মঙ্গলবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি পড়াশোনা » ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইনে কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত
ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইনে কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত
ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা পিসি, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার থেকেই ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন। আগামী বছরের শুরুতেই বিভিন্ন কোর্সে পাঠদান শুরু হবে। খবর বিবিসি অনলাইনের।
প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করবে ফিউচার লার্ন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করবে ওপেন ইউনিভার্সিটি। এ প্রকল্পে অংশীদার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে- ওপেন ইউনিভার্সিটি, লন্ডনের কিংস কলেজ, ব্রিস্টল, এক্সটার, ইস্ট অ্যাঙ্গিলা, লিডস, ল্যাঙ্কাস্টার, সাউদাম্পটন, কার্ডিফ, বার্মিংহাম ও সেন্ট অ্যান্ড্রুস। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড উইলেট মনে করেন, ‘এ প্রকল্প প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।’
অনলাইনে যেসব বিষয়ে পাঠদান করা হবে, এতে নিবন্ধিত হতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মার্টিন বিন জানান, অনলাইনে পাঠদান চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। তার মতে, প্রকল্প নিয়ে ব্যর্থতারও যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডন নাটবিম বলেন, এ প্রকল্পে অংশীদার হওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হবে। তিনি ধারণা করছেন, সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় ১৫-২০টি বিষয়ে কোর্স চালু করবে। এগুলো সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা অন্যান্য কোর্সের জন্য নিবন্ধিত হতে পারবেন।
বিশ্লেষকরা জানান, অনলাইনে কোর্স চালুর ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রয়েছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এগুলো পরিচিতি পেয়েছে ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্সেস বা এমওওসি নামে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে হারর্ভার্ড, স্ট্যামফোর্ড ও এমআইটির মতো বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। এসব কোর্সে শিক্ষার্থীদের ব্যয়ের পরিমাণ প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম। এ ব্যবস্থায় অনলাইনে ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। এ ছাড়া রয়েছে ইন্টারঅ্যাকটিভ অনুশীলন ও স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা পদ্ধতি।
এখন ফিউচার লার্নের প্রকল্পটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি কেবল সমন্বয়কের কাজ করবে। মূল ব্যবস্থাপনায় থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাঠ্যসূচি, শিক্ষার মান, স্বীকৃতি, ফি ও পরীক্ষার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক সাইট থাকবে। এর মাধ্যমে তারা ক্যাম্পাসের আবহ পাবে। পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে বহনযোগ্য ডিভাইসের উপযোগী করে। ট্যাবলেট কম্পিউটার ও সেলফোনের উপযোগী করে তৈরি করা হবে এসব।
বিশেষজ্ঞরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রথম পর্যায়ে বিনামূল্যে কোর্স চালু করে। তবে সনদ প্রদান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে ফি গ্রহণ করে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, ব্রিটিশ প্রকল্পটি চালু হলে, ইন্টারনেটের ব্যবহারও বাড়বে।
ওপেন ইউনিভার্সিটির মার্টিন বিন মনে করেন, এ পদ্ধতিতে অসংখ্য শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া এবং সনদ দেয়ার বিষয়টি কঠিন হবে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আরও বাধা রয়েছে। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার খরচের তুলনায় অনলাইনের খরচ কম হবে। এতে দুই পদ্ধতির ভারসাম্য বজায় রাখা নিয়েও সমস্যা দেখা দেবে।
এ প্রকল্প নিয়ে দারুণ আশাবাদী বিশ্ববিদ্যালয় মন্ত্রী ডেভিড উইলেট। তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে শিক্ষদানে নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাজ্য। এর মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবো। বিকাশমান অর্থনীতির দেশেও অনলাইনে শিক্ষার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ব্রাজিল, ভারত ও চীনের মতো দেশ এ বিষয়ে অনেক বেশি আগ্রহী।’ এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনলাইনের অর্ডার পাওয়া সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দারুণ সুযোগ অপেক্ষা করছে।