বৃহস্পতিবার ● ১ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » এবার পরিবহন খাতে ডিজিটাল ছোঁয়া
এবার পরিবহন খাতে ডিজিটাল ছোঁয়া
মোটরযানের নিরাপত্তা ট্যাগসহ ডিজিটাল নাম্বার প্লেট সংযোজন ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট চালুর মধ্য দিয়ে দেশের পরিবহন খাত এক ‘নতুন যুগে’ প্রবেশ করল। এর মাধ্যমে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও উন্নত সেবা দিতে পারবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গতকাল বুধবার নিজ কার্যালয়ে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন এ ব্যবস্থায় যানবাহন খাতের সেবার মান এবং বিআরটিএর সামর্থ্য ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, মোটরযানের মালিক, চালক, নিয়ন্ত্রক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীসহ সবার সুবিধা নিশ্চিত করতে এ ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে গাড়ির মালিক ও যাত্রীরা উপদ্রবমুক্ত থাকবেন এবং একজনের নামে কয়টি গাড়ি আছে, তা জানা যাবে।
উল্লেখ্য, এই নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ও সব ধরনের তিন চাকার যানের (অটোরিকশা, টেম্পো, মিশুক প্রভৃতি) নাম্বার প্লেট ও ট্যাগের জন্য দিতে হবে ১ হাজার ৮০৫ টাকা এবং অন্যান্য যানবাহনের ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৬৫২ টাকা। এ ছাড়া গ্রাহকদের থেকে ভ্যাটও না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিএ। রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নাম্বার প্লেট, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ এবং স্মার্ট রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা ভেহিকেল ওনারশিপ কার্ড নামক নতুন প্রযুক্তি সব যানবাহনের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে নতুন কেনা গাড়ির ক্ষেত্রে শ্রেণীভেদে গ্রাহকদের ২ হাজার ৫৩০ টাকা ও ৫ হাজার ১৭৫ টাকা দিতে হবে। এ নাম্বার প্লেট, ট্যাগ ও নিবন্ধন সনদের মেয়াদ সাত বছর। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ভাঙলে বা নষ্ট হলে আবার নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তা সংযোজন করতে হবে। এ ছাড়া যারা আগেই পূর্ব নির্ধারিত মূল্য জমা দিয়েছেন, তারা পরে ফেরত বা সমন্বয়ের সুযোগ পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান এবং সাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে যোগাযোগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ট্রাফিক আইন সম্পর্কে প্রথমে স্কুলশিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, বিআরটিসির ১৭টি ইনস্টিটিউটে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার গাড়িচালক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং প্রশিক্ষণের এ সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এরই মধ্যে ৭৭টি ড্রাইভার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ইনস্টিটিউট নির্মাণ এবং প্রত্যেক জেলায় বিআরটিএর অফিস চালুর পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়তে তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে মোটরযান কর ও ফি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-গভর্ন্যান্স, ই-কর্মাস, ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, ই-ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ই-সেবা চালু করা হয়েছে। ট্রেনের টিকিটসহ বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের বিল জনগণ এখন সেলফোনের মাধ্যমে দিতে পারছে।
বিআরটিএর এ ডিজিটাল নাম্বার প্লেট, নিরাপত্তা ট্যাগ ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট চালুর ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। পরে শেখ হাসিনা বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে একটি ডিজিটাল নাম্বার প্লেট হস্তান্তরের মাধ্যমে মোটরযানের রেট্রো-রিফ্লেক্টিভ নাম্বার প্লেট, রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন ট্যাগ ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনীপ্রধান ও বিএমটিএফের চেয়ারম্যান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, সড়ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব এমএএন ছিদ্দিক, বিআরটিএর চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান ও বিএমটিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।