বুধবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » মুনাফা কমেছে গ্রামীণফোনের
মুনাফা কমেছে গ্রামীণফোনের
দেশের শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড ২০১২ সালে আয় করেছে ৯ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। তবে এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমেছে ৭ শতাংশ। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গ্রামীণফোন কর্মকর্তারা।
এতে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সুদ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ফ্রিতজফ রুস্তেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ তাহমিদ আজিজুল হকসহ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চতুর্থ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সুদ বলেন, ‘২০১২ সালে টুজি লাইসেন্স ১৫ বছরের জন্য নবায়িত হয়েছে। এর ফলে দেশের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য মানসম্পন্ন টেলিফোনসেবা প্রদানে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টার পথ তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গ্রাহকের প্রয়োজন ভিত্তিক উদ্ভাবনী অফার ও শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অধিক মুনাফা আয়ের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে গত বছর আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দেয়া ট্যারিফ কাঠামো এবং সিম রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত নির্দেশনা পুরো শিল্পেই রাজস্ব ও গ্রাহক প্রবৃদ্ধিতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। টুজি লাইসেন্সের ভ্যাট পরিশোধ-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
সারা বছর প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার আর বছরের দ্বিতীয় ভাগে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আরোপিত ট্যারিফের কারণে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি দেখা দেয়। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় বেড়েছে প্রধানত ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং নন-ভয়েসসেবা যেমন এসএমএস, ইন্টারনেট ও মূল্য সংযোজিত সেবা থেকে আয় বৃদ্ধি হওয়ায়। হোলসেল বিজনেস ও গ্রামীণফোন আইটি আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এটিকে ভবিষ্যত্ মুনাফার একটি সম্ভাবনাময় সূচক বলে মনে করছে গ্রামীণফোন।
আয়কর প্রদানের পর ২০১১ সালে শতকরা ২১ দশমিক ২ ভাগ মার্জিনসহ ১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা মুনাফার তুলনায় ২০১২ সালে নিট মুনাফা হয়েছে শতকরা ১৯ ভাগ মার্জিনসহ ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। নবায়িত টুজি লাইসেন্সের অ্যামর্টাইজেশন (অবলোপন) মূল্যে, টুজি লাইসেন্স নবায়ন ফি পরিশোধের ধারণাকৃত সুদের মূল্যের স্বীকৃতি এবং ঋণের সুদ পরিশোধের কারণে এ বছর নিট মুনাফা কম হয়েছে। তবে দক্ষ ব্যয় ব্যবস্থাপনা ও প্রবৃদ্ধির কারণে উপরের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে যে মূল মুনাফা, তা গত বছরের তুলনায় ইতিবাচক। ২০১১-এর শতকরা ৫৩ দশমিক ৫ ভাগের তুলনায় ২০১২ সালে সুদ, কর, অবচয় ও অবলোপন-পূর্ববর্তী আয় (ইবিআইটিডিএ) মার্জিন দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ১ শতাংশ।
ফলে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৯৬ পয়সা, যা ২০১১ সালে ছিল ১৩ টাকা ৯৯ পয়সা। ২০১২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৩ টাকা ৪২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৪ টাকা ৮১ পয়সা।
গত বছর গ্রামীণফোন ৩৫ লাখ নতুন গ্রাহক সংগ্রহ করেছে। ফলে বছর শেষে গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি এবং মার্কেট শেয়ার প্রায় ৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকের পরিচয় যাচাই করার পর সিম চালুর জন্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এ শিল্পের গ্রাহক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করেছে, যা অক্টোবর ২০১২ থেকে পরপর তিন মাস সেলফোন মার্কেটের সংকোচনের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়।
২০১২-এর শেষে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে ৬৩ লাখ হয়েছে, আগের বছর যা ছিল ৩৯ লাখ। নবায়িত টুজি লাইসেন্সের জন্য বিনিয়োগের বাইরে গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কের আধুনিকায়নে ২০১২ সালে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর মাধ্যমে চালু হওয়ার পর থেকে গ্রামীণফোনের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।
এদিকে দেশের বৃহত্তম কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন এ বছর সরকারি কোষাগারে কর, ভ্যাট ও শুল্ক আকারে এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের লাইসেন্স নবায়ন ফির দ্বিতীয় কিস্তির ১ হাজার ৮০ কোটি টাকাসহ মোট ৬ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা।