বৃহস্পতিবার ● ২৭ জুন ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি জার্নাল » থ্রিজির ইতিহাস এবং বাংলাদেশে
থ্রিজির ইতিহাস এবং বাংলাদেশে
থার্ড জেনারেশন বা থ্রিজি প্রযুক্তির সূচনা বাংলাদেশ এর যোগাযোগ প্রযুক্তির খাতে এনে দিয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। এই থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যে কোনো তথ্য এখনকার চেয়ে কয়েকগুণ দ্রুত প্রেরণ ও গ্রহণ করতে পারবো। বাংলাদশে এখন র্পযন্ত এ্টাই সর্বাধুনিক মোবাইল প্রযুক্তি এবং বিশ্বেও মোবাইল ইউনিটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান যা পূর্ববর্তী যেকোন মোবাইল প্রযুক্তির চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন। বাণিজ্যিকভাবে থ্রিজি প্রথম চালু হয় জাপানে। ২০০১ সালে জাপানের এনডিটি ডেকোমো চালু করে ডবিউ-সিডিএমএ প্রযুক্তি। ধীরে ধীরে সারা বিশ্বেও মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যবহারকারীর কাছে পৌছে যায় এই থ্রিজি। বিশ্বের ৭১ টি দেশে তৃতীয় প্রজন্মের এই মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চললেও বাংলাদেশ অতি সম্প্রতি এ প্রযুক্তির সুফল ভোগ করার সুযোগ এসেছে।বিলম্ব হলেও অবশেষে সরকার দেশে থ্রিজির লাইসেন্স দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে সব মোবাইল কোম্পানির জন্য। এরই মধ্যে র্সব প্রথম রাষ্ট্রমালিকানাধীন টেলিটক থ্রিজি সেবা চালু করেছে।
থ্রিজি প্রযুক্তি কি?
বর্তমানে আমরা জিপিআরএস (জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস টেকনোলজি) বা ইউডিজির (ইনহ্যান্স ডাটা জিএসএম এনভারনমেণ্ট) মাধ্যমে সেলফোনে বা মোবাইলে পরিমিত গতির ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করে থাকি। থ্রিজি হলো আইটিইউ (ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) স্বীকৃত এমন এক থার্ড জেনারেশন মোবাইল কমিউনিকেশন প্রযুক্তি যার মাধ্যমে থ্রিজি সম্পন্ন মোবাইল ফোন বা মডেমের মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব।
সহজ কথায় বলতে গেলে, টেলিকমিউনিকেশন বা মোবাইল কমিউনিকেশনের একটি অত্যাধুনিক সংস্করণ এবং একই প্রযুক্তির মধ্যে জিএসএম, ইডিজিই, ইউএমটিএস ও সিডিএমএ-২০০ প্রযুক্তি অর্ন্তভূক্ত।
থ্রিজি ব্যবহারের সুবিধা:
থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি যেমন, উচ্চ গতিসম্পন্ন ভিডিও কনফারেন্স, উচ্চ গতির ওয়েব ও ওয়াপ ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ডাটা ট্রান্সফার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিভি দেখাসহ আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। রাষ্ট্রমালিকানাধীন টেলিটক থ্রিজি সেবা চালুর মাধ্যমে দেশে থ্রিজি সমর্থিত মোবাইলসেট ও স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে গেছে। থ্রিজি প্রযুক্তি আসার কারণে ভিডিও কলিং কনফারেন্সিং ,লোকাল বেইজড সার্ভিস, মোবাইল টিভির দখোর সুবিধা মানুষ পাচ্ছে। থ্রিজি সুবিধার কারণে শহর এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষ ঘরে বসেই উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে নিজেদেরই কাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সম্যসা সমাধান করতে পারবে ।
শিক্ষাক্ষেত্রে থ্রিজির ব্যবহার :
বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দিনদিন বড়েইে চলেছে। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রযুক্তিগত দিক থেকে এখনও কিছুটা পিছিয়ে আছে। সামগ্রিক ভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের শেখার পরিধি নির্দিষ্ট একটা গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইন্টারনেটের বিশাল ভান্ডার এবং ই-লার্নিং পদ্ধতি এ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে পারে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পিউটার,ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহারের সহজগোম্যতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলগুলোতে প্রয়োজনমাফিক কম্পিউটার ব্যবস্থার করার কারণে তারা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক উন্নত। আমাদের দেশের বেশিরভাগ স্কুল ও কলেজে কম্পিউটার পৌঁছে গেলেও ব্যবহার ব্যাধি না জানা থাকার জন্য, সেইসাথে কম্পিউটার অপারেটিং সর্ম্পকিত নানা সম্যসার থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে তা ব্যবহার করতে পারছে না। বর্তমান যুগে শর শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে তাই তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
