বুধবার ● ১৩ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » নিউজ আপডেট » জামায়াত-শিবিরের ডিজিটাল জালিয়াতিতে তোলপাড় হোয়াইট হাউস
জামায়াত-শিবিরের ডিজিটাল জালিয়াতিতে তোলপাড় হোয়াইট হাউস
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে আন্তর্জাতিক সংযোগে মরিয়া জামায়াত-শিবির। আমেরিকার হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে দলটির কয়েকজন প্রতিনিধি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে হোয়াইট হাউস সংযোগে মরিয়া হয়ে ভুয়া ই-মেইল ব্যবহার করার কারণে হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট থেকে জামায়াত-শিবির যে মিথ্যা বানোয়াট পিটিশন করেছিল তা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ‘ক্লিন ইমেজ’ রক্ষায় ব্যর্থ হয় দলটির প্রাথমিক মিশন।
প্রাথমিক মিশনে ব্যর্থ হলেও হোয়াইট হাউসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানা ফন্দি-ফিকির চালাচ্ছে জামায়াত।
দলটির একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে হোয়াইট হাউসে একাধিক ই-মেইল পাঠিয়েছে দলটি। তাতে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না বলে তারা দাবি করেছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে গত দেড় মাসে বিভিন্ন ই-মেইল পাঠিয়েছে জামায়াত। এতে তারা জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের নয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেনো এতে নজর দেয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে জামায়াত-শিবিরের আরেকটি ডিজিটাল জালিয়াতিতে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
ওবামার উদ্দেশ্যে পিটিশন খুলে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে গত রোববার পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার স্বাক্ষর প্রদর্শন করতে সক্ষম হয় শিবির। তাদের এ প্রতারণা নিয়ে তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ তোলা হয় সিএনএনের একটি পেজে। এর পরই পিটিশনটি বন্ধ করে দেয় হোয়াইট হাউস পিটিশন সাইট।
মঙ্গলবার রাত ১টা পর্যন্ত petitions.whitehouse.gov ঢুকে দেখা যায়, ‘এক্সপ্রেস কনসার্ন এগেইনস্ট ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যান্ড মব জাস্টিস ইন বাংলাদেশ’ নামের পিটিশনটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে স্বাক্ষর নেওয়া চলছে ট্রাইব্যুনালের পক্ষে করা একটি পিটিশনে।
‘বাংলাদেশকে বাঁচাও, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়ায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির নৈরাজ্য, সহিংসতা চালাচ্ছে ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতন করছে’ শিরোনামে একটি পিটিশন করা হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এর তিন দিন পর জামায়াত-শিবিরের পক্ষে করা হয় পাল্টা পিটিশন।
ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে, প্রথমে সিএনএনের আইরিপোর্ট শাখায় প্রকাশিত হয় একটি প্রতিবেদন। ওপরে একটি ছবিতে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে লাখো মোমবাতি জ্বালিয়ে আন্দোলনকারীদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির একটি দৃশ্য। ছবিতে সাদা অক্ষরে লেখা ‘আওয়ার প্রটেস্ট’। নিচে রয়েছে আরেকটি ছবি। তাতে আগুনে পুড়তে থাকা একটি ট্রেনের দৃশ্য। এ ছবিতে লেখা ‘দেয়ার প্রটেস্ট’। ২ ছবিতে শান্তিপূর্ণ শাহবাগ আন্দোলন এবং আন্দোলন বিরোধীদের সহিংসতা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটির ইংরেজি শিরোনামের বাংলা অর্থ দাঁড়ায় এমন- ‘বাংলাদেশকে বাঁচাও। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়ায় বিএনপি-জামায়াত-শিবির নৈরাজ্য, সহিংসতা চালাচ্ছে ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতন করছে।’
এতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে নির্যাতন করছে তার তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রমাণস্বরূপ সংবাদমাধ্যমের লিঙ্কও দেওয়া হয়। সবশেষে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আবেদন জানানো হয়- তারা যেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে ওবামা প্রশাসনের কাছে পেশ করা একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেন। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রত্যাশা করে এ আবেদনটি করা হয়েছে হোয়াইট হাউসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে- লিঙ্ক : wh.gov/dBpI
হোয়াইট হাউসের সাইটে গিয়ে দেখা যায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে পিটিশনটি করা হয় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে দাবি জানোনো হচ্ছে তার প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করুন।’ এর তিন দিন পর করা হয় পাল্টা একটি পিটিশন। এ বিষয়ে সিএনএন আইরিপোর্টের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, জামায়াত-শিবিরের পক্ষে করা পিটিশনটি নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতি চলছে। ‘হোয়াইট হাউস পিটিশন স্ক্যাম : লার্জ স্কেল ইউজেস অব ফেইক ই-মেইল আইডিস?’
হোয়াইট হাউস তাদের সাইটে জানায়, কোনো পিটিশনের পক্ষে এক মাসের মধ্যে এক লাখ স্বাক্ষর পড়লে এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার একটি বক্তব্য জানাবেন। এ স্বাক্ষর দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবির।
পৃথক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ওবামা প্রশাসনের বিবেচনার জন্য এক মাসের মধ্যে এক লাখ স্বাক্ষর প্রয়োজন। এ জন্য জামায়াত-শিবিরের ফেসবুক পেজ ‘নিউবাঁশের কেল্লা’য় ওই আবেদনের পক্ষে স্বাক্ষর করতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সংগৃহীত স্বাক্ষরের একটি বড় অংশই ইন্টারনেটে ভুয়া পরিচয় ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছে দাবি করে প্রতিবেদনে গ্রাফ আকারে নানা তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের পোর্ট আর্থারের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ জামায়াত-শিবিরের আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন!
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শিবিরের একটি সাইট থেকে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, তারা যেন ‘ফেইকমেইলজেনারেটর.কম’ সাইটে গিয়ে যতো ইচ্ছা ততো ভুয়া ই-মেইল পিটিশনের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। এভাবে নানা মাধ্যমে ভুয়া আইডি তৈরি করে হোয়াইট হাউসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবির চক্র।
সূত্র- বাংলানিউজ