সোমবার ● ২৫ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে গ্রামীণফোন !!! ব্যাংক হিসাব জব্দ হচ্ছে আজ
রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে গ্রামীণফোন !!! ব্যাংক হিসাব জব্দ হচ্ছে আজ
।। আইসিটি শিল্প ও বাণিজ্য ।। বকেয়া রাজস্ব ১৪০ কোটি টাকা আজকের মধ্যে জমা না দিলে গ্রামীণফোনের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করার প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে এনবিআর।
চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর দ্রুততম সময়ে বকেয়া আদায়ে গ্রামীণফোনকে চাপ দিচ্ছে। এ চাপ সামলাতে গ্রামীণফোনও মামলার পাশাপাশি তদবির ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এনবিআরের অভিযোগ, টেলিকম জায়ান্ট টেলিনরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন সঠিক সময়ে রাজস্ব পরিশোধে সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করছে না। তাই পাওনা আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দের পদক্ষেপের দিকে এগোচ্ছে এনবিআর। অন্যদিকে গ্রামীণফোন মনে করছে, বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকার পরও এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে এনবিআর।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, গ্রামীণফোনসহ সব করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রাজস্ব আহরণে আইনানুগ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পুরনো পাওনা আদায়ে অচিরেই আরো জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এলটিইউর (ভ্যাট) অতিরিক্ত কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী বলেন, ‘গ্রামীণফোনকে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা সরকারের পাওনা পরিশোধ করেনি। কোনো সন্দেহ নেই, আজকের মধ্যে বকেয়া রেয়াত পরিশোধ না করলে আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব জব্দের মতো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’
এ নিয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন তাহমিদ আজিজুল হকের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।
এনবিআর ও বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে নেয়া ভ্যাট রেয়াতের অর্থ পরিশোধের জন্য চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গ্রামীণফোনকে সাত কার্যদিবস সময় দিয়ে চিঠি দেয় এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এ সময়সীমা শেষ হয়। এরপর আরো এক কার্যদিবস পেরিয়ে গেলেও এবং গ্রামীণফোনের সঙ্গে এনবিআর যোগাযোগ করলেও পাওনা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। পাওনা আদায়ে আজ বিকাল ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে এনবিআর। এ সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করলে গ্রামীণফোনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে লিখিত নালিশ জানিয়েছেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সুদ। ১৪ মার্চ অর্থমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠিতে বিবেক সুদ উল্লেখ করেছেন, আদালতে বিচারাধীন থাকার পরও এনবিআর লাইসেন্স নবায়নের দ্বিতীয় কিস্তির টাকার ওপর ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আদায়ে চাপ দিচ্ছে। এনবিআর তাদেরকে ব্যবসায়িক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। শত্রুভাবাপন্ন এ আচরণ অপ্রত্যাশিত; যা আগামী জুনে থ্রিজি লাইসেন্সের নিলামে গ্রামীণফোনের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে এনবিআরের বিরুদ্ধে নালিশ করার পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর কাছে বেশকিছু দাবিও জানিয়েছে গ্রামীণফোন। দাবিগুলো হচ্ছে- লাইসেন্স ফির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, সিম ট্যাক্স সম্পূর্ণ অথবা উল্লেখযোগ্য হারে প্রত্যাহার ও আয়কর রিটার্নে সিম ট্যাক্সকে খরচ হিসাবে গ্রহণ করা। এছাড়া লাইসেন্স ফি পরিশোধে বিলম্বের কারণে এনবিআর, বিটিআরসি যেসব বিলম্ব ফি, জরিমানা ও সুদ ধার্য করেছে, তা থেকেও মুক্তি দেয়া। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন জারির সুপারিশ করা হয়েছে ওই চিঠিতে। পাশাপাশি বিচারাধীন মামলা তুলে নিয়ে বিষয়টি আদালতের বাইরে মীমাংসার অনুরোধও করা হয়েছে।
রাজস্ব নিয়ে গ্রামীণফোনের সঙ্গে এনবিআরের বিরোধ বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। এ বিরোধ নতুন করে চাঙ্গা হয় দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) লাইসেন্স নবায়ন ফির ওপর ভ্যাট রেয়াত নেয়াকে কেন্দ্র করে। এ বিরোধের জের ধরেই অবৈধভাবে নেয়া রেয়াতের ১৪০ কোটি টাকা আজকের মধ্যে জমা না দিলে গ্রামীণফোনের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করার প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে এনবিআর।
উল্লেখ্য, টুজি লাইসেন্স নবায়নের অর্থ গ্রামীণফোন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে পরিশোধ করে। সেখান থেকেই তারা ভ্যাটের অর্থ রেয়াত নেয়। এক্ষেত্রে এনবিআরের দাবি, বিটিআরসি ভ্যাটের অর্থ রেয়াত দেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ নয়। একই সঙ্গে টুজি লাইসেন্স নবায়নের উেস ভ্যাট রেয়াতযোগ্য নয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে টুজি লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে অবৈধভাবে গ্রামীণফোনের বড় অঙ্কের ভ্যাট রেয়াতের বিষয়টি এনবিআরের নজরে আসে। সে সময় দুই দফায় অর্থ পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়া হয়। গ্রামীণফোন অর্থ পরিশোধ না করে মামলা করে। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে অর্থ পরিশোধের জন্য গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে গ্রামীণফোন। ১০ মার্চ আপিল বিভাগ গ্রামীণফোনের আবেদনে নো-অর্ডার দেন।
-প্রতিবেদনটি লিখেছেন, মীর মনিরুজ্জামান ও খান এ মামুন