সোমবার ● ১ অক্টোবর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ইন্টারনেটে আক্রমণের শাস্তি ১২ বছর জেল !!!
ইন্টারনেটে আক্রমণের শাস্তি ১২ বছর জেল !!!
ইন্টারনেটে কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে আক্রমণের শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ১২ বছর জেল- এমন একটি আইন করেছে ফিলিপাইন। দেশটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এ আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। আইনটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পাঁচটি মামলাও করা হয়েছে। খবর এএফপির।
অনলাইন পর্নোগ্রাফি, হ্যাকিং ও বিদ্বেষমূলক আচরণ ঠেকাতে নতুন এ আইন করেছে দেশটির আইন প্রণেতারা। এর ফলে দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অনুমতি ব্যতিরেকেই যেকোনো ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগের সাইটে নজরদারি করতে পারবে। এ ছাড়া এ আইনবলে সামাজিক যোগাযোগের সাইট থেকে ব্যক্তিগত তথ্যও সংগ্রহ করতে পারবেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
আইনটির বিরুদ্ধে দেশটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাজধানী ম্যানিলার খ্যাতনামা ব্লগার নোয়েমি দ্যাদো আইনটিকে অপ্রয়োজনীয় ও নিষ্পেষণের অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, টিনএজ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ভাবনা-চিন্তা না করেই সামাজিক যোগাযোগের সাইটে অনেক মন্তব্য করে। আইনটি তাদের জন্য উপযুক্ত নয়।
এ বিষয়ে এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আইনটি সবার জন্য প্রযোজ্য করা উচিত হবে না। আমার মতো অনেকেই আছেন, যারা ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করেন। আইনটি আমাদের স্বাধীনতার ওপর আঘাত।’
নতুন এ আইন অনুযায়ী, ইন্টারনেটে কাউকে আক্রমণ করে বা কারও জন্য সম্মানহানিকর কোনো কিছু পোস্ট করা হলে সর্বোচ্চ ১২ বছরের শাস্তি ও ২৪ হাজার ডলার জরিমানা করা হবে। দেশটিতে ইন্টারনেট বাদে অন্যান্য গণমাধ্যমে একই ধরনের কাজের শাস্তির বিধান কম রাখা হয়েছে। কোনো সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে এ ধরনের আক্রমণাত্মক কিছু লেখার শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড ও ১৪৫ ডলার জরিমানার বিধান রয়েছে।
দ্যাদো জানান, ‘ফিলিপাইনের নতুন আইনটি দেশটিকে ২৬ বছর পেছনে নিয়ে যাবে। সেসময় আমাদের দেশে ফার্দিন্যান্ড মার্কোসের সামরিক শাসন সমর্থিত একনায়কতন্ত্র ছিল।’
দেশটির অনলাইন কমিউনিটি মমব্লগারের সদস্য দিদো আইনটি পরিবর্তনের দাবি জানান। এদিকে আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া শাখার পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে এগিয়ে থাকা দেশের মধ্যে অন্যতম ফিলিপাইন। আইনটি দেশটির ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ধাক্কা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ফিলিপাইনে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহারকারীর এ আইনের ফলে ভীত থাকবেন। কারণ যেকোনো মন্তব্যের কারণে তাদের দীর্ঘদিন কারাবরণ করতে হতে পারে।
বর্তমানে ফিলিপাইনের এক-তৃতীয়াংশ অথবা ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯৬ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহার করে।
আইনটির বিরোধিতা করে এরই মধ্যে দেশটির আদালতে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে আইনটি চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছেন আইন প্রণেতা তিওফিসত গুইনগোনা। দেশটির সংসদ সিনেটে আইনটি প্রণয়নের সময় তিনি এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আইনটি যথেষ্ট পরিষ্কার নয়। এর ফলে যে কাউকে এখন এ আইনে অভিযুক্ত করা যাবে। এমনকি ফেসবুক অথবা টুইটারে কোনো পোস্টের বিপরীতে কেউ পোস্ট দিলেও এ আইনের বলে তাকে অভিযুক্ত করা যাবে। বিতর্কিত আইনটি আমাদের পেছনে ঠেলে দেবে।’
আইনটি চ্যালেঞ্জ করা পাঁচটি মামলায়ই বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে দেশটির জনগণের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া খর্ব করা হয়েছে যোগাযোগের গোপনীয়তা।
ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপাইনসের আইন বিভাগের অধ্যাপক হ্যারি রোকু এ আইনের বিষয়ে আরেকটি মামলা করেন। তিনি বলেন, আইনটিতে শাস্তির পরিমাণ অনেক বেশি।
জনরোষের পর আইনটির পক্ষে ভোট দেয়া আইন প্রণেতারা বিষয়টি নিয়ে বিপরীত কথা বলা শুরু করেছেন। অনেকেই বলছেন, আইনটি ঠিকভাবে না পড়েই তারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
আইনটি সম্পর্কে দেশটির রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র এডউইন লাসিরেদ্রা বলেন, সাইবার অপরাধ দমনের লক্ষ্যে আইনটি করা হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটির অপব্যবহার রোধ করাও প্রয়োজন।
নতুন এ আইন সংশোধনের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ আইনের আপত্তির অংশটুকু সরকারের নির্দিষ্ট প্যানেলের কাছে জমা দেয়া উচিত। তাহলে এ বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।