সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » বৃষ্টিবিলাস
বৃষ্টিবিলাস
ওর নাম বৃষ্টি। নামটি অবশ্য আমারই দেয়া। আহা, ও যদি আমায় ‘দাদা’ সম্মোধন না করে বিলাস নামে ডাকতো তাহলে দুই নামে সন্ধি হয়ে হতে পারতো ‘বৃষ্টিবিলাস’।২০০৫-০৬ সেশন। আমার ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া ছাত্রের দিদি ও। আমি ম্যাথ-ফিজিক্সের ভালো টিচার হবার সুবাদে ওদের সাথে পরিচয়। প্রথম যেদিন পড়াতে গেছিলাম, তুমুল বৃষ্টি। ঠিক যেন ক্যাটস এন্ড ডগস। রিকশায় ভিজে একসার। ভিজে কাপড়ে দেখে ও বলেছিলো “এভাবে কেউ আসে নাকি?” আমি দৃষ্টি রাখতেই আমার চোঁখে চোঁখ রেখে বলেছিলো “আমি আপনার ছাত্রের দিদি।” জানলাম ও বি.এল কলেজের ইংলিশের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমি তখন খু.বি তে ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেণ্ট।
আমার একটু শারীরিক সমস্যা ছিলো। তাই কেউ আমার দিকে তাকালে মনে হতো করুণার চোঁখে তাকাচ্ছে। এই প্রথম মনে হলো ঐ চোঁখে করুণা নয় ভালোবাসা আছে। উজ্জ্বল শ্যমলবরণ বদনটি। অপরুপ। শান্ত স্বভাবের। চোঁখ কাজল কালো। মনে হতো এই বুঝি স্বজল হলো। তাই বৃষ্টি নামটা মনে এসেছিলো। হঠাৎ করে একদিন নামকরণের এই কথাটা প্রকাশ করলাম। নিরুত্তরের সম্মোতি পেয়েছিলাম। ও কথা বলতো আস্তে আস্তে, শান্তভাবে এবং কী সুন্দর গুছিয়ে! ও আমায় বলতো নিজেকে যেন কখনও ছোট না ভাবি। পড়াতে গেলে দু-একটা বাক্যবিনিময় হতোই। কখনও একটু বেশিই। ওগুলো আমার কাছে কেমন জানি সম্পদ মনে হতো। এ দুয়েকটি কথা আমাকে মনে করিয়ে দিতো যে দৈনন্দিন সব কাজের মাঝে একটি বাড়তি কাজ করছে ও। আর তা হলো আমায় নিয়ে ভাবনা। ওর এই ভাবনাটা আমায় দারুণ এক উপলব্ধি সৃষ্টি করতো।
সপ্তাহে মোট ৪ দিন বৃষ্টির দেখা মিলতো। ৩ দিন পড়াতে গিয়ে আর শুক্রবারে রিকশা-ভ্রমনে। মনে হতো সপ্তাহে যদি একাধিক শুক্রবার থাকতো। ওর সুস্থ আলাপ, সু-আচার-ব্যবহার, সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস ও ধর্মাচার, আর ঐ আখিঁযুগলের অকৃত্রিম চাহনি ওকে প্রাণ প্রিয়া ভাবতে বাধ্য করেছিলো। ওরা ছিলো হাইয়ার কাস্ট। আর এই ভয়টার কথাই ও প্রায়ই বলতো। বাবার চোঁখে চোঁখ রেখে কখনও নাকি কথা বলেনি। তাই ও যে বাবা-মার খুব আদরের ধন ছিলো তা ওদের বাড়িতে যাতায়াতে বুঝেছিলাম। আমি ওর মা-বাবারও প্রিয়ভাজন ছিলাম। তাই আমার অবচেতন মন যে আরেকটু বেশীই ভাবতো তা বলাই বাহুল্য।
একদিন শুক্রবার। রুটিন রিকশা-ভ্রমণ। আকাশে ঘনকালো মেঘ। ঠিক ওর চুলের মতো। sms এ জানালো-বৃষ্টি নামবে তো। “আমিতো বৃষ্টিই চাই”-আমার ফিরতি sms। বান্ধবীর মেসের কথা বলে বের হলো। আমাদের রিকশা ভ্রমণ ছিলো খু.বি-র পশ্চিম দিকের বিশ্বরোড। একটু নিরিবিলি। হঠাৎ ফর্সা হয়ে এলো আকাশ। তাই রিকশা ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে গিয়ে বসলাম বিশ্বরোডের পাশের আম-নারকেল গাছের মাঝে। বাক্য তরঙ্গে ব্যকুল ছিলাম তাই বুঝিনি মেঘের পূনরুত্থান। নিমিষেই ভীষণ বৃষ্টি। দ্রুত হাটতে পারলুম না এবং রিকশাও মিললো না তাই একটি বড় আম গাছের নিচে আশ্রয় হলো। পাশাপাশি বসলুম। দুজনেই বৃষ্টিøাত। রিমঝিম বৃষ্টির মাঝে বৃষ্টির সৌন্ধর্য্য নিয়ে আমার বৃষ্টির সাথে মিষ্টি আলাপ চলছিলো। হঠাৎ প্রচন্ড বজ্রনাদ। কাছেই হয়তো কোথাও বজ্রপাত হয়েছিলো। ভীষণ ভয়ে নিজের অজান্তেই বৃষ্টি আমায় জড়িয়ে ধরলো। ওর হস্তস্পর্শ পর্যন্ত কখনও পাইনি। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আজ এ কী অনুভূতি দান করলেন! ভাবছি। তখনই আবিষ্কার করলাম ঈশ্বর শুধু এই অনুভূতিই নয় সাথে আরেকটু দিয়েছেন। তা হলো পুলিশ ভ্যান। নির্জন এলাকা। ওরা আমাদের কাছে এগিয়ে এসে বললো যে তাদের সাথে যেতে হবে। থানা? পূলিশ? আমি চুপ! ও লাজুক মেয়ে। কিন্তু আমায় অবাক করে পরিস্থিতি ও-ই সামলেছিলো।
তারপর অনেকদিন। ওর ছোটভাইয়ের ভালো রেজাল্ট। ওর বাবার ঢাকায় বদলী। কয়েক মাস মোবাইল বন্ধ। তারপর একটি sms:
“amr dekha ekjon valo manus apni. mobile chalu na thakr jonno sorry. sasurir set-e sim lagie sms likhsi. valo thakbn…”
আমি ফিরতি sms লিখেছিলাম “Chokher (joler) jotno nio….” যার Delivery report আসেনি। বুঝলুম। ‘বৃষ্টি’ ও ‘বিলাস’ শব্দ দুটির সন্ধিবিচ্ছেদ সম্পন্ন হলো।
লিখেছেন-দেবানন্দ বিশ্বাস
উপজেলা কৃষি অফিস, ফুলতলা, খুলনা।