মঙ্গলবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলায় ইরানের অস্বীকার
যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলায় ইরানের অস্বীকার
একাধিক বার্তা সংস্থা কয়েক দিন ধরেই জানিয়ে আসছে, ইরানের হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোয় সাইবার হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু গত রোববার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এ বিষয়ে ইরানের বার্তা সংস্থা ফারস নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খবর এনবিসির।
ইরানি হ্যাকারদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান- ব্যাংক অব আমেরিকা, জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কো ও সিটিগ্রুপের ওয়েবসাইট ও করপোরেট নেটওয়ার্কে সাইবার হামলা চালাচ্ছে। এ হামলা শুরু হয় ২০১১ সালের শেষ দিকে। এ বছর তা আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে। এ হামলা ইরান সরকার বা সমর্থিত কোনো গোষ্ঠী চালিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত নয়। ব্যক্তি পর্যায়ের হ্যাকাররাও এ হামলা চালাতে পারে। ব্যাংক ছাড়া আরও কিছু প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়। তবে সেগুলোর তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ইরানে সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির প্রধান গোলাম রেজা জালালি ফারস নিউজকে বলেন, ‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিচ্ছি, ইরান থেকে কোনো সাইবার হামলা চালানো হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ সপ্তাহের শুরুতে বার্তা সংস্থা এনবিসিকে জানিয়েছেন, আগের সপ্তাহে সাইবার হামলার কারণে জেপি মরগান চেজ ও ব্যাংক অব আমেরিকার ওয়েবসাইট ধীরগতিতে কাজ করছিল। এসব হামলা ইরান সরকারের মদদে চালানো হয় বলে দাবি করেন তারা। আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মহানবীকে (স.) ব্যঙ্গ করে চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নির্মাণের প্রতিবাদেও এ হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন নিরপত্তা কর্মকর্তার মতে, হামলাগুলো মারাত্মক ও নিয়মিত বিরতিতে করা হচ্ছে। এনবিসি নিউজকে তিনি বলেন, হামলায় কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়েছে। কারও কারও মতে, ইরানি ব্যাংকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার জবাবে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, হ্যকারদের লক্ষ্য ছিল জেপি মরগান চেজ, ব্যাংক অব আমেরিকা ও সিটিগ্রুপ। ইরানের পারমাণবিক গবেষণার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানের প্রতিবাদই এ হামলা চালানো হচ্ছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।
সিনেটর জোসেফ লিবারম্যান দাবি করেছেন, ইরানই হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে হামলা চালানোর পেছনে দায়ী ইরান ও কুদস ফোর্স। ইরানের গোপন বাহিনীর নাম কুদস ফোর্স। ইরান দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক গবেষণা মারণাস্ত্র নয়, বরং বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্ররাষ্ট্রের স্থির বিশ্বাস যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য গবেষণা করছে।
গত রোববার ইরানের এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক গবেষণা পর্যবেক্ষকরা দেশটির গোপনীয় কিছু তথ্য অবৈধভাবে ইসরায়েলের কাছে ফাঁস করে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ইসলামপন্থী দেশটি তাদের সাইবার দক্ষতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে নিচ্ছে। ২০১০ সালে তাদের পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র স্টাক্সনেট নামে ব্যাপক বিধ্বংসী এক কম্পিউটার ভাইরাসের শিকার হয়। এতে গবেষণাকাজও ব্যাহত হয়। এর পর থেকেই সাইবার দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছে ইরান। দেশটির প্রযুক্তিবিদরা দাবি করেছেন, স্টাক্সনেটের জন্ম ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগারে।
রেজা জালালি আরও জানিয়েছেন, পারমাণবিক গবেষণা ব্যাহত কিংবা ধীর করে দিতেই স্টাক্সনেট ব্যবহার করা হয়। এ ব্যাপারে ফারস নিউজকে তিনি বলেন, ‘তাদের হামলার পরিমাণ বাড়ছে, তবে আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। এখন আমরা এ ধরনের হামলা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত। তবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন কথা বলছেন। তাদের মতে, ইরানের সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের তুলনায় তারা এখনো পিছিয়ে।