বৃহস্পতিবার ● ১৮ অক্টোবর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » পিসি বিক্রি কমে যাওয়ায় আয় কমেছে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের
পিসি বিক্রি কমে যাওয়ায় আয় কমেছে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের চতুর্থ প্রান্তিকের আর্থিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী পিসি বিক্রি কমায় এর আয় কমবে। খবর ব্লুমবার্গের।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, চতুর্থ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির আয় হতে পারে ১ হাজার ৩১০ থেকে ১ হাজার ৪১০ কোটি ডলার। এ সময় নিট মুনাফা হতে পারে আয়ের ৫৭ শতাংশ। ব্লুমবার্গের বিশ্লেষকরা এর আগে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, চতুর্থ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার আয় করতে পারে আর নিট মুনাফা হতে পারে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টেলের কারখানায় অবিক্রীত চিপের পরিমাণ বাড়ছে। উন্নত দেশগুলো পিসির ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়ায় চিপ বিক্রি কমেছে ইন্টেলের। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা স্টেসি স্মিথ এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো পিসি বিক্রি কমছে। পিসি বিক্রি কমার প্রভাব পড়বে ইন্টেলের ব্যবসায়।
প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক পূর্বাভাস সম্পর্কে এডওয়ার্ড জোনস অ্যান্ড কোংয়ের বিশ্লেষক বিল ক্রেহার জানান, ‘ইন্টেলের পূর্বাভাস থেকে বোঝা যাচ্ছে পিসির বাজার ধীরে ধীরে পড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির আয়ের পূর্বাভাস আমাদের প্রত্যাশার তুলনায় কম।’
পূর্বাভাস দেয়ার পর নাসদাক শেয়ারবাজারে ইন্টেলের শেয়ারের দাম লেনদেনের বর্ধিত সময়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ২২ ডলার ৩৫ সেন্টে দাঁড়ায়। চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির নিট আয় হয়েছিল ২৯৭ কোটি ডলার অথবা শেয়ারপ্রতি ৫৮ সেন্ট। এর আগের বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৪৭ কোটি ডলার বা শেয়ারপ্রতি ৬৫ সেন্ট। তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে।
বিক্রি কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির গুদামে অবিক্রীত চিপের পরিমাণও বাড়ছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকশেষে প্রতিষ্ঠানটির অবিক্রীত চিপের পরিমাণ ছিল ৪৯০ কোটি ডলার মূল্যের। তৃতীয় প্রান্তিকশেষে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৩২ কোটি ডলার মূল্যের।
প্রতিষ্ঠানটির এ অবিক্রীত চিপগুলো দ্রুত বিক্রি হওয়া জরুরি বলে মনে করেন নিউইয়র্কভিত্তিক এভারকোর পার্টনারসের বিশ্লেষক প্যাট্রিক ওয়াং। তিনি বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে কত দ্রুততার সঙ্গে তারা এ চিপ বিক্রি করতে পারবে। যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই প্রতিষ্ঠানটির জন্য মঙ্গল হবে।
পিসির বাজারের অবস্থা জানার জন্য ইন্টেলের আয়-ব্যয়কে বিশ্লেষণ করে থাকেন বিশ্লেষকরা। কারণ বিশ্বের ৮০ শতাংশ পিসিতেই ইন্টেলের চিপ ব্যবহূত হয়। সার্ভার, ল্যাপটপ ও পিসির বাজার কেমন যাচ্ছে, তা ইন্টেলের ব্যবসা পর্যালোচনা করেই জানা যায়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএসসাপ্লির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর পিসি বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৩৪ কোটি ৮৭ লাখ ইউনিটে দাঁড়াবে। এর ফলে ২০০১ সালের পর প্রথমবারের মতো পিসির বাজার সংকুচিত হবে।
ইন্টেলের মূল গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে এইচপি, ডেল ও অন্যান্য শীর্ষ পিসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
পিসি বিক্রির মূল ক্ষেত্র করপোরেট বাজার বর্তমানে ভালো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ইন্টেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পল ওতেলিনি। তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পিসি বিক্রি এখন কমিয়েছে। বছরের এ সময়ে স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ পিসি বিক্রি হওয়ার কথা তার তুলনায় কম পিসি বিক্রি হচ্ছে।
ইন্টেলের আরও কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন ওতেলিনি। ইন্টেলের প্রতিষ্ঠান ডাটা সেন্টার গ্রুপ এত দিন উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি করে এসেছে। এ কারণে পিসি ও ল্যাপটপ বিক্রি কমার প্রভাব এত দিন ইন্টেলের ব্যবসায় তেমন পড়েনি। তবে সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির আয় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে।
ইন্টেলের মতো অন্যান্য চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও এখন সমস্যায় রয়েছে। দ্বিতীয় শীর্ষ চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এএমডির আয়ও তৃতীয় প্রান্তিকে কমেছে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যয়সংকোচনের জন্য ২০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে।