মঙ্গলবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » হারিয়ে যাচ্ছে নকিয়া !!!
হারিয়ে যাচ্ছে নকিয়া !!!
এককালের প্রতাপশালী সেলফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নকিয়া এখন মন্দার মুখে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি হয়ে যাবে
বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। কয়েক বছর ধরে অ্যাপলের আইফোন ও গুগলের অ্যান্ড্রয়েডের কাছে হারানো বাজার ফেরাতে নানাভাবে চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। নকিয়ার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজকের অবস্থানের ভিত্তিতেই এ প্রতিবেদন-
টেলিযোগাযোগ যুগের আগে নকিয়া
১৮৫৬ সালে ফ্রেডরিক আইডেসটামের হাত ধরে নকিয়ার যাত্রা। প্রথমে কাগজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ১৮৭১ সালে লি মেকেলিন ও আইডেসটামের হাত ধরে শেয়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নকিয়া ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ১৯০২ সালে বিদ্যুত্ খাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও নকিয়া আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৬৭ সালে নকিয়া কোম্পানি, ফিনিশ ক্যাবল ওয়ার্কস ও ফিনিশ রাবার ওয়ার্কস একীভূত হয়। ১৯৬২ সালেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রথম ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করে। তবে বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের শুরুতে নকিয়া প্রথম সেলফোন তৈরি করে। ১৯৯৮ সালেই বিশ্বসেরা সেলফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নকিয়া আত্মপ্রকাশ করে।
২০০১-২০০২: ২০০০ সালে বাজারে আসে প্রথম স্মার্টফোন এরিকসনের আর৩৮০। ২০০১ সালে নকিয়া ৯২১০ কমিউনিকেটর বাজারে আনে। পিডিএ ও ফোনের মিশ্রণে ডিভাইসটির অপারেটিং সিস্টেম ছিল সিমবিয়ান। ব্যবসায়িক কাজে বেশি ব্যবহার করা স্মার্টফোনগুলো সাধারণ মানুষের নাগালে আসেনি। ২০০২ সালে নকিয়ার ৭৬৫০ সাধারণ ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর বিক্রি হয়।
২০০৩-২০০৪: সিমবিয়ান অপারেটিং সিস্টেমচালিত ফোন বানানো অব্যাহত রাখে নকিয়া। তবে নকিয়া ১১০০ বেসিক ফোন সাধারণ ক্রেতার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। বিশ্বজুড়ে এ মডেলের ফোন বিক্রির পরিমাণ কোটি ইউনিটের বেশি ছিল। সেলফোনে গেমারদের আকৃষ্ট করতে এ সময় নকিয়া বাজারে আনে এনগেজ।
২০০৫-২০০৭: ৬০৩০, ৬১১১, ৬১০১, ৬২৩০ তৈরি করে নকিয়া। ২০০৫ সালে বাজারে আসে নকিয়া এন সিরিজের ফোন। ২০০৭ সালে ৫২০০ ও ৫৩০০ এক্সপ্রেসমিউজিক বাজারে ছাড়ে। একই বছর আইফোন আসায় টাচস্ক্রিন ফোনের প্রয়োজনীয়তাও প্রতিষ্ঠানটি অনুভব করতে পারে। ফলে নকিয়া ৭৭১০ বাজারে আসে। একই বছর প্রতিষ্ঠানটি ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও জেনন ফ্ল্যাশ সমৃদ্ধ নকিয়া এন ৮২ বাজারে আনে।
২০০৮: ব্ল্যাকবেরি ও আইফোনের সঙ্গে নকিয়ার তুমুল প্রতিযোগিতা জমে ওঠে। ফলে মোবাইল ইন্টারনেটের প্রতি নকিয়া মনোযোগ দিতে বাধ্য হয়। প্রতিষ্ঠানটি ওভি মেইল সুবিধা চালু করে। ব্ল্যাকবেরির কোয়ার্টি কিপ্যাড দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নকিয়া ই৭১ বের করে। পরে ব্ল্যাকবেরির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ই৭২ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়।
২০১০: নকিয়া টাচ অ্যান্ড টাইপ ফোন আনার সিদ্ধান্ত নেয়। নকিয়ার সি সিরিজ তার প্রমাণ। নকিয়ার এন ৮ এ বছর বাজারে আসে। অনেকটা মন্দার মুখে বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টিভেন ইলোপ প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেন। অ্যান্ড্রয়েডের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে এ বছর থেকেই নকিয়ার লোকসান
শুরু হয়।
২০১১: আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডের কাছে নকিয়ার সিমবিয়ান সেকেলে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে প্রমাণিত হয়। নকিয়ার স্মার্টফোনগুলো ধীরে ধীরে ক্রেতা-আগ্রহ হারাতে থাকে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোসফটের সঙ্গে জোট বেঁধে উইন্ডোজকে স্মার্টফোন ওএস হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এ বছর নকিয়ার শেয়ার মূল্য ১৪ শতাংশ কমে যায়। লুমিয়া সিরিজের ৭১০ ও ৮০০ স্মার্টফোন বাজারে এলেও ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়নি। লোকসান বাড়ায় বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটি কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়।
২০১২: নকিয়ার লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। ফলে কর্মীসংখ্যা কমানো অব্যাহত রাখতে প্রতিষ্ঠানটি বাধ্য হয়। এ বছর জুনে ২০১৩ সালের মধ্যে ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়া হয়। সম্প্রতি নকিয়া লুমিয়া সিরিজের ৯২০ মডেল উন্মোচন করে। নকিয়া ৮০৮ সুপারফোনে ৪১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও পিওরভিউ টেকনোলজি ব্যবহার করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির সুদিন ফিরিয়ে আনতে তা যথেষ্ট নয় বলে প্রমাণিত হচ্ছে। স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপল, স্যামসাং, এলজি, জেডটিই ও হুয়াউইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নকিয়ার আসন অনেকটা নড়বড়ে করে দিয়েছে বলে ধরা যায়। এ বছরের এপ্রিলে সেলফোন বাজারের এক নম্বর আসন থেকে নকিয়াকে হটায় স্যামসাং। ফলে অবসান হয় ১৪ বছরের নকিয়া সাম্রাজ্যের।
টেক টু অবলম্বনে আসিফ মাহমুদ