মঙ্গলবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি পড়াশোনা » ক্লাউডের ব্যবসায়িক সুবিধা
ক্লাউডের ব্যবসায়িক সুবিধা
ক্লাউড ব্যবহার করে নানা রকমের অনলাইন সার্ভিসে কী কী সুবিধা হতে পারে? শুরুতেই দেখা যাক ক্লাউডের ইউজার বা ভোক্তাদের কথা।১) ক্লাউড ব্যবহার করে অপারেটিং খরচ (Operating cost) যথেষ্ট পরিমাণ কমানো সম্ভব
একটা হিসাব করা যাক। ধরা যাক, আপনার কোম্পানিতে ৫টা কম্পিউটারের দরকার হয় নানা রকমের হেভিওয়েট এপ্লিকেশন প্রোগ্রাম চালাতে। একেকটা এরকম মাল্টিকোর কম্পিউটারের দাম ধরা যাক ৬০,০০০ টাকা। (হিসাবটা বিদেশে করলে দাম আরো বাড়বে, কারণ সেখানে ব্র্যান্ডএর কম্পিউটারের দাম হবে ২০০০ ডলার বা ১৬০,০০০ টাকার মতো।) সেই হিসাবে ৫টা কম্পিউটারের দাম ৩ লাখ হতে ৮ লাখ টাকার মতো।
এই কম্পিউটারগুলা আপনার কর্মীরা দিনে ৮ ঘণ্টা চালায়। ধরা যাক, কম্পিউটারগুলার আয়ু ২ বছর, কারণ ২ বছর পরে এগুলা আপগ্রেড করতে হবে। প্রতি বছর মেরামতে খরচ পড়ে ধরাযাক ৫,০০০ টাকা, মোট ৩০ হাজার টাকা।
সপ্তাহে ৫ দিন করে বছরে ৫২ সপ্তাহে ধরা যাক ২৬০ দিন কম্পিউটার গুলা চলে, মোট তাহলে ২ বছরে আপনার মোট কর্মঘণ্টা হলো ১৩,০০০ ঘণ্টা। আর খরচ হলো শুরুর ৩ লাখ + ৬০ হাজার, মোট ৩৬০,০০০টাকা। (এটা মিনিমাম)।
এখন দেখা যাক, ক্লাউডে খরচ কীরকম। আমাজন ডট কমের ক্লাউডে m1.medium মেশিন ভাড়া হলো $0.165/ঘণ্টা। এই হিসাবে ১৩,০০০ ঘণ্টার মোট খরচ হলো ১,৭১,৬০০ টাকা মাত্র। অর্থাৎ আপনার লোকাল মেশিন ব্যবহারের খরচের অর্ধেক। তার উপরে সুবিধাগুলা দেখুন, পাওয়ারফুল মেশিন চালাবার জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ বা মেশিন রুম ঠান্ডা রাখার দরকার নাই। আপনার অফিসে খুব লো-কনফিগারেশনের কিছু মেশিন রাখলেই হবে আর থাকতে হবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট। অফিসের এই লো-পাওয়ার কম্পিউটার গুলা দিয়ে ক্লাউডের ভার্চুয়াল মেশিনগুলোকে এক্সেস করতে পারবেন। যেহেতু মেশিনগুলা আমাজনের সার্ভারে, তাই সেগুলার মেইন্টেনান্সের ঝামেলা নাই, খরচও নাই।
তার উপরে আরো সুবিধা আছে। ঈদের ছুটিতে অফিস বন্ধ? ব্য্স, ক্লাউডে তো নো-ইউজ-নো-পে মডেল। ফলে অফিস বন্ধ, মানে ক্লাউডের মেশিনগুলা লাগছেনা, ফলে পয়সাও দিতে হবে না। কিন্তু অফিসে মেশিন কিনলে সেগুলার পেছনে তো শুরুতেই পয়সা দিয়ে ফেলেছেন, সেটা তো আর ফেরত আসবেনা।
২) ক্লাউড ব্যবহার করে স্টার্টাপ কস্ট বা প্রারম্ভিক খরচ কমানো যায়
উপরের উদাহরণেই ধরুন, আপনার অফিসে শুরুতেই আপনাকে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে বসতে হচ্ছে কম্পিউটার কেনার কাজে। অথচ ক্লাউড ব্যবহার করলে আপনার এক বারে এতোগুলো টাকা বসিয়ে রাখতে হবে না, বরং মাসে মাসে ভাড়া দিবেন মাত্র। ব্যবসার অবস্থা কখনো খারাপ হয়ে গেলে হাতি পোষার মতো দামি কম্পিউটার নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকার দরকার নাই, বরং আমাজনের ক্লাউড কম ব্যবহার করবেন, ভাড়াও কম দিবেন, সহজ হিসাব।
৩) ছোট ও প্রাথমিক উদ্যোক্তাদের পোয়া বারো!
