সোমবার ● ১১ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » সাইবার আক্রমনে ৫ হাজার শিবির কর্মী!
সাইবার আক্রমনে ৫ হাজার শিবির কর্মী!
শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরের সমাবেশ থেকে জামায়াত শিবিরকে প্রতিহত করার শপথ উচ্চারিত হচ্ছে বারবার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার এই প্রজন্ম চত্বর। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী জামায়াত-শিবির গোপনে শপথ করেছে এই আন্দোলন বানচালের। যেকোনোভাবেই হোক শাহবাগের আন্দোলনকে বানচাল করে একে নিয়ে মিথ্যা ও ভুল তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে তৎপর রয়েছে এরা।
বাংলানিউজ সুত্রে জানা যায়, শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরবিরোধী অপপ্রচারে জামায়াতের মজলিশে সূরা (উচ্চপর্যায়ের বৈঠক) থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের ছাত্রসংগঠন শিবিরই অনলাইনে প্রজন্ম চত্বরের বিভিন্ন কার্যক্রম নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করবে আর জামায়াত তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের ধর্মপরায়ণ মানুষের কাছে ‘শাহবাগ নাস্তিকদের সমাবেশ’ এটা তুলে ধরবে। সে অনুযায়ী অনলাইন আর অফলাইনে বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে শাহবাগবিরোধী কর্মকাণ্ডে মেতেছে জামায়াত-শিবির।
৬ ফেব্রুয়ারি জামায়াত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথ বৈঠকে শাহবাগ বিষয়ে প্রথম আলোচনা হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। ফেব্রুয়ারি ও চলতি মাসে দলটির একাধিক বৈঠকেও শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য কর্মীদের উৎসাহ দিতে বলা হয়েছে।
ধর্মকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষের মনে যেন শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় এ কৌশল নিয়েই এখন এগোচ্ছে তারা। দলীয় সিদ্ধান্তের পর অনলাইন আর অফলাইনে চলে শাহবাগ চত্বর নিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতিবাচক প্রচারণা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্তে প্রায় ৫ হাজার শিবিরকর্মী সাইবার যুদ্ধে দিনরাত সক্রিয় রয়েছে। অনলাইনে অপপ্রচারে এদের প্রধান টার্গেট ফেসবুক, দ্বিতীয় ব্লগ এরপর টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোর কোনো খবরে নিজেদের ইচ্ছেমতো আজে বাজে মন্তব্য পোস্ট করাও একটি নিয়মিত কাজ হিসেবেই নিয়েছে জামায়াত-শিবির।
শাহবাগবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্তদের একজন বলেন, ‘‘দলের নির্দেশে প্রায় ৫ হাজার আইটি এক্সপার্ট অনলাইনে সক্রিয় রয়েছেন। দেশের বাইরেও এক্সপার্টদের একাংশ রয়েছেন।”
শাহবাগের আন্দোলনকারীরা জাতিকে বিভক্ত করতে চায় এই মত দিয়ে ওই শিবিরকর্মী বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে অনলাইনে আছেন আমাদের যোদ্ধারা আর অফলাইনে তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের সহকর্মীরা তো আছেনই।”
এই কর্মীদের বাইরেও একটি বড় সংখ্যার শিবিরকর্মী অনলাইনে কাজ করছেন।যাদের সংখ্যা লাখ ছাড়াবে বলে দাবি ও কর্মীর।
অনলাইনে গণজাগরনের পক্ষে যেসব গ্রুপ আছে সেসব গ্রুপের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। তারা ছদ্মবেশে গণজাগরণের মূলপাতায় ঢুকে নিজেদের আন্দোলনকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফেইসবুকে ইসলাম ধর্ম, পবিত্র কোরআন ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করছে। যেসব উক্তির পাল্টা জবাবও নিজেরাই দিচ্ছে।
