বৃহস্পতিবার ● ২২ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » টেলিকম সেবায় ইরানকে সাহায্য করছে এরিকসন
টেলিকম সেবায় ইরানকে সাহায্য করছে এরিকসন
সুইডেনের টেলিকম যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এরিকসন ইরানের সবচেয়ে বড় সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইরানকে সাহায্য করছে এরিকসন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের উদ্ধার করা এরিকসনের এক গোপন নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অথচ পশ্চিমা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখার বিষয়ে অঙ্গীকার করে এসেছে।
ইরানের সর্ববৃহৎ টেলিকম অপারেটরের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সাহায্য করছে এরিকসন। পাশাপাশি ২০২১ সাল পর্যন্ত সে দেশেরই আরেক সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করার ব্যাপারে তারা রাজি হয়েছে। ইরানের ওপর পশ্চিমা সরকারগুলোর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও এ কারণে ইরানে ব্যবসা করছে না।
এরিকসনের অভ্যন্তরীণ নথিপত্রে বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ একটি ‘মানবিক’ ব্যবসা। এ কারণে তারা ইরানকে সাহায্য করছে। ইরানের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, ইরানের টেলিকম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেশটির সরকার ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর নজরদারি করে।
বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার অধীনে টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি না পড়লেও এ খাতের সেরা চার প্রতিষ্ঠান (যার মধ্যে এরিকসনও আছে) ইরানে ব্যবসার আকার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইরানের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তির ব্যাপারে কোনো প্রতিষ্ঠানই এগোবে না। তবে বর্তমানের চুক্তিগুলোর শর্ত ও কার্যক্রম অপরিবর্তিত থাকবে।
ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে এরিকসনের মুখপাত্র ফ্রেডরিক হালস্তান বলেন, বর্তমানে এরিকসন মোবাইল কমিউনিকেশন কোম্পানি অব ইরানের (এমসিসিআই) সঙ্গে কাজ করছে। এমসিসিআই প্রকল্পটির নাম দিয়েছে ফেজ ফাইভ। তবে ২০০৮ সালেই এ-সম্পর্কিত একটি চুক্তিতে এরিকসন স্বাক্ষর করেছিল। সে সময় ইরানের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তিনি বলেন, ‘এমসিসিআইয়ের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আমরা বাড়াইনি। চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনাও আমাদের নেই।’
এরিকসন কোন ধরনের কাজ করছে, তা নিয়ে হালস্তান কিছু প্রকাশ করেননি। এ ছাড়া এমটিএন ইরানসেলকে এরিকসন সাহায্য অব্যাহত রাখবে বলে তিনি জানান। ২০০৬ সালে এরিকসন ও এমটিএন ইরানসেলের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। এমটিএন ইরানসেল দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
ইরানের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো সে দেশ থেকে তহবিল সহজে উঠিয়ে নিতে পারছে না। ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে দেশটি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়। তবে ইরান পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র উত্পাদনের জন্য ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছে।
এমসিসিআইয়ের সঙ্গে ফিনল্যান্ড-জার্মানি যৌথ উদ্যোগের নকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্ক আগে কাজ করেছিল। এখন তারা ফেজ ফাইভের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নেই। চীনের জেডটিই ইরানে ব্যবসা করছে। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, ফেজ ফাইভে তাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। হুয়াউইর মুখপাত্র ফেজ ফাইভে তার প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে কি না, তা এখনো প্রকাশ করেননি। তবে এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ‘হুয়াউই ইরানে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ইরানের প্রতিষ্ঠানগুলোর যে চুক্তি আছে, তার শর্ত ও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দেশটির নাগরিকরা যাতে অবিচ্ছিন্ন সেবা পান, তা প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত করবে।’
এ বছরের ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন গ্রুপকে এরিকসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এমটিএন ইরানসেলে এমটিএন গ্রুপের ৪৯ শতাংশ স্বত্ব রয়েছে। গোপন এ চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘গণমাধ্যমকে অতিরিক্ত আগ্রহী করতে পারে এবং ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে- এমন কিছু এরিকসন করবে না। এ ছাড়া এমটিএন ইরানসেলকে সাহায্য করার ব্যাপারে এরিকসনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০২১ সাল পর্যন্ত এমটিএন ইরানসেল এরিকসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যাতে এতে কোনো বিপত্তি না করে, এ বিষয়েও কাজ করবে এরিকসন। এসব সংস্থাকে এরিকসনের পক্ষ থেকে জানানো হবে, টেলিযোগাযোগ একটি মানবিক সেবা। এমটিএনকে সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি বাধা-বিপত্তি দূর করার ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করা হবে। রয়টার্সের কাছে চিঠিটির একটি কপি রয়েছে। এরিকসন থেকে যিনি এমটিএনকে এ চিঠি পাঠিয়েছিলেন, এ বিষয়ে তার ও এমটিএনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এমসিসিআই টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি অব ইরানের একটি ইউনিট। এটি ইরানের প্রথম সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। ইরানের ৪ কোটি ৪০ লাখ ব্যক্তি এমসিসিআই নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিষ্ঠানটি এর আগেও কয়েকবার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি ফেজ ফাইভের ঘোষণা দেয়। প্রকল্পটির অধীনে গ্রাহকরা পরবর্তী প্রজন্মের ডাটা সার্ভিস ও টেক্সট মেসেজ সুবিধা পাবেন। এক বছরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে তখন ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। - এসবিবি