সোমবার ● ১১ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত শিল্প খাত প্রযুক্তি
বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত শিল্প খাত প্রযুক্তি
সপ্তমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত শিল্পখাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে প্রযুক্তি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডেলম্যান বারল্যান্ডের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এডেলম্যান ট্রাস্ট ব্যারোমিটার নামে চালানো এই জরিপে ৭৭ শতাংশ ভোক্তার আস্থা নিয়ে প্রযুক্তি খাত পেছনে ফেলেছে গাড়ি, খাদ্য ও পানীয়র মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় শিল্পগুলোকে। খবর ম্যাশেবলসের।
সরকার, এনজিও, ব্যবসা এবং গণমাধ্যমগুলোর বিশ্বস্ততা নিরূপণ করে থাকে অলাভজনক সংগঠন এডেলম্যান ট্রাস্ট। সংগঠনের করপোরেট গ্লোবাল প্র্যাকটিসের চেয়ারম্যান বেন বয়েড বলেন, ‘শিল্প হিসেবে ভোক্তাদের চাহিদা আগে থেকে অনুমান করা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রয়েছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর। আমি বিশ্বাস করি, পরস্পর সংযুক্ত এ দুনিয়ায় যোগাযোগের কাজটি সহজ করেছে প্রযুক্তি; আর সেটার পুরো কৃতিত্বই দাবি করতে পারে কোম্পানিগুলো। তাতে নিজেদেরকে উচ্চতর একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো।’
২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী ২৬টি দেশের ৩১ হাজার ব্যক্তির ওপর নেতা, প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প সম্বন্ধে মূল্যায়ন জরিপ চালায় ট্রাস্ট ব্যারোমিটার। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রকাশ করা হয় তাদের প্রতিবেদনটি। এতে দেখা যায় যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা থাকলেও নেতাদেরকে (বিশেষ করে রাজনীতিবিদ) কেউই তেমন বিশ্বাস করেন না।
২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে এ জরিপ চালায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডেলম্যান বারল্যান্ড। জরিপে অংশ নেন ২৬ হাজার সাধারণ উত্তরদাতা। এর পাশাপাশি ৫ হাজার ৮০০ জন সচেতন ব্যক্তির মতামতও নেয়া হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন নিয়মিত সংবাদ দেখা উচ্চশিক্ষিত, উচ্চ বেতনধারী ও উচ্চ উপার্জনকারী ব্যক্তিরা।
উত্তরদাতাদের ৭৭ শতাংশই জানান, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সামর্থ্য এবং প্রতিশ্রুতিতে তারা আস্থাবান। অবশ্য এর আগের বছর ৭৯ শতাংশ ব্যক্তি প্রযুক্তি খাতের ওপর আস্থা প্রকাশ করেছিলেন। বয়েড জানান, তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর মানুষের আস্থা কমতে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘এটা অনেকটা দুমুখো তলোয়ারের মতো; প্রযুক্তির কল্যাণে অধিক তথ্য আহরণ এবং প্রচার সম্ভব হচ্ছে, তাতে বাড়ছে ব্যক্তি গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর এখন মূল মাথাব্যথা, ভোক্তাদের মূল্যবোধকে অক্ষুণ্ন রেখে নিত্যনতুন চমক উপহার দেয়া।’
এডেলম্যানের বিশ্বস্ততার তালিকায় একেবারে তলানীর দিকে আছে গণমাধ্যম, ব্যাংক এবং আর্থিক সেবা খাত। গত কয়েক বছর ধরেই একের পর এক বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে এসব খাতের বিভিন্ন কোম্পানি। বয়েড জানান, গাড়িশিল্পে আবারো আস্থা রাখছেন ভোক্তারা। ২০১২ সালে তাদের জনপ্রিয়তার হার ছিল ৬৬ শতাংশ। এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ শতাংশে।
অবশ্য গত বছরের তুলনায় এ বছর গণমাধ্যমের ওপরেও মানুষের আস্থা কিছুটা বেড়েছে। তবে এখনো তাদের অবস্থান এনজিও এবং বিভিন্ন ব্যবসার পেছনে। এ বছর ৫৭ শতাংশ মানুষ গণমাধ্যমের ওপর আস্থা প্রকাশ করেছেন। ৪৮ শতাংশ মানুষ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা রাখেন। এনজিওর ওপর আস্থা রয়েছে ৬৩ শতাংশ ব্যক্তির। ব্যবসার ওপর ভরসা রাখতে পারেন ৫৮ শতাংশ মানুষ।
এদিকে উন্নয়নশীল এবং উন্নত বাজারগুলোয় গণমাধ্যমের ওপর বিশ্বাসে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। উন্নয়নশীল বাজারগুলোয় ৭১ শতাংশ ব্যক্তি অনলাইন সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্বাস করেন। ৬৫ শতাংশের আস্থা রয়েছে প্রচলিত গণমাধ্যমের ওপর। সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর ওপর বিশ্বাস রয়েছে ৫৮ শতাংশ ব্যক্তির। কিন্তু উন্নত বাজারগুলোয় মাত্র ৪৭ শতাংশ ব্যক্তি সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্বাস করেন। আর সামাজিক যোগাযোগ সাইটের ওপর তাদের বিশ্বাস নেই বললেই চলে। মাত্র ২৬ শতাংশ ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আস্থাশীল।
বয়েড বলেন, পশ্চিমারা কম্পিউটারের ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল, আর উন্নয়নশীল বাজারে সেলফোনেই স্বচ্ছন্দ অধিকাংশ ব্যক্তি। বিভিন্ন মাধ্যম তারা বহনযোগ্য যন্ত্রেই ব্যবহার করেন। উন্নয়নশীল বাজারে তথ্য আদান-প্রদান হয় অনেক দ্রুত এবং তাতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ খুবই কম।