সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » স্মৃতির জীবনে কি এমন ঘটনা আছে?
স্মৃতির জীবনে কি এমন ঘটনা আছে?
স্মৃতির জীবনে কি এমন ঘটনা আছে? যা সে ভূলে গিয়েছিল? আবার ফিরেও এসেছে স্মৃতির জীবনে। তাও আবার আমাকে নিয়ে, কিন্তু কিভাবে? আমি তো তাকে আগে কখনও দেখিও নি। কিন্তু এখন আমি স্মৃতির সাথে দেখা করব কিভাবে, স্মৃতি তো এখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে গেছে। তাছাড়া আমি একজন ডাক্তার হয়ে স্মৃতিদের বাড়ি চট্টগ্রামে গেলে তার ভাইয়া কি সহজভাবে মেনে নিবে? কিন্তু না যেয়ে উপায় কি? প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। পরের দিন হাসপাতাল থেকে ‘দু’ দিনের ছুটি নিয়ে এবং হাসপাতাল হতে স্মৃতির ঠিকানা নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হই। চট্টগ্রাম ষ্টেশনের সাথেই তাদের বাড়ী ছিল। রাস্তার পাশে দোকানে প্রফেস্র সাবিদ হোসেনের বাড়ি জিজ্ঞেস করতেই তিন তলা হালকা নীল ও গোলাপী রং এর বাড়িটি দেখিয়ে দিল, বাড়িটি দেখে আমার যেন কেমন বোধ হল, কারণ বাড়িটির রং ছিল আমার অত্যন্ত প্রিয় রং। যাক সেসব কথা, গেইট পার হতেই দেখি,স্মৃতি ফুলের বাগানে চুপচাপ বসে আছে, সাবিদ হোসেন বাগানে পানি দিচ্ছে। আমাকে দেখে স্মৃতি ঘরে চলে গেল। “ডা. স্বরন আপনি” বললেন সাবিদ ভাই। ঘরে নিয়ে বসালেন। অর্থাৎ যেমন ব্যবহার আসা করেছিলাম তার চেয়ে ভাল ব্যবহার পেয়েছি। গল্প করতে করতে সাবিদ ভাইকে বলালাম ঐ দিন হাসপাতাল থেকে চলে আসার সময় আপনাদের সবাইকে বাহিরে পাঠিয়ে স্মৃতি আমাকে বলেছিল তার জীবনের যেসব ঘটনা ঘটে গেছে তার জন্য নাকি আমি দায়ী। “কিন্তু কিভাবে”? স্মৃতি তোমাকে খুব ভালবাসত সাবিদ ভাই আমকে বললেন। কিন্তু কিভাবে সম্ভব, আমি তো কিছুই জানি না, আমি বললাম। সাবিদ ভাই বললেন, আমি জানি স্মৃতির ভালবাসা সত্যি হলে তার স্বরণ তার কাছে ফিরে আসবেই।
বিকেলে স্মৃতির সাথে কথা বলতে তাদের বাড়ির থেকে একটু দূরে যাই এবং সেখানে স্মৃতি চুপচাপ বসে আছে। আমি তার পাশে গিয়ে বসি। কেমন আছেন স্মৃতি? স্মৃতি কোন কথা বলে না কেমন যেন নিঃস্থদ্ধ। প্লিজ চুপচাপ থাকবেন না, দয় করে কথা বলুন।
স্মৃতি- আপনি এখানে কেন এসেছেন?
স্বরন- আপনাদের সাথে আমার কি পরিচয় সেটা জানতে।
স্মৃতি- আপনার মনকে প্রশ্ন করে দেখুন তো, কোন উত্তর পান কি না?
স্বরন স্মৃতিরতিকে কাঁধে ধরে বলল, তুমি কে?
স্মৃতি- আমি ০১১০৯৩০। দেখতো চিনতে পারো কি না?
স্বরন- তুমি কি আমার হিয়া?
স্মৃতি- না আমি তোমার হিয়া নই। আমি শুধু হিয়া স্মৃতি।
স্বরন- তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে? তোমাকে আমি কত খুজেছি, ৫ বৎসর যাবৎ তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করেছি তোমাকে এক নজর দেখব বলে। তুমি কখনও তোমার সত্যি ঠিকানা আমাকে দাও নি।
স্মৃতি- শেষের দিনের কথা তোমার মনে আছে?