অনলাইনে শিবির শাহবাগবিরোধী যেসব অপপ্রচার করছে সেসবের মধ্যে রয়েছে, এ আন্দোলন নাস্তিকদের আন্দোলন, শাহবাগ আন্দোলন জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা, এ আন্দোলন আওয়ামী ও বামদের আন্দোলন, এখানে ধর্মের অবমাননা করা হয়, মদ ও গাঁজার আসর বসানো হয়, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলে টাকা দেয়া হয়—এ জাতীয় নানা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিচ্ছে প্রতিক্রীয়াশীল মৌলবাদী এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টাতো আছেই।
মিথ্যা তথ্য-জাল উপাত্ত, জাল আলোকচিত্র ও ভিডিও প্রকাশের পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে নোংরা, আপত্তিকর, অশ্লীল ভাষা আপলোড করছে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইটে।
শাহবাগে গণজাগরণের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত ব্লগার ও অনলাইন অ্য্যকটিভিস্ট এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনো পেইজের অ্যাডমিন সাদমান সাদেকের দাবি, জামায়াত-শিবিরের পেইড ব্লগার রয়েছে যাদের দলের পক্ষ থেকে টাকা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত-শিবিরের পেইড ব্লগাররা শাহবাগ আন্দোলনের ভুল মেসেজ দিতে চাচ্ছে। ফেসবুকে ব্লগে তারা আগে থেকেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। রাজপথে তাণ্ডবের পর এখন অনলাইনে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে এই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীটি বর্তমানে অনলাইনে কোনঠাসা। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আছি তারা রাজপথ এবং অনলাইন দু`জায়গাতেই তৎপর আছি।”
গণজাগরণের স্লোগানকন্যা হিসেবে পরিচিত লাকি আক্তার বলেন, ‘‘সাইবার যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনই বেশি। অন্তর্জালের দুনিয়ায়ও তারা পরাজিত হচ্ছে এবং হবে।”
ফেসবুকে জামায়াত-শিবির ‘বাঁশেরকেল্লা’ নামক একটি পেজের মাধ্যমে শাহবাগ বিরোধী ভূমিকা ও দেশব্যাপী নাশকতা চালানোর ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলানিউজে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিনই বিটিআরসি ‘বাঁশেরকেল্লা’ নামের পেজটি বন্ধ করে। বিটিআরসি পেজটি বন্ধ করার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিবির আবার পেজটি চালু করে ফেলে। লিংক তৈরি করে ‘নিউ বাঁশের কেল্লা’ নামে ।
পেজটি বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির-রাজাকার চক্রের অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
শিবিরকর্মীরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিজেদের মিছিলের ছবি, তাণ্ডবের ছবি শেয়ার করছে এ পাতার মাধ্যমে। একই সঙ্গে রক্তাক্ত শিবিরকর্মীদের ছবি ছাপিয়ে দাবি করছে- গণহত্যা চলছে বাংলাদেশে। এই অপতৎপরতা অতি অবশ্যই সময় থাকতে রুখে দেয়া দরকার। শত্রুকে সুযোগ করে দিয়ে কোন লাভ নেই। বাঁশের কেল্লায় পোস্টকৃত ছবিগুলো, পাতাটির টুইটার অ্যাকাউন্টেও পোস্ট করা হচ্ছে। প্রতিটি ছবির সঙ্গে তারা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা লাইভ, আল-জাজিরা স্ট্রিম ও ইউএনকে যোগ করে নিচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একাত্তরের পরাজিত শক্তিটি অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে একটি বিশেষ টিম। যেকোনো সময় বিভ্রান্তিকারীদের কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ হতে পারে।
শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে জামায়াত-শিবিরের অব্যাহত মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দীপ্ত সাইবার যোদ্ধারা। ফেসবুকে `শাহবাগে সাইবার-যুদ্ধ` নামক পেজে অনেক অপতৎপরতার জবাব দিচ্ছেন ফেসবুকাররা।
সুত্র- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম