সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » পথ চলতে গিয়ে একদিন
পথ চলতে গিয়ে একদিন
পপি,
পথ চলতে গিয়ে একদিন পাবলিক বাসে তোমাকে দেখি। শুধু হয়েছিল দৃষ্টি বিনিময়। চোখাচোখি। যেমন মায়াবী হরিণি চোখ, তেমন অবয়ব ও লাবণ্যময় মুখখানি । পড়নে ছিল হালকা রঙের সালোয়ার-কামিজ। মাথায় ওড়না জড়ানো। মনে মনে ভাবছিলাম এইতো সেই নারী যাঁকে আমি এদ্দিন ধরে খুঁজছি। আমার সমস্ত ভালোবাসা যাঁর জন্য যতœ করে রেখে দিয়েছি। তোমাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না। আমার শরীরে যেন বিদ্যুতের মতো তরঙ্গ খেলে যায়। ভাবছিলাম, হে নারী, কি তোমার পরিচয়? কোথায় তুমি থাকো? কি তোমার নাম? তুমি কাউকে পছন্দ কর কিনা? এসব প্রশ্ন মনের মাঝে ভীড় করছিলো। উত্তেজনায় ছট্ফট্ করছিলাম। ইচ্ছা হচ্ছিল অপলক নয়নে চেয়ে থাকি। কিন্তু পাশে বসা যাত্রীরা কি ভাববে এই চিন্তায় শুধু আড়চোখেই দেখছিলাম।একটু পরে, বাসের হেলপার গন্তব্যস্থলের নাম ধরে ডাকার সাথে সাথে আমি যেন সম্বিৎ ফিরে পেলাম। নেমে গেলাম। তুমি হয়তো আরো পরে নামবে। আমার নামতে ইচ্ছে করছিলো না। শুধু মনে হচ্ছিল তোমাকে চুপি চুপি অনুসরণ করি। তোমার পিছন পিছন যাই। তুমি যেখানে নামবে আমিও সেখানে নামি। তোমাকে আমার ভাললাগার কথা বলি। কিন্তু, সে সাহস কি আমার ছিল? আমি একটু ভীতু প্রকৃতির। আসলে ভীতুদের দিয়ে প্রেম হয়না। ভালবাসতে সাহস লাগে। এত কাছে পেয়েও মনের মানুষটাকে ধরতে পারলাম না বলে মন খারাপ হয়ে গেল।
ক্ষণিকের এই ভাললাগা আমায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল কিছু সময়। বাস থেকে নেমে সারাক্ষণ শুধু তোমার কথা ভাবছিলাম। তোমায় নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনছিলাম। অসম্ভব ভাললাগা কাজ করেছিল সেদিন। তুমি হারিয়ে গেলে। কিন্তু মন থেকে একটিবারের জন্যেও হারিয়ে যাওনি। তোমায় খুঁজে ফিরতাম। বিধাতার কাছে অনেক ঋণ আমার। তিনি যদি আমাকে কোনোভাবে তোমার কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিতেন। মনে মনে এই প্রার্থনা করতাম।
আশ্চর্য, বিধাতা আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। তারপর যে কিভাবে তোমার সাথে পরিচয় হল,তা মনে হলে আজও আমি শিহরিত হয়ে উঠি। এবারের বিশ্ব ভালবাসা দিবসে এসব কথা তোমাকে জানাতে খুব ইচ্ছে করছে। তারপর,একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে তোমায় দেখলাম। আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। তুমি কি সেই তুমি? হ্যাঁ, তুমিইতো। এবার তুমি কোথায় পালাবে? এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তোমার খোঁজ নিলাম। জানলাম তুমি চিটাগং কলেজে সোশোলোজিতে পড়। পড়ের ইতিহাস তো তোমার জানা। কতদিন যে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি, তোমাকে দেখব বলে। একদিন তুমি যখন ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় সাহস করে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার পরিচয় দিলাম এবং খুব আস্তে করে বললাম যে, আপনাকে আমার ভাললাগে। আমার মোবাইল নাম্বারটা দিলাম। যদি কখনও কথা বলতে ইচ্ছা হয় তবে এই নাম্বারে কল করবেন।
তোমার কোনো সাড়া পেলাম না। আমি আঠার মত লেগে থাকলাম। আমাকে জয়ী হতে হবে। আমি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় তুমি আড়চোখে আমাকে দেখতে।
একদিন আসল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। একটা আন্নোন নাম্বার থেকে একটা নারীর আওয়াজ পেলাম। সেই শুরু। সত্যি হল আমার স্বপ্ন। বিধাতার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এভাবে বারে বারে এই ঘটনা আমার মনে পড়বে বিশ্ব ভালবাসা দিবসে।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,” যা পেয়েছি সেই মোর অক্ষয় ধন/যা পাইনি বড়ো সেই নয়।/চিত্ত ভরিয়া রবে ক্ষণিক মিলন/চির বিচ্ছেদ করি জয়।” বুদ্ধদেব গুহ ‘অভিলাষ’ এ লিখেছিলেন, “শুধুমাত্র অভিলাষ বুকে নিয়েই অধিকাংশ আধুনিক যুবক-যুবতীকে বেঁচে থাকতে হয়।
রবীন্দ্রনাথের সাথে আমাদের গলা মিলাতে হয়নি। আমাদের মিলন জয়যুক্ত হয়েছে। বিচ্ছেদ পরাজিত। অভিলাষ বুকে নিয়ে আমাকে বেঁচে থাকতে হয়নি। আমার অভিলাষ পূরণ হয়েছে।
লিখেছেন- মোহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী
চান্দগাঁও আ/এ,চট্টগ্রাম।