বুধবার ● ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » খোলা কলম » হাতের মুঠোয় দুনিয়া দিদ্বিদিক ছুটতে হবে সাবধানে ‘ই’ যুগে নতুন প্রজন্ম
হাতের মুঠোয় দুনিয়া দিদ্বিদিক ছুটতে হবে সাবধানে ‘ই’ যুগে নতুন প্রজন্ম
৷৷সমুদ্র হক, বগুড়া ৷৷
কলির যুগ নয় এখন ‘ই’ যুগ। কে আর এখন দূরে থাকতে চায়, সবই কি বোর্ড, লেফট ক্লিক, রাইট ক্লিকের সঙ্গে যুক্ত। কর্পোরেট ব্যস্ততা তো আছেই, সঙ্গে মমত্ববোধ ভালবাসা মানুষে মানুষের মিলনবন্ধন সব কিছুর সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘ই’ অক্ষরটি। তবে এই ‘ই’কে নিয়ে দেখেশুনে পথ চলতে হবে নইলে বিপদ। কারণ এই ‘ই’ ভাল ও মন্দ দুই দেখায়। বর্তমান প্রজন্মের কাছে যা হাতের আঙ্গুলে ও মুঠোয় একেবারেই জলবৎতরলং (খুবই সহজ)। মধ্যবয়সীদের কাছে তা অনেকটা কঠিন। তারপরও ‘কঠিনেরে ভালবাসিলাম…’ বলে ‘ই’ (ইলেকট্রনিক) প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই হয়। তা না হলে উড়ে গিয়েই ছিটকে পড়তে হবে। সঙ্গে যখন ল্যাপটপ, নোট বুক, নেট বুক ও থ্রি জি (থার্ড জেনারেশন) সেল ফোন তখন আকাশ সাগর সাত সমুদ্র তের নদী পাড় সবই কাছে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে থ্রি জি এসেই গিয়েছে, আমাদের দেশেও এই এলো বলে। প্রজন্মের কাছে এখন সবই চেনা। ওরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। থ্রি জি বললেই বুঝে নেয় কি বলা হচ্ছে। এই জেনারেশনের কাছে ডেঙ্টপ ব্যাক ডেটেড, ল্যাপটপও পুরনো হয়ে গেছে। অতি সহজে বহন যোগ্য, বিদ্যুত বিহীন ব্যাকআপ মেলে ৭-৮ ঘণ্টা এমন নোট ও নেট বুকই স্বাচ্ছন্দ্যের। আপডেট কনফিগারেশনের কম্পিউটারে আরও কত দ্রুত পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় আনা যায় তার প্রতিযোগিতা। দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরতা তরুণী ফারহা নূর নওরীন বলল ‘একটি নোট বুক (ল্যাপটপ থেকেও ছোট কম্পিউটার) ও স্পিডি মডেম হলে একাডেমিক ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করার জন্য ওয়েবসাইটে গিয়ে অনেক তথ্য নেয়া যায়।’ স্কুলের মাধ্যমিক সত্মরে অধ্যয়নরতা কিশোরী পৃথ্বা হক বলল ‘লেখাপড়া ও সাধারণ জ্ঞানে দ্রম্নত এগোতে চাইলে ইন্টারনেট সাপোর্ট দরকার। তা না হলে এগিয়ে চলা কঠিন এবং এটাই রিয়েলিটি।’ এমন কি পাঁচ বছর বয়সের পেস্ন ক্লাসের শিক্ষাথর্ী প্রেরণাও আপডেট মোবাইল সেট নিয়ে দ্রম্নত সংযোগের সঙ্গে মাল্টি মিডিয়া ফাংশনে যেতে পারে। বর্তমান প্রজন্ম এই বয়সেই এগিয়েছে এবং গেস্নাবাল ভিলেজকে বাসত্মবতায় বুঝতে শিখেছে।
চারদিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে ওঠে- কর্পোরেট ব্যসত্মতার সঙ্গে ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন্স ও টেকনোলজির (আইসিটি) প্রচ- গতির কাল এখন, যাকে সংক্ষেপে কেউ বলে ‘ই’ কাল। গেস্নাবাল ভিলেজ দিয়ে যে যাত্রা শুরম্ন তা এখন হাইটেক গেস্নাবালে পরিণত। গতিকে মুঠোয় নিয়ে দিগ্বিগিক ছুটে শিখরে ওঠার এ যেন এক সমতার প্রতিযোগিতা। ইতিহাসের ডান দিকের পাতা দ্রম্নত ভরে উঠছে নতুন সব তথ্য নিয়ে, বাম দিকের পাতা যেন মস্নান। একটা সময় হাতে লেখা চিঠিই ছিল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। ১২০৬ সালে কুতুবউদ্দিন আইবেকের শাসনামলে প্রথম দিলস্নী থেকে বাংলা পর্যনত্ম