ধরা যাক, অল্প বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন। বাবার জমা টাকার কিছুটা, মায়ের গয়না বেচা টাকা, সব মিলিয়েও হয়তো ৫ লাখের বেশি পুঁজি হাতে নেই। এই অবস্থায় একটা ইন্টারনেট ভিত্তিক সার্ভিস দিতে গেলে পুরানো মডেলে কিন্তু আপনাকে শুরুতেই সার্ভার ভাড়া নিতে হতো, সার্ভার কিনতে হতো। এখন কিন্তু এর কোনোটাই করা লাগবেনা। অথচ ক্লাউড ব্যবহার করে কেবল মাসিক ভাড়ার টাকাটা হাতে নিয়েই নামতে পারেন মাঠে।
গুগল, মাইক্রোসফট, ফেইসবুকের সাথে পাল্লা দেয়ার মতো আইডিয়া আপনার মাথায় আছে? ১০ বছর আগে বাংলাদেশে বসে থেকে আপনি এইরকম পাল্লা দিতে পারতেন না, কারণ অল্প টাকায় ওরকম সার্ভিস দিতে হলে আপনাকে কিনতে হতো বড় সড় একটা ক্লাস্টার বা ডেটা সেন্টার। কিন্তু এখন? শুরুতে ক্লায়েন্ট বা ইউজার কম থাকলে আপনাকে ১টা বা ২টা সার্ভার আমাজন থেকে ভাড়া নিলেই চলবে। ইউজার বাড়লে বেশি সার্ভার ক্লাউড থেকে ভাড়া নিবেন, তাও ঘণ্টা হিসাবে, রাতে কম ইউজার আসলে রাতেও অতিরিক্ত সার্ভার চালু রাখতে হবে না, এভাবে সিস্টেম সেটাপ করা সম্ভব।
টুইটারের কথা সবাই জানেন তো, তাই না? এই টুইটার যখন যাত্রা শুরু করে, তখন থেকে অনেকদিন পর্যন্ত তাদের সিস্টেমটা পুরোপুরি চালু ছিলো আমাজন ডট কমের ক্লাউডের উপরে। বর্তমানের অনেক জনপ্রিয় সার্ভিস যেমন পিন্টারেস্ট এভাবে ক্লাউডের উপরেই গড়ে উঠেছে।
৪) বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী/গবেষকদের সুবিধা
সবশেষে ধরা যাক, আপনি একজন গবেষক। আপনার একটি এক্সপেরিমেন্ট চালাবার জন্য ১০০০টি কম্পিউটার ১ ঘণ্টার জন্য দরকার।
১০ বছর আগে হলে উন্নত বিশ্বের একেবারে সবচেয়ে বড় গবেষণাগার ছাড়া আর কোথাও এটা করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এখন ঘণ্টায় ২ সেন্ট দিয়ে কম্পিউটার ভাড়া করা যায় আমাজন এর ক্লাউডে। কাজেই ১০০০টি কম্পিউটার ভাড়া করতে আপনার লাগবে ২০০০ সেন্ট, মানে মাত্র ২০ ডলার বা ১৬০০ টাকা। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর বিজ্ঞানীদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। কম্পিউটার কেনার সামর্থ না থাকলেও ভাড়া নিয়ে সহজেই এক্সপেরিমেন্ট চালানো যায় অল্প খরচে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অবশ্য ক্লাউডের অনেক সুবিধা পেতে হলে কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে, যেমন ক্রেডিট কার্ড না থাকা, কিংবা ধীর গতির ইন্টারনেট। কিন্তু উদ্যোক্তারা ব্যাপারটা অন্যভাবে দেখতে পারেন। ক্লাউড ডেটা সেন্টার বিদেশে থাকতে হবে এমন কথা নেই। সস্তায় কম্পিউটার কিনে বাংলাদেশেই ক্লাউড ডেটা সেন্টার বানানো সম্ভব। তার পর সেই ক্লাউডের সার্ভিস দেশীয় নানা কোম্পানিকে ভাড়া দেয়াটা একটা চমৎকার ব্যবসা হতে পারে। যেহেতু সার্ভিস দেয়া হবে দেশের ভিতরেই, সেজন্য সাবমেরিন কেবল কাটা যাওয়া টাইপের সমস্যা হবেনা। উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসুন, ক্লাউড প্রযুক্তি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে একটা বিপ্লব আনতে পারবে, কম খরচে সবার কাছে কম্পিউটিং এর সুবিধা পৌছে দিতে পারবে।
- এস এম জুবায়ের