মঙ্গলবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি পড়াশোনা » ক্লাউডের ইতিহাস
ক্লাউডের ইতিহাস
ষাটের দশক - সেন্ট্রাল কম্পিউটিং এর স্বপ্নক্লাউড কম্পিউটিং এ ব্যবহার করা প্রযুক্তিগুলো কিন্তু অধিকাংশই পুরানো জিনিষ, কতগুলো যেমন ভার্চুয়ালাইজেশনের জন্ম সেই ষাটের দশকে। সেসময় বড় বড় কোম্পানিরা Multics নামের একটি অপারেটিং সিস্টেম বানানোর পরিকল্পনা করেছিলো, আইডিয়াটা ছিলো এরকম, প্রতি শহরে একটা দুইটা মাত্র মেগা কম্পিউটার থাকবে, আর ইলেক্ট্রিকের বা ডিশের লাইন নেয়ার মতো সবাই সেখান থেকেই কম্পিউটারের লাইন নিবে। প্রত্যেকের ঘরে কেবল থাকবে টিভির মতো একটা যন্ত্র আর কীবোর্ড।
এই পরিকল্পনাটা মাঠে মারা যায়, মূলত সেযুগে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে। (মেগাবিট/সেকেন্ড না, সেই আমলের মডেমের স্পিড ছিলো ৩০০ বিট/সেকেন্ড বা তারও কম!)। তাছাড়া পার্সোনাল কম্পিউটার সস্তা হয়ে যাবার ফলে “কম্পিউটারের লাইন” নেয়ার দরকার কমে যায় একেবারেই।
নব্বইয়ের দশক - শুরু হলো গ্রিড কম্পিউটিং
নব্বইয়ের দশকে এসে নতুন করে এরকম কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ব্যবস্থার দরকার দেখা দেয়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সুপার কম্পিউটার সেন্টারে বড় বড় কম্পিউটার ক্লাস্টার বসানো হয়েছিলো, যেমন Oak Ridge National Lab, National Center for Supercomputing Applications, (যেখানে আমি এক সময় কাজ করেছি), San Diego Supercomputing Center, ইত্যাদি। এসব কম্পিউটার ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা নানা ধরণের গবেষণা করতে পারতেন। প্রতিটি ক্লাস্টারে হয়তো থাকতো ১ হাজার থেকে শুরু করে ২০-৩০ হাজার কম্পিউটার নোড। কিন্তু সমস্যাটা ছিলো এরকম, এগুলা ব্যবহার করতে হলে ঐ সুপারকম্পিউটার সেন্টারে একাউন্ট পেতে হবে, আর কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য রীতিমত আবেদন করে জানাতে হবে। তার উপরে আস্তে আস্তে বিজ্ঞানীদের আরো অনেক বেশি প্রসেসর বা কম্পিউটার নোডের দরকার হতে থাকলো। যেকোনো এক সুপারকম্পিউটার সেন্টারে অতগুলো কম্পিউটার ছিলো না।
এই সমস্যাটা এড়াবার জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, ইলেক্ট্রিক পাওয়ার গ্রিডের মতোই একটা জাতীয় কম্পিউটার গ্রিড বানানো হবে। অর্থাৎ এই বিচ্ছিন্ন সুপারকম্পিউটারগুলোকে একই সিস্টেমের অধীনে নিয়ে আসা হলো, আর আলাদা আলাদা একাউন্টের বদলে কেন্দ্রীয়ভাবে সব করা হলো। ফলে কোনো বিজ্ঞানীর অনেক কম্পিউটারের দরকার হলে একাধিক সেন্টারের কম্পিউটার ক্লাস্টার থেকে সেটা দেয়ার সহজ ব্যবস্থা হলো। এই সিস্টেমের নাম দেয়া হলো টেরাগ্রিড, আর এই পদ্ধতির নাম দেয়া হলো গ্রিড কম্পিউটিং।
গ্রিড কিন্তু ছিলো বিজ্ঞানীদের জন্য বানানো, আম জনতার কম্পিউটিং চাহিদা মেটানোর কথা সেখানে ভাবা হয়নি। তার উপরে গ্রিডে যুক্ত হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক থাকতে হতো, মানে আম জনতার কেউ চাইলেই সেখানে একাউন্ট খুলে বসতে পারতোনা। ফলে বিজ্ঞানীদের সুবিধা হলেও এর বাইরে ব্যবসায়িকভাবে গ্রিড কম্পিউটিং এর সুবিধাটি ছড়িয়ে যায়নি।
২০০০ এর দশক, ক্লাউডের জন্ম
নব্বই এর দশকের শেষে এবং ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে ডট কম হুজুগ শুরু হয়, ইন্টারনেট নিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে অনেক কোম্পানি বিশাল বিনিয়োগ করে ডেটা সেন্টার আর নেটওয়ার্কে। ২০০০ সাল নাগাদ হঠাৎ করে পুরা ব্যবসাটাই ধ্বসে যায়, ফলে অনেকে দেউলিয়া হয়ে পড়ে। বড় বড় কোম্পানিরা ইন্টারনেটে টাকা কামাবে এই আশায় বিশাল ডেটা সেন্টার স্থাপন করে বসেছিলো, তারা দেখে যে তাদের ডেটা সেন্টারের মাত্র ৫% হয়তো ব্যবহৃত হচ্ছে, বাকিটা সময়ে তাদের সিস্টেম অলস হয়ে বসে থেকে বিদ্যুৎ খাচ্ছে কেবল। তখন হঠাৎ একজনের মাথায় বুদ্ধি এলো, এই অলস পড়ে থাকা কম্পিউটারগুলাকে ঘণ্টা হিসাবে ভাড়া দিলেই তো হয়। কম্পিউটারকে তো আর বগলদাবা করে ক্রেতার বাড়ি দিয়ে আসা চলেনা, তাই এই ভাড়াটা দিতে হবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। আর একটা কম্পিউটার একজনকে দেয়ার চাইতে একই কম্পিউটার ৮ জনকে ভাড়া দিলে তো ৮ গুন লাভ! এক কুমিরের ছানা ৮ বার দেখানোর জন্য লাগবে ভার্চুয়াল মেশিন, মানে একই কম্পিউটারের উপরে ৮টা ভার্চুয়াল মেশিন চলবে, ক্রেতারা সেগুলা ভাড়া নিবে। এই ভার্চুয়াল মেশিন গুলা আসল কম্পিউটারের প্রসেসর ও অন্যান্য সব যন্ত্রপাতি শেয়ার করবে।
এই বুদ্ধিটাই শুরু করে দিলো ক্লাউড কম্পিউটিং এর যুগের। ২০০৫-৬ সাল থেকে শুরু হয়ে গেলো আমাজন ডট কমের ইলাস্টিক কম্পিউট ক্লাউড বা EC2। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি ক্লাউড কম্পিউটিংকে। আইবিএম, মাইক্রোসফ্ট, গুগল থেকে শুরু করে প্রচুর কোম্পানি এখন ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসার সাথে জড়িত।
- এস এম জুবায়ের