সোমবার ● ২০ মে ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » বাংলাদেশে বাড়ছে ইল্যান্সের ব্যবহারকারী
বাংলাদেশে বাড়ছে ইল্যান্সের ব্যবহারকারী
বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত পেশা “ফ্রিল্যান্সিং” ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে জনপ্রিয় হচ্ছে এবং সেই সাথে বাড়ছে অনলাইনে কাজ করা পেশাজীবীদের সংখ্যা। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বেড়ে চলছে ইল্যান্সে কাজ করা ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা।
বিশ্বের প্রথম সারির একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ইল্যান্স (www.elance.com) ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। যাত্রা শুরু করার পূর্বে বাংলাদেশে ইল্যান্সের ব্যবহারকারী ছিল ২৮,২৩২ জন, যা ২০১২ সালের শেষে ৩০,২৭৯ জন হয়। তবে সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, এপ্রিল ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বমোট ইল্যান্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৩ সালেই এই পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ইল্যান্সে নিবন্ধন করেছে ৯,৭৫২ জন ফ্রিল্যান্সার।
শুধু ব্যবহারকারীর সংখ্যাই নয়, বৃদ্ধি পাচ্ছে উপার্জনকারী ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যাও। ২০১৩ সালের প্রথম ৩ মাসেই বাংলাদেশ থেকে ইল্যান্সে কাজ পেয়েছে ১,৮২৪ জন ফ্রিল্যান্সার, যাদের মধ্যে ৬০০ জন ছিল ইল্যান্সে একদম নতুন, যারা আগে কখনও ইল্যান্সে কোন কাজ করেনি। ২০১২ সালে যেখানে সারা বছরে মোট ১০,৯৫৭টি কাজে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ পেয়েছিল, সেখানে ২০১৩ সালের প্রথম ৩ মাসেই ৪,২৬৭টি কাজে নিয়োগ পেয়েছে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা।
ইল্যান্সের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টরা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের কাজে নিয়োগ দিচ্ছে। ইল্যান্সে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা সবচেয়ে বেশি কাজ পাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে এবং এর পরেই দ্বিতীয় স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ৭টি দেশের মধ্যে বাকি স্থানগুলোতে আছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত আইটি ক্যাটাগরিতে কাজ পাওয়া ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যাই বেশি এবং এর প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় বাংলাদেশের সেরা ১০টি ফ্রিল্যান্সিং স্কিলের তালিকায়। বাংলাদেশ থেকে ইল্যান্সে এই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছে পিএইচপি জানা ফ্রিল্যান্সাররা। এর পরেই সেরা ১০টি স্কিলের তালিকায় আছে এইচটিএমএল, ওয়ার্ডপ্রেস, সিএসএস, মাইএসকিউএল, ফটোশপ, ইন্টারনেট মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং ডাটা এন্ট্রি। তবে নতুন স্কিল হিসেবে দ্রুত উঠে আসছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশান ডেভেলপমেন্ট (এনড্রয়েড এবং আইফোন)। এই ক্যাটাগরির ফ্রিল্যান্সারদের সম্মিলিত উপার্জন মার্কেটিং এবং গ্রাফিক ডিজাইনারদের থেকেও বেশি।
এক পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, উপার্জনের দিক দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসছে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা, যদিও এক্ষেত্রে এখনো বেশিরভাগ সফল ফ্রিল্যান্সার দেখা যাচ্ছে বিভাগীয় প্রধান শহরগুলোতেই। উপার্জনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সেরা ৭টি শহর হল ঢাকা, খুলনা, জামালপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এবং বগুড়া। উল্লেখ্য, গত বছর পর্যন্ত এই তালিকায় চট্টগ্রাম ছিল ৭ম স্থানে এবং ২০১৩ সালের প্রথম ৩ মাসের মধ্যেই চট্টগ্রাম ৪র্থ স্থানে উঠে এসেছে।
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের এই সামগ্রিক অগ্রগতির পেছনে রয়েছে ফ্রিল্যান্সারদের নিজেদের অবদান, যার অন্যতম মাধ্যম হল সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েবসাইট। ফেসবুক এবং লিংকডইনে দেখা যায় প্রচুর বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের গ্রুপ, যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা একে অপরকে নিয়মিতভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে। এই সম্মিলিত অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য ইল্যান্সের পক্ষ থেকেও সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়নয়ের জন্য কোন ধরনের ফি ছাড়াই নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং এবং ওয়ার্কশপ, যেখানে নতুন এবং অভিজ্ঞ উভয় ধরনের ফ্রিল্যান্সাররা কোন খরচ ছাড়াই ফ্রিল্যান্সিং-এর বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পারছে। গত ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত ইল্যান্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আয়োজন করা হয়েছে ১৭টি ওয়ার্কশপ, যার মাঝে ২টি ছিল ঢাকার বাইরে। এছাড়াও ঢাকার বাইরের আগ্রহীদের মাথায় রেখে আয়োজন করা হয়েছে ১১টি ওয়েবিনার (অনলাইন ওয়ার্কশপ), যেখানে আগ্রহীরা নিজের বাসায়, নিজের কম্পিউটারে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করতে পেরেছে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছে ৩টি মিট-আপ। আশা করা যাচ্ছে, এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরেও প্রচুর ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হবে ইল্যান্সের পক্ষ থেকে।