সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » হৃদয় নিঃড়ানো ভালোবাসা
হৃদয় নিঃড়ানো ভালোবাসা
[আমার পিতৃতুল্য প্রিয় শিক্ষক জনাব মুখলেস স্যারের স্মৃতি উদ্দেশ্যে লেখা]-ভোরের আকাশে তখনো সূর্যের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েনি। আমি এক ঘরহারা তরুণ। এসেছি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আমার রাগি বাবা আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয় মেডিক্যালে চান্স পাইনি বলে অথচ বড় অতভূত ইচ্ছে ছিল ছাদ থেকে লাফদিয়ে এ ক্ষুদ্র মানব জীবন এর প্রদীপ নিভিয়ে দেই। কিন্তু কী মনে করে সেদিন নানু বাড়িতে মামার কাছে গিয়ে হাজার খানেক টাকা নিয়ে ময়মনসিংহে আসি। যথারীতি আমি চান্স পেয়ে যাই ফিশারিজ বিভাগ এ। ক্লাসের প্রথমদিন সবার পিছনের সিটে বসে আনমনে হতাশার ঘূর্নি পাকে নিমজ্জিত হচ্ছিলাম। হঠাৎ আমাকে ডেকে ওঠে যে স্যার ওনার নাম ড. মুখলেসুর রহমান। আমার কাছে এসে মাথায় স্নেহের পরশ মাখা হাত খানি রেখে বলে “কী ব্যাপর, তোমার নাম রুল কল করছি শুনতে পাচ্ছ না”। আমি যে বাবার অপমান করে দেওয়া আচরণে স্তব্ধ হয়ে অন্য লোকে চলে গিয়েছিলাম কখন, তা টের পাই নি। স্যার আমাকে ওনার চেম্বারে ডেকে নিয়ে যায়। কথায় কথায় জানতে পারি ওনার বাড়ি আমাদের জেলায় এবং পাশাপাশি থানায়। একদিকে মেডিক্যালে ভর্তি না হতে পারা অন্য দিকে বাবার অপমান যেন আমাকে অক্টোপাসের মত গিলে খাচ্ছিল। আর স্যার সেই অক্টোপাসকে ধীরে ধীরে খুন করে। আমি স্যারের ছেলে হয়ে যেন নীল আকাশে শঙ্খচিলের মত আবার উড়তে শুরু করেছি। অবশ্য স্যার নিঃসন্তান। আর সেই নিঃসন্তান স্যারের যেন আত্মার সন্তান হয়ে উঠেছি আমি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমি দ্বিতীয় জন্ম গ্রহণ করি এ ধরনীতে তাও কেবল স্যারের সাহাচার্যের বলে। মনের আকাশে কালো পেঁজাতুলো মেঘ গুলো কেটে যেতে থাকল ধীরে ধীরে। আর আমি ক্লাসের প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে প্রথম হলাম। স্যার প্রায় আমাকে নিয়ে নোয়াখালীতে ফিশারীজ প্রজেক্ট দেখতে যেত। স্যারযেন আমার পিতার আসন পাকাপোক্ত ভাবে আদায় করে নিল। প্রকৃতি বড় নিষ্ঠুর, বড় নির্মম। আমার প্রাণপ্রিয় স্যারের হঠাৎ করে Bone মেরুতে ক্যান্সার ধরা পড়ল। সিঙ্গাপুর থেকে ওনাকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমি তখন সদ্য মাষ্টার্স পাশ করে স্কলার শিপের চেষ্টা করছি। আমার প্রাণপ্রিয় ডঃ মুখলেসুর রহমান পৃথিবীর মায়াত্যাগ করে অন্যলোকে চলে যায়। কেউতো আর আমাকে কপালে চুমু দিয়ে বলবে না সাবাস! সাবাস! এমন রেজাল্টইতো চাই। স্যারের সেই মুখ খানি স্মৃতির মানসপটে ভেসে ওঠলে কেন জানি চোখের কোণে অশ্রু এসে ভিড় করে। স্যার, বিশ্ব ভালবাসা দিবসে আপনার প্রতি আমার হৃদয় নিঃড়ানো ভালবাসা রইল। দোয়া করি স্রষ্টা যেন আপনাকে স্বর্গের শুশমা দান করে।
লিখেছেন-এম. এন. সালেহ্ বায়েজীদ
গবেষক
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়