সোমবার ● ১৪ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » বিশ্বব্যাপী পিসি বাজার ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে
বিশ্বব্যাপী পিসি বাজার ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে
২০১২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী পিসি (ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ) বিক্রি হয়েছে ৮ কোটি ৯৮ লাখ ইউনিট, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কম। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসি জানায়, এ হিসাবে গত বছর পিসি বিক্রি ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। খবর ইউএসএ টুডের।
ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের প্রতি ভোক্তাদের অধিক আগ্রহের কারণে পিসির চাহিদা কমছে বলে মনে করে আইডিসি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড কোয়ার্টারলি পিসি ট্র্যাকারের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি বলে, অব্যাহত অর্থনৈতিক মন্দা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী যন্ত্রের কারণে পিসি বাজার ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে।
সর্বশেষ প্রান্তিকে পিসি সরবরাহ ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমতে পারে বলে এর আগে জানিয়েছিল আইডিসি। তবে বাজার পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাসের চেয়েও খারাপ ছিল। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকেই পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ছুটির সময়ে পিসি বাজারে সরবরাহ কমে যায়। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী পিসি সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ২৪ লাখ ইউনিট, যা ২০১১ সালের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ কম। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও পিসি সরবরাহ কমে যায় সাড়ে ৪ শতাংশ। সবমিলিয়ে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পিসি বিক্রি কমেছে ৭ শতাংশ।
চতুর্থ প্রান্তিকে বিশ্বের শীর্ষ কম্পিউটার নির্মাতা এইচপির সরবরাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৬ শতাংশ কমে যায়। অবশ্য এ সময় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লেনোভোর পিসি সরবরাহ বাড়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সরবরাহ সবচেয়ে বেশি কমেছে ডেলের। ২০১১ সালের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির এ পণ্য বিক্রি কমেছে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী এসারের বিক্রি এ সময় কমেছে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য আসুস এ সময় তাদের পিসি সরবরাহ ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়।
শুধু অর্থনৈতিক সংকটই নয়, কোম্পানিগুলোর পরিবর্তিত মনোযোগও পিসি সরবরাহ কমার পেছনে কাজ করছে। বেশির ভাগ পিসি নির্মাতা কোম্পানিই এখন ট্যাবলেট, আল্ট্রাবুক, স্মার্টফোনের মতো বহনযোগ্য যন্ত্র তৈরিতে বেশি মনোযোগী। এসব যন্ত্রে ব্যবহারোপযোগী অ্যাপ এবং অন্যান্য সফটওয়্যার তৈরিতেই কোম্পানিগুলোর অর্থ ও বিপণন কৌশল বেশি কাজ করছে।
উইন্ডোজ৮-এর মতো অপারেটিং সিস্টেমও অবশ্য পিসি বাজারে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রেখেছে। এ অপারেটিং সিস্টেমটির পদ্ধতির সঙ্গে টাচস্ক্রিন ধরনের যন্ত্রই বেশি মানানসই। ফলে পিসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন এ অপারেটিং সিস্টেমের উপযোগী যন্ত্র তৈরিতেই বেশি আগ্রহী। আইডিসি জানায়, উইন্ডোজ পিসিতে স্পর্শনির্ভর পদ্ধতি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি উপযোগী অ্যাপলিকেশনের অভাবেও পিসি বাজার নিয়ে বেশ সংশয়ে আছেন উত্পাদনকারীরা।
প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষক জে চৌ বলেন, ‘তৃতীয় প্রান্তিকে উইন্ডোজ৭নির্ভর কম্পিউটারের মজুদ শেষ করায় মনোযোগ ছিল সরবরাহকারীদের। তবে মজুদ শেষ করলেও উইন্ডোজ৮-এর জন্য ফাঁকা মাঠ তৈরিতে তেমন সফল হননি তারা। স্পর্শনির্ভর পিসি তৈরি করতে গিয়ে আরো নিরাপদ, বিশ্বস্ত ও কার্যকর পিসি আনার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি আল্ট্রাবুকের দাম কমার পাশাপাশি ভোক্তারা উইন্ডোজ৮-এর প্রতি আগ্রহী হয়, তাহলে আগামী বছর পিসির বাজার চাঙ্গা হতে পারে।’
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পুরনো কম্পিউটার বদল করায় পিসি বিক্রির মন্দা একটু কম হয়েছে। সেসঙ্গে উইন্ডোজ৮-এর প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ কম হলেও পিসির বিক্রি সামান্য বাড়িয়েছে। তবে আইডিসি জানায়, সীমিত পণ্য বৈচিত্র্য, বিশেষ করে টাচস্ক্রিন পিসিস্বল্পতার কারণে বিক্রি একটু কম ছিল।
এদিকে অন্যান্য লাভজনক ব্যবসায় মনোযোগ দেয়ায় পিসির বাজারে দখল হারাচ্ছে ডেল। বর্তমানে এ বাজারে কোম্পানিটির দখল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এইচপির বাজার দখলের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আইডিসির মতে, উইন্ডোজ৮ নিয়ে আগ্রাসী বিপণন চালানোর কারণেই এখন পর্যন্ত বাজারের শীর্ষ স্থান নিজেদের কব্জায় রাখতে পেরেছে কোম্পানিটি।