সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » বহুরূপী ভালবাসা
বহুরূপী ভালবাসা
বহ্নি আর তন্বী দুই বোন । ওরা ঢাকায় এক সাথেই থাকত । বহ্নি ইডেন কলেজের ছাত্রী আর তন্বী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের । হলে ছিট বরাদ্দ পাওয়ায় তারা দু’জন আলাদা হয়ে হলে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো । বহ্নি তন্বীর থেকে এক বছরের বড় হলেও পড়াশোনা একসাথেই করেছে । স্কুল কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতেও একসাথেই পড়ার ইচ্ছে ছিল তাদের । কিন্তু ভর্তি যুদ্ধের নাটকীয়তায় দু’জন এখন দই ভার্সিটিতে । অবশ্য দু’বোন দুই জায়গায় পড়লেও তারা একই বিষয়েই পড়ার সুযোগ পেয়েছে । দু’জনই মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী । দু’বোনের মধ্যে অনেক মিল । পড়াশোনায় যেমন মিল রয়েছে তেমনি তাদের দু’জনের চেহারাতেও অনেক মিল রয়েছে । একসাথে দাঁড় করিয়ে দিলে কে বহ্নি আর কে তন্বী তা বুঝে ওঠা মুশকিল । প্রায় সমবয়সী হওয়ায় দু’বোনের মধ্যে ছোট বেলা থেকেই খুঁনসুঁটি লেগেই থাকত । এখনও তাদের মধ্যে খুঁনসুঁটি লাগে তবে এখন সে খুঁনসুঁটি গুলোয় গভীর ভালবাসা যুক্ত হয়েছে । আলাদা আলাদা হলে থাকতে হবে জেনে দু’জনেরই বেশ কিছুদিন ধরে মন খারাপ অবস্থায় কেটেছে । কিন্তু তাদের কিছু করার নেই । পড়াশোনার জন্যে এটুকু ত্যাগ তাদের স্বীকার করতেই হবে।
রুবেল , ভাল নাম রুবেল হাসান । ঝুটের ব্যবসা আছে তার । সদরঘাট টু মতিঝিল , মতিঝিল টু ফার্মগেট এই করেই রুবেলের সারাদিন কাটে । সারাদিন কয়েকটি কথা , এই পঞ্চাশ , এই একশ বলে বলে মুখ থেতিয়ে ফেলে সে । কিন্তু রাত হলেই সে অন্য মানুষ । মোবাইলটা কানের কাছে নিয়ে ভদ্রতার বুলি ফোঁটায় সে । রাতের ঢাকায় নিশাচর প্রাণীর মত সে পাক্কা প্লেবয় হয়ে উঠতে চাই । খারাপ জায়গায় যাওয়ার অভ্যাস তার অনেক দিনের । আর ফোনে মেয়েদের পটানো নেশায় পরিণত হয়েছে তার ।
বহ্নি আজ রুবেলের বাসায় এসেছে । এর আগেও এসেছিল সে কয়েকবার । রুবেলকে বহ্নি প্রচন্ড ভালবাসে । তাইতো সরল বিশ্বাসে সে রুবেলকে তার শরীর মন দিয়েছে । কিন্তু সে জানে না রুবেলের ভিতরকার পশুটাকে । যে বারবার বহ্নির শরীরে আঁচড় কেটেছে তার হিং¯্র থাবা দিয়ে আর উপভোগ করেছে কাঁচা মাংসের স্বাদ ।
রুবেলের বাসায় তালা ঝুলছে দেখে বহ্নির মন খারাপ হয়ে গেল। অঝোরে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল তার । একা একা লাগছিল তার। রুবেলের সাথে তার এই সম্পর্কের কথা সে তন্বীকে জানায়নি কখনো । সে বাসা থেকে নেমে রাস্তায় হাঁটতে লাগল । তার পাশদিয়ে হাজার হাজার গাড়ি হুইশেল বাজিয়ে চলেছে , রং বেরং এর দোকান সারি সারি । তার সাথে , পিছে , সামনে হাজারো মানুষ কোন দিকে ভ্রক্ষেপ নেই তার । সামনেই একটা পার্ক । বহ্নি পার্কের একধারে গিয়ে বসল । রাতের আকাশটা আজ বেশ পরিষ্কার । তারাগুলো জ্বল জ্বল করে জ্বলে আছে । চাঁদটার পূর্নরূপ দেখে মনে হচ্ছে চাঁদটা রুদ্রমূর্তী ধারন করে সমস্ত পৃথিবীকে তার থেকে নি:সৃত আলো দিয়ে খেয়ে ফেলবে ; কিন্তু চাঁদ তা করছে না । বরং তার জ্যোৎসনার স্নিগ্ধ আলোয় মন প্রান ভরিয়ে তুলছে । চাঁদের দিকে তাকালেই মনে হয় সেটা কোন একজন চেনা মানুষের মুখবয়ব । সে মুখের চাহনী বড় মায়াবী । হঠাৎ পার্কের পাশ দিয়ে বহ্নি দুটি মানুষের ছায়া হেঁটে যেতে দেখল। সে হতচকিত হয়ে গেল। মানুষদুটি যে তার অনেক চেনা। সে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে । তন্বী আর রুবেল খুব অন্তরঙ্গ হয়ে হাঁটছে । হেঁটেই চলেছে তারা । খানিক দূরে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল দু’জন ।
লিখেছেন-খান মশিউর রহমান
থানা: শ্রীপুর, জেলা: মাগুরা