স্বাস্থ্যখাতে থ্রিজির সম্ভাব্যতা :
বাংলাদেশে বেসরকারি মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওর্য়াক দেশব্যাপী বিস্তৃত রয়েছে। চিকিৎসা সেবার দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে এবং এবং থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা যেতে পারে। বিশ্বে বিভিন্ন দেশ যেমন; ভারত থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের দেশের স্বাস্থ্যের মান উন্নত করেছে এবং তৃণমূল পর্যায়ে উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশের মফস্বল তথা গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেশ অনুন্নত। সরকারি হাসপাতালের সেবার মান তেমন ভালো নয়, চিকিৎসকের সংখ্যাও কম যার কারণে গ্রামের দরিদ্র লোকজনের কাছে উন্নত চিকিৎসা সেবা যাচ্ছে না। তাই গ্রামাঞ্চলে উন্নতসেবা পৌছে দিতে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। দেশের সব সরকারি,বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে একটি কেন্দীয় কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে। সরকারি, বেসরকারি, প্যাথলজি,ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলো ডাটাবেস কম্পিউটার দ্বারা সংগৃহীত রাখা হয়। আমরা এই ডাটাগুলো একটি সার্ভারে জমা রাখতে পারি যাতে প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেকোন স্থানে বসেই রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন।এতে যে কোন রোগী তার চাহদিা মত উন্নত সেবা পাবেন। মোটকথা, আমাদেরকে স্বাস্থ্যখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে। থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেলিমেডিসিন ও কম্পিউটারাইজড হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি তেরি করা গেলে দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান অনেক উন্নত হতে পারে।
থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহারে নিচের বিষয়গুলোর প্রয়োজনীয়তা জরুরী :
প্রযুক্তির ব্যবহার:
প্রযুক্তির ব্যবহার যেকোন উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ তা অনুমেয়। শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে ল্যাপটপ ও ট্যবলেট বিতরণের মাধ্যমে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগ প্রয়োজন। মূল কথা হলো, গ্রামীণ পর্যায়ের মানুষের কাছে প্রযুক্তিকে পরিচিত করে দেওয়া যাতে তারা যেকোন তথ্য সহজে পেতে পারে।
দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ:
থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য দ্রুত গতির ইন্টারনেট প্রয়োজন। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে মানুষ প্রযুক্তির সুবিধা থেকে অনেকাংশেবঞ্চিত হচ্ছে।
ই-কনটেন্ট (মাতৃভাষায়)
ইন্টারনেটকে শিক্ষার্থীদে শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে হলে প্রচুর পরিমাণে ই-কনটেন্ট দরকার যা মাতৃভাষায় করণীয়। বাংলায় ই-কনটেন্ট ভান্ডার আমাদের দেশে এখনো তৈরি হয়নি। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও অধিক পরিমাণে বাংলা ভাষায় কনটেন্ট প্রস্তুতের কাজ করা উচিত।
সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন:
থ্রিজি প্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা গেলে ও সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই দুটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে লাইসেন্স দেওয়ার পূর্বে কয়েকটি বিভিন্ন গুরুত্ত পূর্ণ বিষয়ের সাথে সাথে আরও কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত। যেমন; দেশের সব অঞ্চল যেন দ্রুত এই সেবার আওতায় চলে আসে, শহর ও গ্রামের মধ্যে যেন প্রযুক্তি বৈষম্য সৃষ্টি না হয়। এছাড়া যথাসম্ভব কম মূল্যে এ সেবা সবার দুয়ারে যেন পৌছানো সম্ভব হয় সে ব্যাপারে দেশের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই, তারা যেন দ্রুত পরিবর্তনশী প্রযুক্তি দুনিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেদিকে দেশের নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা সাধারণ মানুষের কাছে কাম্য।
লেখক পরিচিতিঃ
- মেহেদী হাসান
সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
সার্টিফাইট ইন্টানেট ওয়েব প্রফেশনাল
ব্র্যাক