বৃহস্পতিবার ● ২১ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » নিউজ আপডেট » লাশ দেড় মাস ফ্রিজে রেখে ফেলা হয় সাগরে
লাশ দেড় মাস ফ্রিজে রেখে ফেলা হয় সাগরে
প্রায় দেড় মাস সেই নাবিকের লাশ জাহাজের ফ্রিজে রাখা হয়েছিল। এক পর্যায়ে জ্বালানি তেল সংকটের কারণে জাহাজের জেনারেটর বন্ধ হয়ে যায়। তাই ফ্রিজ থেকে তার লাশ সাগরে ফেলে দিতে হয়েছে।’সহকর্মীর লাশটিও পরিবারের কাছে ফেরত দিতে না পারার ব্যর্থতা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন নাবিক এলেম উদ্দিন। সোমালিয় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি এ নাবিক। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ওমান এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে চট্টগ্রাম পৌঁছেন।
বিমান বন্দরের লাউঞ্জে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার যখন তারা মুক্তিপনের নিশ্চয়তা পাচ্ছিল না তখন জাহাজের সব নাবিকদের উপর নির্যাতন শুরু করে। সে নির্যাতন কেমন অমানবিক তা কল্পনাও করা যাবে না। মুক্তিপণের জন্য দস্যুদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নাইজেরিয়ান এক সহকর্মী নাবিক মারা যান।’
প্রায় ১৩ মাস পর জীবিত অবস্থায় দেশে ফিরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের লাউঞ্জে মা সাফিয়া বেগমকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এলেম উদ্দিন।। নগরীর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর এলাকায় তার বাড়ি।
‘এমটি রয়েল গ্রেস’ নামের নাইজেরিয়ান মালিকানাধীন একটি কেমিক্যাল ট্যাংকারে ইঞ্জিন রেটিং পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত হয়েছেন। তবে মুক্তিপণের পরিমাণ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি এলেম উদ্দিন।
এলেম উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর ৩ মার্চ আরব আমিরাতের শারজার আমিরিয়া বন্দর থেকে এমটি রয়েল গ্রেস নাইজেরিয়া যাওয়ার পথে সোমালিয় জলদস্যুরা জাহাজে আক্রমন চালায়। প্রথমে ৬ জন দস্যু ছোট বোট নিয়ে আমাদের জাহাজটিকে আক্রমন করে। পরে আরো ৭ থেকে ৮জন সশস্ত্র জলদস্যু জাহাজে উঠে। জলদস্যুরা হানা দেওয়ার সময় জাহাজটিতে ১৭জন ভারতীয়, একজন পাকিস্তানি, একজন বাংলাদেশি ও তিনজন নাইজেরিয়ান নাবিক কর্মরত ছিলেন।’
দস্যুদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এলেম উদ্দিন। দীর্ঘস্বাস নিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন,‘মুক্তিপণের জন্য দস্যুরা জাহাজের সব নাবিককে নির্যাতন করতো। তাদের নির্যাতন সইতে না পেরে এক সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।’
দেড় মাস সেই নাবিকের লাশ জাহাজের ফ্রিজে রেখেও সাগরে ফেলে দিতে হয়েছে। তার লাশটিও পরিবারের কাছে দিতে পারলাম না।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ সোমালিয় জলদস্যুরা মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের জাহাজসহ ছেড়ে দেয়। মুক্ত হওয়ার প্রায় পাঁচদিন পর এমটি রয়েল গ্রেস জাহাজটি ওমানের সালালা বন্দরে পৌঁছে। সেখানে ইমিগ্রেশন জটিলতা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার নাবিকরা স্ব স্ব দেশে ফিরে যান।
এদিকে মালয়েশিয়ান পতাকাবাহী ‘এমভি আলবেডো’ নামের আরেকটি জাহাজে কর্মরত আরো সাত বাংলাদেশি নাবিক সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে বন্দি রয়েছেন। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর সোমালিয় উপকূলের প্রায় ৯০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি সোমালিয়া জলদস্যুরা ছিনতাই করে। সূত্র- বাংলা নিউজ