বৃহস্পতিবার ● ১৫ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » বিশ্বে ইন্টারনেটের ওপর সরকারি নজরদারি বাড়ছে
বিশ্বে ইন্টারনেটের ওপর সরকারি নজরদারি বাড়ছে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ইন্টারনেটের ওপর নজরদারি বাড়াছে। সন্দেহজনক বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই করছে সরকারি কর্মকর্তারা। এ তথ্য সম্পর্কে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তারা খোঁজ নিচ্ছে। গুগলের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। খবর টেকরাডার ডটকমের।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের ওপর করা গুগলের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তারা ২০ হাজার ৯৩৮ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বিভিন্ন অনুসন্ধানকৃত বিষয় সম্পর্কে গুগলের কাছে জানতে চায়। এ সময়ে ৩৪ হাজার ৬১৪টি অ্যাকাউন্ট তদন্ত করতে গুগলের কাছে তথ্য চেয়েছে সরকার।
নতুন পরিসংখ্যান সম্পর্কে এক ব্লগপোস্টে গুগল জানায়, গুগলের কাছে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য সরকারের অনুরোধের পরিমাণ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইন্টারনেটে সন্দেহজনক ১৭ হাজার ৭৪৬টি বিষয়ের মধ্যে ১ হাজার ৭৯১টি মুছে ফেলার অনুরোধ পায় গুগল। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া এ ধরনের অনুরোধের পরিমাণ ছিল খুবই কম।
ব্লগপোস্টে গুগল জানায়, এ বছরের প্রথমার্ধে ইন্টারনেটের ওপর নজরদারির পরিমাণ বেড়েছে। এতে একটি বিষয় পরিষ্কার, ইন্টারনেটের ওপর সরকারি নজরদারি বাড়ছে।
ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বিভিন্ন দেশ থেকে গুগলের কাছে কী পরিমাণ অনুরোধ এসেছে তা-ও তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বেশি তথ্য চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি গুগলের কাছে ৭ হাজার ৯৬৯ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অনুসন্ধানকৃত বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। গুগলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দেশটির অনুরোধের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ ।
তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি গুগল জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এ তালিকায় প্রথম হিসেবে উঠে আসার কিছু কারণ রয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকায় সেসব দেশেরহয়েও অনেক তথ্য চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে দেশটি থেকে আসা অনুরোধের পরিমাণ বেশি।
যুক্তরাজ্য এ তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। দেশটি ১ হাজার ৪২৫ জন ব্যবহারকারীর অনুসন্ধানের তথ্য চেয়েছে। এর মধ্যে গুগল ৬৪ শতাংশ ব্যবহারকারীর তথ্য সরবরাহ করে।
ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণে চীন কঠোরহস্ত হলেও এ তালিকায় দেশটির নাম নেই। গুগল জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে একটি তথ্য গুগলকে সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছিল চীন। এ সম্পর্কে ব্লগপোস্টে গুগল জানায়, ‘চীনের এক সরকারি কর্মকর্তাকে অপমান করে লেখা একটি বিষয় সরিয়ে ফেলতে চীন আমাদের অনুরোধ করে। আমরা তা রক্ষা করতে পারিনি।’
একই সঙ্গে গুগল জানায়, কিছু সময়ের জন্য চীনে ইউটিউব ও গুগলের কিছু সেবা ব্যবহার করা যায়নি। চীনে ২০০৯ সাল থেকে ইউটিউব বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ছাড়া গত সপ্তাহে চীনের কমিউনিস্ট নেতাদের ১৮তম সম্মেলনের পরদিন প্রায় ১২ ঘণ্টা চীনে গুগল বন্ধ ছিল।
গুগল জানায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনে ইন্টারনেটে থাকা বিভিন্ন বিষয় মুছে ফেলার অনুরোধের পরিমাণ সবচেয়ে বেড়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। এ দুই দেশ থেকে অনুরোধ বাড়ার পরিমাণ যথাক্রমে ৯৮ ও ৪৬ শতাংশ। গুগল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইন্টারনেট থেকে যেসব বিষয় সরিয়ে ফেলতে বলে, সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল স্থানীয় পুলিশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
ইন্টারনেটে কাউকে অপমান করার উদ্দেশ্যে দেয়া কোনো বক্তব্য ও কোনো প্রতিষ্ঠানের ট্রেডমার্ক ক্ষুণ্ন করে, এমন বিষয় গুগল ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে ফেলেছে। গুগল জানায়, ‘আদালত থেকে ১ হাজার ৭৫৪টি পোস্ট সরিয়ে ফেলার আদেশ পেয়েছি আমরা। এর বিপরীতে আমরা ১ হাজার ৬৬৪টি পোস্ট ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নিয়েছি।’
গুগল আরও জানায়, ‘২০১০ সালের শুরুতে আমরা ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট প্রকাশ শুরু করি। সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে কী করছে, তা জানার জন্য সে সময় কোনো উপায় ছিল না। আমাদের পাশাপাশি ড্রপবক্স, লিংকডইন, টুইটারের মতো সাইটও এখন এ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করেছে। আমরা মনে করি, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর কী প্রভাব পড়ে, তা এসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।’