মঙ্গলবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » ধানের তুষ দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন!!!
ধানের তুষ দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন!!!
৷৷ নওগাঁ প্রতিনিধি ৷৷
এবার ধানের তুষ দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করে নিজেদের অটোরাইস মিলের বিদ্যুত চাহিদা পূরণ করেও পাশ্ববর্তী কলকারখানা বা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত বিপণনের সম্ভাবনার অপার দ্বার খুলে দিয়েছেন নওগাঁর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ‘নাসিম ব্রাদার্স’-এর স্বত্বাধিকারী মোঃ নাসিম উদ্দিন। শহরের মশরপুর মৌজায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীতে তাঁর অটোরাইস মিলটি ধানের তুষ পুড়িয়ে উৎপাদিত বিদু্ৎ দিয়ে মিল পরিচালনার পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করেছেন রবিবার। তুষকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে উৎপাদিত বাষ্প উচ্চচাপে প্রয়োগ করে ‘টার্বাইন বিদু্ৎ পস্ন্যান্ট’-এর মাধ্যমে প্রতিদিন এখানে প্রায় ৫শ’ কিলোওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। তাঁর অটোরাইস মিলে প্রতিদিন বিদু্যত চাহিদা ৩শ’ থেকে ৩শ’ ২০ কিলোওয়াট। সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট বিদ্যুত তিনি পার্শ্ববর্তী মাঝারি বা ছোট প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করতে পারেন। এই তুষ পদ্ধতির উৎপাদিত বিদ্যুত দেশে বর্তমান বিদু্ৎ সঙ্কট মোকাবেলায় বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে বলে মনে করছেন এখানকার বিদ্যুত কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীগণ ।
নাসিম ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ নাসিমউদ্দিন ও তাঁর ভাই মোঃ শাকিল বলেন , বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের হাত থেকে চাল উৎপাদনের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার লক্ষে ভারতের উদ্ভাবিত ‘টার্বাইন বিদ্যুত পস্ন্যান্টে’র বিষয়টি তাঁরা মাথায় আনেন। এ টার্বাইন বিদ্যুত পস্ন্যান্ট তুষের আগুনের বাষ্প (স্টিম) দিয়ে চালানো সম্ভব। তাঁদের মতে, ২৫ থেকে ৩০ মে. টন তুষ পোড়ালেই প্রায় ৫শ’ কিলোওয়াট বিদু্ৎ উৎপাদন সম্ভব। তাঁদের অটোরাইস মিলে প্রতিদিন ২শ’ মে. টন ধান ভাঙ্গানো হয়। ধানের তুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে তথা হাই প্রেসারের মাধ্যমে বয়লারে স্টিম তৈরি করে ধান সিদ্ধ করার পর যে স্টিম অবশিষ্ট থাকে সেটি দিয়ে টার্বাইন বিদু্ৎ পস্ন্যান্টে বিদু্ৎ উৎপাদন করা হয়। নাসিম উদ্দিন জানান, সবেমাত্র তাঁরা পরীৰামূলক এ টার্বাইন বিদু্ৎ পস্ন্যান্ট চালিয়েছেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তাঁরা পুরো উৎপাদনে যাবেন।
তাঁদের মতে, লো-প্রেসার বয়লারে শুধু ধান সিদ্ধ করা সম্ভব। কিন্তু টার্বাইন চালাতে হাইপ্রেসার বয়লার প্রয়োজন। অটোরাইস মিলে চাল উৎপাদনে শুধু বিদু্ৎ সমস্যা মোকাবেলায় কোটি টাকা ব্যয়ে এ টার্বাইন বিদু্যত পস্ন্যান্ট আনা হয়েছে বলে জানান তাঁরা। এটি পুরোদমে চালু হলে প্রতিমাসে তাঁদের গড়ে ৩ লাখ টাকার বিদু্যত বিল সাশ্রয় হবে।
নওগাঁয় রয়েছে ছোট বড় প্রায় দেড় হাজার ধানের চাতাল। এসব চাতালে প্রতিদিন প্রায় দেড় শ’ মেট্রিক টন ধানের তুষ উৎপাদিত হয় । এ তুষকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে নওগাঁর বিসিক শিল্পনগরীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘নাসিম ব্রাদার্স অটোরাইস মিল’ এই বিদু্ৎ উৎপাদন কাজে হাত দেয়। চীন ও জাপানের উন্নতমানের মেশিন ব্যবহার করে ওই মিলে উন্নতমানের মিনিকেট, নাজিরশাইল, চিনিগুঁড়া আতপ, ব্রি-আর-২৮ জাতের চাল উৎপাদন করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বাজারে তাঁদের মিলের চালের কদরও রয়েছে। সেই উৎকৃষ্টমানের চাল উৎপাদনে বিদু্ৎ সমস্যা যাতে কোন বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, সে কারণেই প্রথমে তাঁদের মিলের ধানের তুষ দিয়ে বিদু্ৎ উৎপাদনের এ উদ্যোগ নেন তাঁরা। নিজেদের মিলের তুষ দিয়ে বিদু্ৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ খুব কম পড়ছে বলে জানালেন মিল মালিক নাসিম উদ্দিন।
এ ব্যাপারে নওগাঁ বিদু্ৎ সরবরাহ কেন্দ্রের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফেরদৌস আলম জানান, তুষ পুড়িয়ে যে বয়লার স্টিম তৈরি হচ্ছে, তা হাইপ্রেসারে টার্বাইনের মোটর ঘুরিয়ে দিচ্ছে। সেই টার্বাইনের মোটর জেনারেটরের মোটর ঘুরিয়ে বিদু্ৎ উৎপাদন করছে। তাঁর মতে, ওই মিলের তুষ পুড়িয়েই নূ্যনতম ৪শ’ কিলোওয়াট বিদু্যত উৎপাদন করে নিজের মিল চালিয়েও পার্শ্ববর্তী ছোট বা মাঝারি কলকারখানায় বিদু্ৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কারণ ওই মিলের পাশের মিলগুলোতে ৪০ থেকে ৫০ কিলোওয়াট বিদু্ৎ লাগে। এ ধানের তুষ দিয়ে বিদু্যত উৎপাদন পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে পারলে দেশে বিদু্যত সঙ্কট মোকাবেলায় বড় অবদান রাখতে পারবে বলে আশা করছেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি অন্য অটোমিলের মালিকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মিল মালিক নাসিমউদ্দিন জানান, তুষ দ্বারা উৎপাদিত বিদু্যত পস্ন্যান্ট চালাতে পর্যাপ্ত ধান ভাঙ্গানো প্রয়োজন। কারণ প্রয়োজনীয় ধান না ভাঙ্গাতে পারলে চাহিদামতো তুষ মিলবে না। আর চাহিদামতো তুষ না পেলে বিদু্যত উৎপাদনও ব্যাহত হবে। সূত্র মতে, উত্তরবঙ্গে এ টার্বাইন বিদু্ৎ পস্ন্যান্ট দিনাজপুরের এক মিল মালিক প্রথম এনেছিলেন। দ্বিতীয়বারে আনলেন তিনি। তিনি আশাবাদী, এ টার্বাইন বিদু্যত পস্ন্যান্ট দিয়ে তিনি তাঁর নিজের মিলের বিদুৎ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত বিদু্যত তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানকেও সরবরাহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকারের আনত্মরিক পৃষ্ঠপোষকতাও আশা করছেন তিনি।