্বরে লন্ডনে ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এই মেলায় সারাদেশ থেকে ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের আহবান জানান আইসিটি সচিব।
চট্র্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, চট্রগ্রাম বাংলাদেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই বাণিজ্য মেলা এখানকার মানুষদের অন-লাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আগ্রহী করবে। এমনকি প্রবাসীরা তার প্রিয়জনদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপহার কিনে দিতে পারবেন।
চট্রগ্রাম জেলা প্রশাসক মো: আবদুল মান্নান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় মানুষ এখন ঘরে বসেই সব কিছু পেতে চায়। আর এই কাজটিকে সহজ করেছে ই-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশে ই-বাণিজ্যকে সম্প্রসারণ
করতে ই-বাণিজ্য মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছে। দেশে ই-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারলে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা যানজট থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবে। আশাকরছি চট্রগ্রামে এ মেলা প্রচুর সাড়া ফেলবে। তিনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ই-বাণিজ্য ও ই-সেবা সম্পর্কে ভালোভাবে জানার পরামর্শ দেন।
মেলার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ এহ্তেশাম উদ্দিন মাসুম বলেন, দেশে ই-কমার্স সম্পর্কে জনসচতেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ও এপ্রিলে সিলেটে ই-বাণিজ্য মেলা সফল ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর চট্রগ্রামে ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে এই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। ফলে দর্শনার্থীরা তাদের ঈদের কেনাকাটা মেলা থেকেই অথবা পরে কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে পারবেন সেটি জানার সুযোগ থাকছে। দেশে পরবর্তী ই-বাণিজ্য মেলা হবে খুলনাতে। এরপর রাজশাহী, রংপুর ও বরিশালে অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগীয় পর্যায়ের পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ মেলা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
তিনদিনব্যাপি এই মেলায় ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরছে। মেলায় মোট ৫২টি স্টলে ৫১টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। মেলা উপলক্ষে পণ্য ও সেবা ক্রেতাদের জন্য বিশেষ সুযোগ যেমন থাকছে, তেমনি এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন ধরণের আয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পন্য ক্রয়ে ছাড় ও উপহারের ঘোষনা দিয়েছে।
আয়োজকরা জানান, ঈদ ই-বাণিজ্য মেলার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে এস আলম গ্রুপ। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে রেডিও টুডে, সময় টেলিভিশন, সিসিএল ও দৈনিক আজাদী। এছাড়া নেটওয়ার্কিং পার্টনার হিসেবে চট্রগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নলেজ পার্টনার হিসেবে সার্দান ইউনিভার্সিটি, কমিউনিকেশন পার্টনার আপনজন ডটকম, ব্লগ পার্টনার হিসেবে সামহোয়্যার ইন ব্লগ এবং ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে রয়েছে এফএনএফ।
আয়োজকেরা জানান, এবারের মেলাকে সহজে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকের মাধ্যমে মেলার বিভিন্ন আপডেট প্রকাশ করা হচ্ছে। আপডেট পেতে www.facebook.com/ECommerceFair ঠিকানার পেজ লাইক করতে হবে। এ ছাড়া মেলার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.e-commercefair.com থেকেও জানা যাবে প্রয়োজনীয় তথ্য। তিন দিনব্যাপী এ মেলার অনুষ্ঠানাদি www.comjagat.com ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। হ্রাসকৃত মূল্যে বিভিন্ন পণ্য কেনা যাবে।