মঙ্গলবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি পড়াশোনা » ক্লাউডের মডেল
ক্লাউডের মডেল
ক্লাউড কী সেবা দিচ্ছে, তার ভিত্তিতে ক্লাউডকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়
Infrastructure-as-a-Service (IaaS) বা অবকাঠামোগত সেবা
Platform-as-a-Service (PaaS) বা প্ল্যাটফর্মভিত্তিক সেবা
Software-as-a-Servoce (SaaS) বা সফটওয়ার সেবা
শুরুতেই ধরা যাক, ক্লাউড ডেটা সেন্টারে কী থাকে। ওখানে থাকে হাজার হাজার সার্ভার, যারা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত। সাধারণত প্রতিটি সার্ভার চলে বিশেষ ধরণের অপারেটিং সিস্টেমে। এই অপারেটিং সিস্টেমের উপরে ভার্চুয়াল মেশিন লেয়্যরে একাধিক ভার্চুয়াল মেশিন প্রতি সার্ভারে চালানো যায়। (ভার্চুয়াল মেশিনের ব্যাপারটা অনেকটা এক কুমিরের ছানাকে ৭ বার দেখানোর মতো। একই সার্ভার একাধিক ক্লায়েন্টের কাছে একই সাথে ভাড়া দেয়া যায়, কারণ সবাই একই মুহূর্তে কাজ করেনা, কাজেই সার্ভারের সব ক্ষমতা ভাগ করে দেয়া যায়। প্রত্যেক ক্লায়েন্টকে দেখানো হয় একটা ভার্চুয়াল মেশিন, ক্লায়েন্ট ভাবে সে একটা মেশিন একাই ব্যবহার করছে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ঐ সার্ভারের সব ক্ষমতা/রিসোর্সকে ভাগাভাগি করে নেয় এই ভার্চুয়াল মেশিন গুলা)।
ক্লাউড ডেটা সেন্টারের এই সার্ভারকে উপরের ৩ উপায়ের যেকোনো মডেলে ভোক্তাদের কাছে পৌছানো যায়।
চলুন দেখা যাক কোন মডেলে কী ভাড়া দেয়া হয় …
IaaS: Infrastructure-as-a-Service
এখানে ভাড়া দেয়া হয় অবকাঠামো। মানে সার্ভারের উপরে যে ভার্চুয়াল মেশিন চালানো হয়, সেগুলাই ক্লায়েন্টরা ভাড়া নেয়। সেই মেশিনে ক্লায়েন্ট নিজের ইচ্ছা মতো সফটওয়ার বসাতে পারে। আমাজন ইলাস্টিক কম্পিউট ক্লাউড (EC2) এইটার উদাহরণ। EC2তে ডেটাসেন্টারের প্রতিসার্ভারে ১ থেকে ৮টি ভার্চুয়াল মেশিন চলে, ক্লায়েন্টরা এইগুলা ভাড়া নেন। ভার্চুয়াল মেশিনে নিজের ইচ্ছা মতো উইন্ডোজ বা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বসানো চলে। ব্যাপারটা অনেকটা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটা পুরা কম্পিউটার দূর থেকে চালানোর মতো। সফটওয়ার কি বসানো হবে, অথবা কীভাবে কাজ চালানো হবে, কম্পিউটারগুলা যোগাযোগ করবে নিজেদের মধ্যে, সব কিছু ইউজার নিজের ইচ্ছা মত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। (উপরের আক্কাস বাবুর্চির গল্পের প্রথম উদাহরণের মতো)।
সুবিধা হলো, সবকিছু ইউজার নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আর অসুবিধা হলো, ইউজারকে খেটে খাওয়া লাগে, সবকিছুর ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হয়।
PaaS: Platform-as-a-Service
এখানে সরাসরি ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া না দিয়ে ভাড়া দেয়া হয় প্ল্যাটফর্ম, যার উপরে এপ্লিকেশন তৈরী করতে পারেন ইউজারেরা। ক্লাউড প্রোভাইডার এখানে ভার্চুয়াল মেশিনগুলার উপরে আরেকটা লেয়ার যোগ করেন। ইউজারেরা এই প্ল্যাটফর্ম লেয়ারের নানা সার্ভিস কনফিগার করতে পারেন ও ব্যবহার করতে পারেন Application Programming Interface ব্যবহার করে। গুগলের অ্যাপএঞ্জিন এইটার একটা উদাহরণ। আপনি এই সার্ভিস ব্যবহার করলে গুগল তাদের এপিআই ব্যবহার করতে দিবে আপনাকে, সেটার সুবিধা নিয়ে আপনি অ্যাপ্লিকেশন বানাতে পারবেন। এই অ্যাপ্লিকেশন চলবে গুগলের ক্লাউডে। সুবিধা হলো তলায় ক্লাউড কীভাবে চলছে আপনার মাথা ঘামাতে হবে না। আর অসুবিধা হলো IaaS এর মতো সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকছেনা, গুগল যা ভালো বুঝে করবে, তাই আপনাকে ব্যবহার করতে হবে।
SaaS: Software-as-a-Service
সফটওয়ার এজ এ সার্ভিস হলো ক্লাউডভিত্তিক এমন একটা সেবা, যেখানে ইউজারেরা ক্লাউডের উপরে চলছে এমন সফটওয়ার ব্যবহার করছে। উদাহরণ হিসাবে Google Docs এর কথাই ধরা যাক। গুগল ডক দিয়ে মাইক্রোসফ্ট অফিসের প্রায় সব কাজই করা যায় (ডকুমেন্ট, স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন), কিন্তু সেটা আপনি করছে ইন্টারনেটে, ওয়েব ব্রাউজারে চলছে গুগল ডক। গুগল এই অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ারটি আপনার কাছে পৌছে দিচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। সফটওয়ারটি চলছে গুগলের ক্লাউডের উপরে।
এতে সুবিধা হল, ইউজারদের কিছুই জানার দরকার নাই। তাদের হাতে রেডিমেইড সফটওয়ার পৌছে যাচ্ছে। সফটওয়ার কোথায় চলছে তা গুগলের মাথাব্যথা। (অনেকটা উপরের উদাহরণের নজরুল মিয়ার গায়ে হলুদের প্যাকেজের মতো)।
-
তো, এই হচ্ছে ক্লাউডের নানা মডেল। আপনার চাহিদা কী রকম, তার উপরে নির্ভর করছে কোন মডেলে ক্লাউডের সুবিধাগুলো আপনি পেতে পারেন। একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি - ধরা যাক বাংলাদেশের ১ লাখ দোকানে ক্যাশ প্রসেসিং সফটওয়ার লাগে (বেচাকেনা, ইন্ভেন্টরি)। দোকানদারের পক্ষে সফ্টওয়ার কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ এইসব অত্যন্ত ঝামেলার ব্যাপার। এই জায়গায় SaaS মডেলে ক্লাউডভিত্তিক ব্যবসা করা যায়। ক্লাউডের উপরে চলে এমনভাবে এই বেচাকেনার সফটওয়ার বানিয়ে স্থানীয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেশের সর্বত্র সার্ভিস দেয়া সম্ভব। সার্ভিসের জন্য মাসে মাসে দোকানপ্রতিক কয়েকশো করে টাকা ভাড়া নিলেই মাসে কয়েক কোটি টাকা রেভিনিউ আসবে, আর দোকানদারকেও সফটওয়ার কেনার ঝক্কি ঝামেলায় যেতে হবে না।
- এস এম জুবায়ের