বৃহস্পতিবার ● ২১ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি বন্ধ হয়ে যাবে!!!
ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি বন্ধ হয়ে যাবে!!!
৷৷ সুমন আফসার ৷৷ প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনে ব্যবসায়িকভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের শীর্ষ ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স। একই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে কিউবিরও। এরই মধ্যে বিকল্প প্রযুক্তি চালু করতে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদনও করেছে বাংলালায়ন। তবে এ আবেদন নাকচ করে দিয়েছে
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির উন্নয়নকাজ এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
কিছুদিনের মধ্যে যন্ত্রাংশ উত্পাদনও বন্ধ করে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বাংলালায়ন ও কিউবির লাইসেন্স ও নেটওয়ার্ক
অবকাঠামো খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিলামে উচ্চমূল্যে লাইসেন্স নেয়ার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তই প্রতিষ্ঠান দুটিকে এ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নিলামে বাংলালায়ন ২১৫ কোটি টাকা দিয়ে লাইসেন্স নেয়। অথচ নিলামে এর ভিত্তিমূল্য ছিল ২৫ কোটি টাকা। সে সময় ওয়াইম্যাক্স খাতে এ বিনিয়োগকে হঠকারী বলে মন্তব্য করেছিলেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স নিলামের ক্ষেত্রে এ দর বিশ্বের সর্বোচ্চ। এর আগে সিঙ্গাপুরে প্রতিটি ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্সের জন্য দর উঠেছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা প্রায় ১২১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৬৭ টাকা হিসাবে)।
নিলামের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক বিডিমেইল নেটওয়ার্ক লিমিটেড ও অজের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড বাংলাদেশ লিমিটেড (কিউবি) এ দরেই লাইসেন্স নিতে সম্মত হয়। আর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডকেও (বিটিসিএল) একই দরে লাইসেন্স নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এক্ষেত্রে সেবা চালু করে শুধু বাংলালায়ন ও কিউবি।
এ প্রসঙ্গে শ্রীলংকাভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক আঞ্চলিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান লার্নেশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খান বলেন, শুধু ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স নিয়ে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে, এমন নজির বিশ্বের কোথাও নেই। মূলত সেলফোন অপারেটররা নিজেদের সেবার পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (বিডব্লিউএ) লাইসেন্সের মাধ্যমে এ সেবা দিয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসায় স্বল্প পুঁজির কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থান নেই। যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানই টেলিযোগাযোগ খাতে এ ধরনের সেবা দিতে সক্ষম বলে মনে করেন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) সাবেক এ মহাসচিব।
এদিকে বিনিয়োগ নিরাপদ করতে ও ব্যবসায়িক ঝুঁকি মোকাবেলায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে লং টার্ম ইভ্যালুয়েশন (এলটিই) প্রযুক্তি চালু ও ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে তরঙ্গ বরাদ্দে বিটিআরসির কাছে আবেদন করে বাংলালায়ন কর্তৃপক্ষ। তাদের বর্তমান লাইসেন্সের আওতায়ই এ প্রযুক্তি চালুর জন্য আবেদন করা হয়। এতে বাংলালায়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে বিডব্লিউএ লাইসেন্সের আওতায় ওয়াইম্যাক্স ৮০২ দশমিক ১৬ই প্রযুক্তির সেবা দিতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর সঙ্গে এলটিই যোগ হলে অপারেটররা গ্রাহককে আরো ভালো সেবা দিতে পারবে। ওয়াইম্যাক্স ও এলটিই একই ধরনের প্রযুক্তি। বর্তমানে বরাদ্দ করা তরঙ্গের মাধ্যমেই এ সেবা দেয়া সম্ভব।
ওয়াইম্যাক্স ফোরামও এ দুটি প্রযুক্তি একীভূত করার বিষয়ে কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিটিআরসি যে লাইসেন্স দিয়েছে, সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে, ওয়াইম্যাক্স বা পরবর্তী সময়ে সমপরিমাণ বা এর চেয়ে যে উন্নতর প্রযুক্তি আসবে, তা গ্রহণ করতে পারব। এখন সারা দুনিয়ায় ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সবাই এলটিইর দিকে যাচ্ছে। ফলে আমরাও অনুমতি চেয়েছিলাম। বিটিআরসি অনুমোদন দেয়নি। তবে তারা এটা দিতে বাধ্য।’
বিটিআরসি অনুমোদন না দেয়ায় বাংলালায়নের ভবিষ্যৎ কী, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনুমোদন না দিলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। বিটিআরসির কাছে আমরা কোনো বাড়তি ব্রডব্যান্ড চাইনি। এলটিই ফোরজি সেবার প্রযুক্তি। কিন্তু বিটিআরসি নাকি এটা থ্রিজির জন্য দেবে। এটা থ্রিজির কোনো কাজে আসবে না। এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বুঝতে পারছে না। তাই আমরা দ্রুতই বিটিআরসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হব।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিডব্লিউএর শর্তানুযায়ী এ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে শুধু ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তিনির্ভর সেবার জন্য। আর এর শর্তে উল্লেখ রয়েছে, ভবিষ্যতে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির কোনো উন্নয়ন ঘটলে তা কমিশনের অনুমোদনসাপেক্ষে ব্যবহার করতে পারবে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিটিআরসির দেয়া সব লাইসেন্সেই টেকনোলজি নিউট্রালিটির সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনই প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। টেলিযোগাযোগ খাতের রোডম্যাপ অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে টেকনোলজি নিউট্রালিটির অনুমোদন দেবে বিটিআরসি। এর আগে বিদ্যমান লাইসেন্স অনুযায়ী অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ নেই।