চালু হয় ডাক বিভাগ। ব্রিটিশ শাসনামলে নতুন মাত্রায় ১৮৬৪ খ্রীস্টাব্দে রেলওয়ে ডাক, ১৮৮০ সালে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে টাকা প্রেরণ (মনি অর্ডার), ১৯০৯ সালে এঙ্প্রেস টেলিগ্রাম ও ১৯৩৩ সালে বিমান ডাক চালু হয়। দূর যোগাযোগের ইতিহাসে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যামুয়েল মুরস ইংরেজী ২৬ অক্ষরকে টরেটক্কা শব্দ দিয়ে ১৮৪৪ সালে প্রথম ম্যাসেজ পাঠান। যার নাম হয় টেলিগ্রাম। এই টরেটক্কাতেই ১৮৫৩ সালে দূরের যোগাযোগ চালু হয় ইউরোপ আমেরিকায়। বিশ্বখ্যাত বাঙ্গালী চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায় তাঁর ‘পথের পাঁচালী’ ছবিতে টেলিগ্রামের পোল ধরে রেখেছেন। যে দৃশ্যে টেলিগ্রামের পোলে অপু ও দুগর্া কান পেতে ট্রেনের শোঁ শোঁ দূর শব্দ শুনছে। টেলিগ্রাম আজ ডিলিট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন সংস্থা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন টেলিগ্রাফ কোম্পানি পৃথিবী থেকে চিরতরে টরেটক্কাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দিয়েছে ২ হাজার ৬ সালের ২৭ জানুয়ারি। কালের আবর্তে টেলিগ্রামের মতো হাতে লেখা চিঠিও লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একটা সময় প্রিয়জনের হাতে লেখা চিঠি পেলে মনটা পরম মমতায় ভরে প্রতিবার পাঠে প্রিয়জনের মুখ ভেসে উঠতো। প্রণয়ের চিঠির গভীরতা তো আরও বেশি। ওই চিঠিই হতো মধুময় প্রণয়ের কাব্য। এখন অফিসিয়াল চিঠি বেশি। ‘ই’ (ইলেকট্রনিক) মেইল আর ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছে যায় বিশ্বের যে কোন স্থানে। আজকাল ইংরেজী অক্ষর দিয়ে বাংলাও লেখা হচ্ছে। বন্ধুত্বও এসেছে যন্ত্রের মধ্যে। জুকারবার্গ আবিষ্কৃত ফেসবুক তরম্নণ তরম্নণীদের কাছে এতটাই প্রিয় যে প্রায় প্রতিদিনই বসে ইন্টারনেটে। একদার পেন ফ্রেন্ড হয়েছে ‘ই’ ফ্রেন্ড। ছুটে যাচ্ছে গোটা বিশ্বের বন্ধুদের কাছে কয়েক সেকেন্ডে। থ্রি জি টেকনোলজিতে নোট বুকের কাজও করে দেবে সেল (মোবাইল) ফোনে। সব কিছুই এখন কাছে। ‘ই’ অগ্রগতির এই ধারায় এ্যাবিউজ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এই বিষয়ে সাইকোলজির এক অধ্যাপক বললেন, বর্তমানে ‘ই’ যুগের আবিষ্কারে প্রজন্মের নাগালে ভাল মন্দ সবই আছে। ইন্দ্রিয়গুলো প্রতিটি স্টেপে নাড়া দেবে, হাতছানি দেবে। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ব্যবহারে সতর্ক না হলে ‘ডিরেইলড’ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। আপনার সনত্মান কোন পথে যাচ্ছে তা মনিটরিং করে ভুল পথে গেলে তা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবকদের। এখন মোবাইলের মধ্যে চলমান ও স্থির ক্যামেরা আছে। কম্পিউটারের সঙ্গে আছে ওয়েবক্যাম। কোনভাবে এমন কি কৌতুহলী হয়েও এসব ক্যামেরার ‘ইম্প্রোপার’ ইউজ হলে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। প্রবীণেরা অনেকে ‘ই’ যুগের এই কালকে কলির কাল বলেন। ‘ই’ অগ্রগতির ধারা এখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রজন্মের চলার এই পথ যাতে কণ্টকাকীর্ণ না হয়ে কুসুমাসত্মীর্ণ হয়ে ওঠে তেমন পথ সৃষ্টি করে দেয়ার দায়িত্বও এখন সকলের। আমাদের সন্তানেরা যেন ‘ই’র সঠিক পথেই পা বাড়ায় ভুল পথে নয়_ এই প্রত্যাশা।