বৃহস্পতিবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » চাঙ্গা অর্থনীতির পুঁজি এখন ইন্টারনেট!
চাঙ্গা অর্থনীতির পুঁজি এখন ইন্টারনেট!
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের পর্যটন শহর কক্সবাজারে চলছে ইন্টারনেট বিশ্বকে আরও সুসম্প্রসারিত, জ্ঞাননির্ভর আর সমৃদ্ধ করার কৌশল তত্ত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। বিশ্বের কয়েকটি দেশের কর্তব্যক্তিরা এখানে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন। জানাচ্ছেন কি করে বাংলাদেশ আধুনিক ইন্টারনেট কৌশল প্রয়োগ করে ইন্টারনেটের সার্বিক সুফল জনমানুষের কাছে সহজ মাধমে পৌঁছে দেওয়া যায়।এবারের ২১তম সেনগ সম্মেলনের প্রথম তিন দিনে নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। এরপর ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় কারিগরি কর্শশালা। এতে দেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলীরা দিনের তিনটি সেশন মতবিনিময় করছেন। রপ্ত করছেন ইন্টারনেটের বহুমাত্রিক সুফল লুফে নেওয়ার কায়দা-কানুন আর সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার বিকল্প সব পথ।
ইউনিভার্সিটি অব অরিগনের নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ এবং খ্যাতনামা প্রশিক্ষক সিবাসতেইন বুটরিচ বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ অগ্রগতি করেছে। তবে ইন্টারনেটভিত্তিক নেটওয়ার্ক এবং ব্যান্ডউইথড ব্যবস্থাপনায় আরও সুকৌশলী হতে হবে।
এ ছাড়াও শিক্ষা এবং গবেষণাভিত্তিক কার্যক্রমে ইন্টারনেটকে সমৃক্ত করতে না পারলে প্রকৃত ইন্টারনেটের ব্যবহারিক সুফল নিশ্চিত হবে না। সাধারণ মানুষের কাছে সহজে এবং সুলভে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার নীতিমালা নিশ্চিত করে পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।
এদিকে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার এবং রিসোর্স সেন্টার প্রশিক্ষক অ্যান্ডি লিনটন জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় ছড়িয়ে দিতে হবে। ফলে ইন্টারনেটের সফল ব্যবহার নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে এ বিষয়ে অন্তহীন আগ্রহ আছে।
এ আগ্রহকে পূঁজি করেই ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় নতুন গতি আনতে হবে। যত বেশি মানুষ এ সেবাভুক্ত হবে দেশের অর্থনীত, রাজনীতি এবং শিক্ষা ততই গণবান্ধব হবে। একটি দেশের জন্য ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তৈরি চ্যালেঞ্জিং। তবে এটিই শক্তিশালী টুলস হিসেবে কাজ করতে।
কক্সবাজারে আসা নেটওয়ার্ক গবেষক এবং প্রকৌশলী ফিল রেগন্যাল্ড বলেন, ইন্টারনেট নেটওয়ার্ককে সাশ্রীয় দামে আর সর্বত্র পৌঁছে দিতে অব্যাহত প্রচেষ্টা করতে হবে। তা না হলে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার সুফল ভোগে পিছিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া নেটওয়ার্কেও সুফল পেতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করার প্রতি তাগিদ দেন এ চটপটে বিশেষজ্ঞ।
এদিকে সম্মেলনে আসা ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ (আইসক) ঢাকা চ্যাপ্টারের সভাপতি সৈয়দ ফয়সাল হাসান বলেন, দেশে ইন্টারনেটের সম্প্রসারণকে গতিশীল করতে সেনগ সম্মেলন ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞেরা নিজেদের জ্ঞান, লক্ষ্য এবং অভিজ্ঞতার আলোকে অংশগ্রহণকারীদের সমৃদ্ধ করে তোলেন।
ফলে ইন্টারনেট সোসাইট সমৃদ্ধ হয়। এ সমাজের সুদক্ষ নাগরিকের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। দেশের সব ধরনের উন্নয়নের সঙ্গে ইন্টারনেটকে সমৃক্ত করার সফল কৌশল পেতে বিখ্যাত বিশেষজ্ঞদের এ আগমন অগ্রণী বাংলাদেশের কথাই বলে। এ জন্য দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সক্রিয় উপস্থিতি এ প্রচেষ্টাকে নতুন সম্ভাবনা এনে দেবে বলে তিনি মনে করেন।
হ্যারিকেন ইলেকট্রনিকের মার্টিন লেভি ২০১৩ সালে ইন্টারনেটের আইপিভি(৬) সংস্করণ নিয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। ইন্টারনেট সংযোগের আধুনিক সম্প্রচার, গতি আর দাম কমিয়ে আনতে হলে ইন্টারনেট প্রটোকল ভারসন ৬ (আইপিভি) দ্রুত কার্যকর করতে তাগিদ দেন।
ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ বিশ্বে ইন্টারনেট একচেঞ্জ (আইএক্স) নতুন সম্ভাবনা। এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেট শুধু ওয়ান ওয়ে ইনফরমেশন না হয়ে রিয়েল ইন্টারনেট হয়ে উঠবে। এ কৌশলগত বিশ্বে সবাই আসবেন নিজের সব ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে।
২১তম সেনগের আয়োজক আইএসপিএবি সহ-সভাপতি ও ফাইবার অ্যাট হোমের সিইও সুমন আহমেদ সাবির বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি ছাড়াও মোট ১৫টি দেশের ইন্টারনেট এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞেরা সেনগে অংশ নিয়েছেন। দেশের ইন্টারনেট ভবিষ্যতকে আরও সুনিশ্চিত আর কারিগরি সমস্যামুক্ত এসব কৌশল বাস্তবে সুফল বয়ে আনবে।
ইন্টারনেটের গতিপ্রকৃতি এবং ভবিষ্যতের ইন্টারনেট কেমন হবে এ ভাবনাগুলোর উত্তর সুস্পষ্ট করতেই সেনগ আয়োজক করা হয়। প্রতি বছর এ সম্মেলনের দুটি আসর থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার ইন্টারনেটের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রয়োগ নিয়ে উন্মুক্ত তথ্যচিত্র আর মতবিনিময় করা হয়।
৯ দিনব্যাপী ২১তম সেনগ সম্মেলনে প্রতিদিনই এসব আলোচনাই ঘুরেফিরে সামনে আসছে। পরবর্তী দিনগুলোতেও বিখ্যাত কারিগরি বিশেষজ্ঞেরা সুনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট এবং অত্যাধুনিক ব্যবহারিক কৌশলতত্ত্বের তথ্যচিত্র দেশীয় ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক প্রকৌশলীদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
-সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম