শনিবার ● ২২ জুন ২০১৩
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ালে ধান ও গম উৎপাদন ১৮ শতাংশ বাড়বে
উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ালে ধান ও গম উৎপাদন ১৮ শতাংশ বাড়বে
কয়েক বছরে ধান ও গম উৎপাদনে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন দেশের কৃষক। তাদের এ সফলতাকে আরো বেগবান করা সম্ভব। কেননা চাষাবাদে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে ধান ও গমের উৎপাদন ১৫-১৮ শতাংশ কম হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ আবাদি জমিতে ধান ও গমের আবাদ হয়। ফসল দুটির উৎপাদন হচ্ছে এখন প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন। গড়ে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ছাড়িয়েছে চার টন। কিন্তু সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৃষকদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের এখনো সচেতনতার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে ফসল দুটির উৎপাদন প্রায় ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
দেশের কৃষিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ফলন বাড়াতে ধান-গমের উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করছে। অথচ গবেষণা প্লটে যে পরিমাণ ফসল উৎপাদন হয়, তা মাঠপর্যায়ে হচ্ছে না। এ বিষয়ে পরিপূর্ণ কোনো গবেষণা না হওয়ায় উৎপাদন পার্থক্যের কোনো পরিপূর্ণ তথ্যও নেই।
গবেষণা প্লট ও কৃষকের মাঠে ফলনের পার্থক্য কী কারণে হচ্ছে, এর পরিমাণইবা কত, তা পরিমাপ করতে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বাকৃবিতে গবেষণা শুরু হয়। গবেষণাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাকৃবির কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম। এছাড়া সহযোগী ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মোমেন মিয়া, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল ইসলাম।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে ড. মু. আবুল কাসেম বলেন, আমন ধানের ক্ষেত্রে বেশি বয়সের চারা লাগানো, নিম্নমানের বীজ বপন করা, বিভিন্ন সার, বিশেষ করে মিউরেট অব পটাশ সারের অপর্যাপ্ত ব্যবহারের কারণে উৎপাদন কমছে। অন্যদিকে অপর্যাপ্ত ইউরিয়া, টিএসপি ও জিপসাম সারের ব্যবহার, আধুনিক চাষপ্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে কৃষকপর্যায়ে বোরো ধানের উৎপাদন কমছে। এছাড়া সঠিক সময়ে বীজ বপন না করা ও অপর্যাপ্ত সেচ দেয়ার কারণে গম উৎপাদন আশানুরূপ হচ্ছে না।
গবেষণাটি পরিচালনা করতে ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলে ধান-গমের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আলাদাভাবে বোরো, আমন ও গম আবাদে প্রথাগত চাষ পদ্ধতির ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি এ চার জেলার বিভিন্ন গবেষণা প্লটে সঠিক চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধান ও গমের ফলন নির্ণয় করা হয়। পরবর্তী সময়ে চার জেলায় ফলনের পরিমাণ নির্ণয় করে এর পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। এতে দেখা গেছে, গবেষণা প্লটের তুলনায় কৃষকের মাঠে আমন ধানের ফলন শতকরা প্রায় ১৭ শতাংশ কম। এক্ষেত্রে ধানের জাত হিসেবে বিনা-৭, ব্রি-৪০, ব্রি-৪১ ও বিআর-১১ ব্যবহার করা হয়। গবেষণা প্লটের তুলনায় কৃষকের মাঠে বোরো ধানের ফলন কমছে শতকরা ১৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে ধানের জাত হিসেবে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ব্যবহার করা হয়। একইভাবে কৃষকের মাঠে গমের ফলন কমছে শতকরা ১৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে গমের জাত হিসেবে প্রদীপ, সৌরভ ও শতাব্দী ব্যবহার করা হয়।
উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে ড. মো. আবদুল মোমেন মিয়া বলেন, কৃষক ও মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা একটু সচেতন হলেই উৎপাদন অনেকাংশেই বাড়ানো সম্ভব। কৃষিপ্রযুক্তি সম্পর্কে আধুনিক জ্ঞানে কৃষকদের সমৃদ্ধ করা, সঠিক সময়ে বীজ বপন করা, সঠিক মাত্রায় সার ব্যবহার, সেচ প্রভৃতি বিষয়ে একটু সতর্ক থাকলে অতিরিক্ত খরচ না করেই ধান-গম উৎপাদন আশানুরূপভাবে বাড়ানো সম্ভব। এজন্য বিভাগগুলোকে আরো তত্পর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।