বৃহস্পতিবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » জমজমাট আয়োজনে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২ শুরু
জমজমাট আয়োজনে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২ শুরু
শুরু হলো দেশের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি উৎসব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২। গতকাল বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ডিজিটালী ল্যাপটপে ক্লিক করে উদ্বোধন করেন প্রযুক্তি এই সম্মেলনের । ‘সমৃদ্ধির জন্য জ্ঞান’ স্লোগানে শুরু হওয়ার হওয়া ৩ দিনের এ আয়োজন ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এই আয়োজন অনেক বড় ভুমিকা পালন করবে। ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাসে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আয়োজন সরকারের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচনে জয় লাভ করা পর সেই লক্ষে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। আমারা সেই লক্ষে বিভিন্ন পক্ষপেদ গ্রহন করছি। সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য দেশকে ডিজিটাল হিসাবে গড়ে তোলার বিকল্প নাই। দেশের প্রতিটি মানুষের হাতের নাগালে ডিজিটাল সেবা পৌছে দিতে হবে বলে জানান কৃষি মন্ত্রী।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো জানান, আমার প্রথম বার যখন সরকার গঠন করি, তখন প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলাম। তারই ধারাবহিকতায় ১৯৯৬-২০০১ দেশে প্রথম বারের মতো আমাদের সরকার ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল ও ৪টি ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি।
শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তির অনেক উন্নয়ণ করা হয়। আমাদের সরকার ডিজিটাল ক্লাস রুম, ই-বুক, কম্পিউটার শিক্ষাকে পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্তকরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। দেশের প্রতিটি ইউনিয়ান পরিষদে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা আমাদের সরকারে আমলে উল্লেখ্য গঠনা বলে জানান কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
অনুষ্ঠঅনে বিশেষ অতিথি আন্তর্জাতিক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় বলেন, সারা দেশে আগামী এক বছরের মধ্যে থ্রিজি সেবা পৌছে দেওয়া হবে। দেশে প্রতিবছর ৭ হাজার আইটি প্রকৌশলী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড দেশের তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা।
অনুষ্ঠানে সমাপনী সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মাদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে। সবার আগে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রাণালয় ডিজিটাল হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব এবং এটুআইয়ের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম খান এ আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভৌগলিক অবস্থান, প্রশাসন ব্যবস্থা ও সুশাসন নিশ্চয় করতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতের নাগালে প্রযুক্তি সেবা পৌছে দিতে চাই।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন গুগলের দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুলিয়ান পারসাউথের ধারনকৃত ভিডিওতে তিনি শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি তার ভিডিও বক্তব্যে বলেন, গুগল তাদের কার্যক্রম খুব তাড়াতাড়ি চালু করা হবে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মেলা উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীদের জন্য মেলা প্রাঙ্গণ খুলে দেওয়া হয়।
এ আয়োজনে দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞ এবং তরুণ, শিক্ষার্থী ও আইসিটি প্রফেশনালদের মধ্যে একটি নিবিড় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে রয়েছে সেমিনার, সম্মেলন ও কর্মশালার আয়োজন। এছাড়া অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে থাকছে উদ্যোক্তা সম্মেলন, সার্টিফিকেশন কোর্স, উদ্যোক্তা মেলা, তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর নতুন পণ্য বা সেবা চালুর ঘোষণা দেয়া প্রভৃতি। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে থাকছে ‘ডিজিটাল এন্টারপ্রেনার কনফারেন্স’। এতে এক হাজারের বেশি উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন। এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্ভাবন, পরিচর্যা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য উপস্থিত থাকবেন দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোগের কর্ণধার ও বিশেষজ্ঞরা।
আজ (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হবে ক্লাউড ক্যাম্প। এতে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের নানাদিক নিয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয় আলোচনা করা হবে। একই দিন দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের পথ নির্দেশনা, উৎসাহ ও দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে ফ্রিল্যান্সিং সম্মেলন।
দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের সাথে এই সম্মেলনে যোগ দিবেন আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও ফ্রিল্যান্সিং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ও প্রধানরা। এছাড়াও টেক ব্যাক দ্য টেক, মিট দ্য লিডারস, চিলড্রেন্স ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে।
তিন দিন ব্যাপী প্রদর্শনীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর শতাধিক সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নানা প্রকল্প প্রদর্শন করবে। মেলায় দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত নানা প্রকল্প, রোবট ও দেশীয় গেমস প্রদর্শিত হবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১২ এর এক্সপেরিয়েন্স জোনে। এক্সপেরিয়েন্স জোনে আরও থাকছে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ইন্টারনেট সেন্টার ও হাইটেক এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার। সেখান থেকে দর্শনার্থীরা হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এ আয়োজনের পার্টনার হিসেবে রয়েছে সিটিও ফোরাম, ক্লাউড ক্যাম্প, এপিসি ও বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ)। এছাড়া সহযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিফোন অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে এটিএন নিউজ এবং একাত্তর।
আন্তর্জাতিক এ আয়োজনে বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালার বক্তা হিসাবে দেশী বিদেশী প্রায় ১৩০ জন অংশ নিচ্ছেন। প্রায় ৬০টি বেসরকারি, ২৭টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আন্তর্জাতিক ষ্টল মেলা অংশগ্রহন করছে।