মঙ্গলবার ● ১১ জুন ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির বাজেট প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির বাজেট প্রতিক্রিয়া
অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৩-১৪ সালের বাজেট পেশ করার জন্য তাকে অভিনন্দিত করছি। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রস্তাবনা অনুসারে তিনি বাজেটে যেসব সহায়ক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেনে তার জন্যও তাকে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা মনে করি তিনি বাজেটে সফটওয়্যার ও সেবা খাতের ট্যাক্স হলিডে ২০১৩-এর জুন থেকে ২০১৫-এর জুন পর্যন্ত বাড়ানোর ফলে আমাদের এই খাত প্রবৃদ্ধির পথে আরও দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যেতে পারবে। আমরা একে ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম। আমরা আশা করবো বর্ধিত মেয়াদান্তে আবারও আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে।
এবারের বাজেটে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ২২০ কোটি টাকা থেকে ৬৩৩ কোটি টাকায় উন্নীত করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে আমরা লক্ষ্য করেছি এই মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তোলার কাজটি শ্লথ ও ভিন্নধর্মী করে দিয়েছে এবং আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যেখানে সরকার স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে সেখানে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তোলায় সরকারের অনীহা থাকতে পারেনা।
একই সাথে সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আইসিটি নীতিমালা অনুসারে ৭০০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন তহবিল সরকারের গঠন করার কথা, যেটি এখনও সরকার গঠন করেনি। অর্থমন্ত্রী ২০১৪ সালে ই-গভর্নমেন্ট চালু হবার আশাবাদ ব্যক্ত করায় তাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এই কাজটি এই সরকারের মেয়াদেই হওয়া উচিত ছিলো। এতে প্রমাণিত হয় যে, সরকারের আমলাদের মানসিকতার পরিবর্তন এখনও হয়ে ওঠেনি। জিডিপিতে এই খাতের অবদান ২০২০ সালে ২.৬ ভাগ হবে বলে তার আশাবাদ আমরাও সমর্থন করি।
তিনি আইসিটির গুরুত্ব অনুধাবন করে বিভিন্ন বিষয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন সেগুলো এই খাতের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ নামক একটি আলাদা পুস্তিকা প্রকাশ করে সরকারের কাছে এই খাতের গ্ররুত্বকে তুলে ধরেছেন। আমরা মনে করি সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে আরও সমন্বিত আকারে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আরও আন্তরিক হওয়া।
বাজেটে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ডিজিটাল ক্যামেরা, ওয়েব ক্যাম, সার্ভার র্যাক, ফাইবার ক্যাবল, সিম কার্ড, মেমোরী কার্ড, ইঙ্ক, রিবন, স্মার্ট কার্ড ইত্যাদির কর কমিয়েছেন। এজন্য আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তবে আমরা বড় আকারের মনিটর (২৭ ইঞ্চি পর্যন্ত), মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ডিজিটাল বোর্ড ইত্যাদির কর কমানোর অনুরোধ করেছিলাম। বাজেটে এসব বিষয়ে সরকার ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ায় এই খাতকে সংকটে ফেলা হয়েছে। বিশেষ করে ডিজিটাল ক্লাশরুম গড়ে তোলায় বেসরকারী খাতের এগিয়ে আসার পথ এজন্য রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাজেটে কেবলমাত্র ১৯ ইঞ্চি আকারের মনিটরের শূল্ক শূন্য করা হয়েছে। এই আকারের মনিটর এখন তৈরিই হয়না। ফলে ডেস্কটপ পিসির সকল মনিটরের দাম বাড়বে। এতে কম্পিউটার প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। আমরা অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট, টার্ন অভার ট্যাক্স, খুচরা ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর সম্পর্কে যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছি সেগুলোও বিবেচনা করা হয়নি। আমরা অগ্রিম ট্রেড ভ্যাটকেই চূড়ান্ত ভ্যাট হিসেবে বিবেচনা করা, অগ্রিম আয়কর শতকরা ৩ ভাগে নামিয়ে আনা, টার্ণ অভার ট্যাক্স মওকুফ করা ও খুচরা স্তরে দোকান প্রতি ভ্যাট ৪২০০ টাকা রাখার দাবি করছি।
দেশব্যাপী ডিজিটাল ক্লাশরুম গড়ে তোলার সময়সীমা ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ায় আমরা হতাশ হচ্ছি।
এছাড়াও আমরা ইন্টারনেটের ওপর থেকে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি করে আসছি। অর্থমন্ত্রী নিজেও উপলব্ধি করেন যে, এমন উচ্চহারে ভ্যাট আরোপ করা মোটেই সঙ্গত নয়। তিনি ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইদথ ও ব্যবহার ব্যয় কমানোর কথা বললেও ভ্যাট প্রত্যাহার না করায় বা ভ্যাট হার না কমানোতে তার স্ববিরোধীতাই প্রকাশিত হয়েছে।
আমরা আশা করবো যে সরকার বাজেট পাশ করার আগে আমাদের দাবিগুলো আবার বিবেচনা করবেন ও গ্রহণ করবেন।
-তানিম