স্বরন- তার আগে বল, আমি তোমাকে দেখি নাই। তুমিও আমাকে দেখ নাই কিন্তু চিনতে পারলে কি করে?
স্মৃতি- রং নাম্বারে তোমার সাথে কথা বলার পর তোমর ছবি ও মোবাইল নাম্বার পেয়েছিলাম লিফলেটে। একদিন হঠাৎ আমাকে ফোন দিয়েছিলে আমার সাথে কথা বলতে, তখন স্বরন বলল, যদি কিছু মনে না কর তাহলে একট কথা বলি- আই লাভ ইউ। তখন হিয়া ফোনটা রেখে দিয়েছিল। পরদিন হিয়া ফোন করে বলেছিল, তুমি তো আমাকে দেখ নাই। আমি বলেছিলাম দেখতে হবে না। তুমি আমার মনের রাণী, হিয়া বলে-আই লাভ ইউ টু।
স্মৃতি- জানো তখন আমি ভাইয়াকে সব বলি। ভাইয়া বলেছিল আগে লেখা-পড়া শেষ কর, তারপর আমার তো আর মা-বাবা নেই তাই ভাইয়াকে সব বলতাম। জানো ভাইয়া আমার জন্য এখনো বিয়ে করেনি। যদি ভাবি আমাকে কষ্ট দেয়।
স্বরন- পরে বল, তুমি আমার কাছ থেকে সরে গিয়েছিলে কেন? এবং অসুস্থ হলে কিভাবে?
স্মৃতি- ১৪-০২-২০১২ ইং তারিখে তুমি আমার সাথে টি.এস.সিতে দেখা করবে বলেছিলে সকাল ১০ টায়, আমি বাসা থেকে বের হয়ে জ্যামে পড়ি। তোমার পরীক্ষা ছিল ১২-০৩ টা পর্যন্ত। তুমি ফোন দিয়ে আমার সাথে রাগ করেছিলে এত দেরি হচ্ছে কেন? তারাতারি আসতে গিয়ে ১১.২০ এর সময় রাস্তার উপারে তোমাকে দেখতে পেয়ে দৌড় দেই। সাথে সাথে একটি গাড়ি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। স্বরন- হ্যাঁ সেদিন পরীক্ষা ছিল ১২ টায়, শুনেছি একসিডেন্ড হয়েছে যাইনি, কারণ-১. তুমি আসতে ছিলে না। ২. তুমি ফোন ধরছিলে না। ৩. ১১.৫০ বাজে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছিল। তাই তোমার কাছে আর যাওয়া হয় নি। পরীক্ষাও ভাল হয় নি। পরে তোমাকে হাজারটা ফোন দিয়েছি, পাই নি। রাগে মোবাইল ভেঙ্গে ফেলি ও মাকে সব খুলে বলি। তোমাকে কত জায়গায় খুজেছি পাই নি। সেদিন থেকে মোবাইল চালানো বন্ধ করি ও তোমাকে ছলনাময়ী ভাবতে শুরু করি। পরে লেখা-পাড়ায় মন দেই। কিন্তু মনের মধ্যে এখনো তুমি আছ যার জন্য আমি তোমার কাছে ছুটে এসেছি এবং তোমাকে নিয়ে যেতে চাই।
স্মৃতির ভাগ্যের কি নিয়তি দেখেছো, তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েই স্মৃতি হারিয়ে ছিল তার স্বরন, আবার তুমিই ফিরিয়ে এনেছ স্মৃতির স্বরন। এই ভাবেই স্মৃতি স্বরনকে পেয়ে তাদের জীবন পুনরায় নতুন ভাবে শুরু করে। আর তখন স্বরন তার হিয়াকে অন্তরের অন্তস্থল দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে রবীন্দ্রনাথের মতো বলে “কি শুভ্র, কি নিবীড় পবিত্র। হিয়াকে সেরকম ভেবেছিল, এই হিয়া যেন তার চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর অপূর্ব নারী। হিয়া যেন তার স্বরনের অতি প্রিয় আরাধ্য বস্তু।”
লিখেছেন- সবুজ প্রধান
শ্রীপুর, গাজীপুর।