বৃহস্পতিবার ● ১০ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » যুক্তরাজ্যে টুইটারের মুনাফা মাত্র ১৬ হাজার পাউন্ড!
যুক্তরাজ্যে টুইটারের মুনাফা মাত্র ১৬ হাজার পাউন্ড!
২০১২ অর্থবছরে টুইটার যুক্তরাজ্যে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার পাউন্ড মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে। আগামী বছর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা সাইটটির এ স্বল্প মুনাফায় আশ্চর্য অনেকেই। খবর গার্ডিয়ানের।
যুক্তরাজ্যে প্রথম সাত মাসের ব্যবসা নিয়ে প্রকাশ করা সংক্ষিপ্ত আর্থিক প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আলি রোঘানি। প্রধান নির্বাহী ডিক কস্টোলো ও সাইটটির গ্রুপ পরামর্শক অ্যালেক্স ম্যাকগিলিভরের স্বাক্ষর অবশ্য ওই প্রতিবেদনে ছিল না।
যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী আয় ৬৫ লাখ, ব্যালান্স শিটের আকার ৩২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের কম এবং কর্মীসংখ্যা ৫০-এর নিচে হলে সংক্ষিপ্ত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো। যুক্তরাজ্যের বাজারে ব্রিটিশ আইনি প্রতিষ্ঠান বেকার অ্যান্ড ম্যাকেঞ্জির নামে কার্যক্রম চালায় টুইটার।
টুইটারের যুক্তরাজ্য শাখার মূল প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইরিশভিত্তিক টুইটার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি। কোম্পানিটি ব্রিটিশ আইনের আওতায় পড়ে না; আবার এর মূল মালিকানা ডেলাওয়ারে নিবন্ধিত টুইটার ইনকরপোরেটেডের হাতে।
অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানই উচ্চ কর এড়ানোর জন্য এ ধরনের আর্থিক অবকাঠামো তৈরি করে। এসবের মধ্যে রয়েছে গুগল, অ্যামাজন, ই-বের মতো প্রতিষ্ঠান। ধারণা করা হচ্ছে, টুইটারও সম্ভবত একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী বছর ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শেয়ারবাজারে ঢুকলে টুইটার কোম্পানির মূল্য হতে পারে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার (৬৮০ কোটি পাউন্ড)।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারে নিবন্ধিত এ কোম্পানি খুব কমই আর্থিক বিবরণ প্রকাশ করে থাকে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইমার্কেটিয়ারের অনুমান, ২০১২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপন থেকে ২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার রাজস্ব পেয়েছে কোম্পানিটি। চলতি বছর এ আয় হতে পারে সাড়ে ৫৪ কোটি ডলার; যা ২০১৪ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ৮০ কোটি ৭ লাখ ডলারের ঘরে।
ইমার্কেটিয়ারের গবেষণায় জানানো হয়, টুইটার ব্যবহারকারীদের মাত্র ১০-২০ শতাংশ মার্কিন হলেও কোম্পানিটির ২০১৩ সালের বিজ্ঞাপন আয়ের ৮৩ শতাংশই আসবে যুক্তরাষ্ট্রের স্থিতিশীল বাজার থেকে। বিশ্বব্যাপী টুইটারের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই প্রথম টুইটারে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু। পরবর্তী বছরের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের বাজারে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন শুরু করে টুইটার। অবশ্য টুইটারের জন্য ওই সময় যুক্তরাজ্য ছিল একেবারেই নতুন বাজার। মধ্য লন্ডনে টুইটডেক নামের একটি ফিল্টারিং সাইট কিনে অল্প কয়েকজন কর্মী দিয়ে কাজ শুরু করে টুইটার। এসময় যুক্তরাজ্যের বাজারে টুইটারে বিজ্ঞাপন দেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল স্কাই, বিটি, ইউরোস্টার, ইলেকট্রনিক গেমস ও প্যারামাউন্ট পিকচারস ইউকে।
বেশি অর্থ আয় করেও কর এড়ানোর এ প্রবণতায় বর্তমানে ইউরোপের অনেক দেশই এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর ক্ষিপ্ত। বিশেষ করে ইউরোপ এখন অর্থমন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সমালোচনায় এখন মুখর রাজনীতিবিদরা। তবে এ বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই এসব প্রতিষ্ঠানের। তাদের ভাষ্য, আইন মেনেই তারা কর দিচ্ছে। তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানও উপকৃত হচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে গুগলের জটিল করপোরেট অবকাঠামোর পক্ষে সাফাই গান এর নির্বাহী চেয়ারম্যান এরিক শিমিট। গুগল যুক্তরাজ্য শাখা চলে আইরিশ একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির অধীনে। আবার ওই কোম্পানিটির মালিক ডেলাওয়ারে নিবন্ধিত গুগল ইনকরপোরেটেড। এ ধরনের অবকাঠামো ব্যবহার করে বারমুডার একটি তেল কোম্পানিতে ৯৮০ কোটি ডলার রাজস্ব সরিয়ে নেয় গুগল। এতে যুক্তরাজ্য সরকারকে বিশাল অঙ্কের কর দেয়া থেকে বেঁচে যায় বিশ্বের শীর্ষ ইন্টারনেটসেবা প্রতিষ্ঠানটি। শিমিট বলেন, ‘এটাকেই বলে ধনতন্ত্র। আমরা ধনতান্ত্রিক হিসেবে গর্বিত। আমার এনিয়ে কোনো দ্বিধা নেই।’
টুইটারের মুখপাত্র অবশ্য তাদের যুক্তরাজ্য শাখার আয় নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য করেননি। অবশ্য এটা জানান যে, ২০১১ সালে যুক্তরাজ্য শাখার আয় দেশটিতে টুইটারের ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।