বুধবার ● ৬ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং ঝুঁকিতে
অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং ঝুঁকিতে
৷৷আইসিটি বিশ্ব ৷৷অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় হ্যাকারদের অন্যতম লোভনীয় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস এবং সিটিগ্রুপ সম্প্রতি আলাদা আলাদা বিবৃতিতে জানায়, মাঝে মধ্যেই তাদের সাইটগুলোয় গ্রাহকদের প্রবেশ বন্ধ করতে ওভারলোড কৌশলে হামলা চালাচ্ছে হ্যাকাররা। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম এ দুটি প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গের।
সম্প্রতি মার্কিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সাইবার হামলার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন ব্যাংকগুলোর দাবি, তাদের ওয়েবসাইটগুলোকে অচল করে দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের হামলা চালায় সংগঠিত অপরাধী কিংবা সন্ত্রাসী দলগুলো। এভাবে অব্যাহত হারে সাইবার হামলা বাড়তে থাকলে কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো নিরাপদ রাখার খরচ বাড়তেই থাকবে বলে জানায় ব্যাংকগুলো। তাতে চাপ পড়বে ব্যাংকগুলোয় বিনিয়োগকারীদের ওপর। এদিকে অব্যাহত সাইবার হামলার বৃদ্ধি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অবকাঠামো এবং কোম্পানিগুলোয় সাইবার হামলা প্রতিরোধে কার্যকর নীতি ও পদক্ষেপ নিতে কংগ্রেসকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এতে।
মিশিগানভিত্তিক নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান পোনেমন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান লরেন্স পোনেমন বলেন, আক্রান্ত হওয়ার আরো ঘোষণা আসছে। এতে নিশ্চিত যে, সাইবার হামলা খুবই বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। লরেন্স জানান, চলতি বছর সাইবার নিরাপত্তা খরচ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সাইবার হামলার শিকার হয় ব্যাংক অব আমেরিকা, জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কোং, ইউএস ব্যাংকরপ, ওয়েলস ফার্গো অ্যান্ড কোং এবং সানট্রাস্ট ব্যাংকস ইনকরপোরেটেডের মতো শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ঘটনা প্রকাশ করেন কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দুই নির্বাহী। এদিকে পিটসবার্গ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্যাংক পিএনসি ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস গ্রুপ জানায়, সাইবার হামলার কারণে গ্রাহকরা আস্থা হারাচ্ছেন। তাতে সার্বিক ব্যয় বাড়ছে ব্যাংকটির।
এদিকে শুধু আর্থিক খাতেই সাইবার অনুপ্রবেশ সীমাবদ্ধ নেই। ২২ ফেব্রুয়ারি হামলার শিকার হয় বিশ্বের শীর্ষ সফটওয়্যার কোম্পানি মাইক্রোসফট। এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানায়, তাদের নেটওয়ার্কে থাকা বেশকিছু কম্পিউটার ক্ষতিকর সফটওয়্যারে আক্রান্ত হয়েছে। একই ধরনের আক্রমণের পাল্লায় এর আগে পড়েছে বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল।
কয়েক বছর ধরেই মার্কিন প্রশাসন সাইবার হামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রথম দিকে সাইবার হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের ওয়েবসাইট কিংবা পেন্টাগনের ওয়েব পোর্টাল। কিন্তু অতিসম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো সংবাদ সংস্থাগুলোও হ্যাকারদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। মার্কিন প্রশাসন এবং কোম্পানিগুলো অবশ্য বরাবরই এ ধরনের হামলার জন্য চীনা হ্যাকারদের পরোক্ষভাবে দায়ী করে আসছে।
কয়েক দিন আগে বেশকিছু তথ্য প্রমাণসহ চীনা হ্যাকারদেরই মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোয় সাইবার হামলার জন্য দায়ী করে বসে কম্পিউটার নিরাপত্তা কোম্পানি ম্যানডিয়ান্ট। এক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি জানায়, ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৫০ বেশি কোম্পানি ও সংস্থার কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সাইবার হামলা চালিয়েছে চীনারা। চুরি করে নিয়েছে কয়েক টেরাবাইট মূল্যবান তথ্য। এসব হামলার বেশির ভাগই করা হয়েছে সাংহাইয়ের উপকণ্ঠে অবস্থিত পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) একটি স্থাপনা থেকে। ম্যানডিয়ান্ট অভিযোগ করে, ওই স্থাপনায় অবস্থিত একটি ১২ তলা দালানে কাজ করে ইউনিট ৬১৩৯৮ নামের একটি হ্যাকার দল।
গোল্ডম্যান ও সিটিগ্রুপের ভাষ্যমতে, তাদের সাইটে ওভারলোড কৌশলের আক্রমণই বেশি হয়। এ পদ্ধতিতে অনুপ্রবেশকারীরা বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে একযোগে কোম্পানিগুলোর সাইটে প্রবেশে অনুমতি চায়। তাতে হঠাৎ করেই ওয়েবসাইটগুলো থমকে যায় এবং এতে সেগুলোয় প্রবেশে সমস্যার সম্মুখীন হন প্রকৃত গ্রাহকরা। এমনকি কোনো কোনো সময় অতিরিক্ত প্রবেশ অনুরোধের চাপে সাইটগুলো সাময়িকভাবে অচল হয়ে যায়। কৌশলটিকে হ্যাকাররা ডিনায়াল অব সার্ভিস অ্যাটাক নামে অভিহিত করে।
সর্বশেষ স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে ওবামা বলেন, ‘আমরা জানি হ্যাকাররা জনগণের পরিচিতি চুরি করছে, ঢুকে পড়ছে তাদের ব্যক্তিগত ই-মেইলে। আমরা সেসব বিদেশী রাষ্ট্র আর কোম্পানিকে চিনি, যারা আমাদের করপোরেট গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে। এখন শত্রুরা লেগেছে আমাদের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আর বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে নাশকতা চালানোর কাজে।’
দ্বিতীয় বৃহত্তম মার্কিন লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি মাস্টারকার্ড ইনকরপোরেটেড জানায়, তাদের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে নিয়মিত হামলা হচ্ছে। তথ্য সুরক্ষা প্রযুক্তি, পদ্ধতি এবং নেটওয়ার্ক কোনো কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না হ্যাকারদের হাত থেকে। অবশ্য এ ধরনের হামলা হলেও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো আর্থিক দুর্ঘটনা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে কোম্পানিটি।
(আইসিটি নিউজ, আইটি নিউজ, আইটি সংবাদ, প্রজুক্তি সংবাদ, তথ্যপ্রযুক্তি, অনলাইন নিউজপেপার, তথ্যপ্রযুক্তি পত্রিকা, আইটি প্রোডাক্ট, প্রযুক্তি পণ্য, আইফোন, প্রযুক্তি বাজার, বাজারদর, ইন্টারনেট, নতুন পণ্য এর সর্বশেষ খবর জানতে ভিজিট করুন www.dailyictnews.com )