বুধবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশের উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিল শিক্ষার্থীরা
ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশের উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিল শিক্ষার্থীরা
ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার শপথ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। শপথ নিয়েছে মিথ্যা ও মাদককে ‘না’ বলার। গতকাল মঙ্গলবার নরসিংদী, কক্সবাজারের টেকনাফ, বগুড়ার সান্তাহার, পটুয়াখালীর গলাচিপা ও সিলেটের বিশ্বনাথে আয়োজিত গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসবে এই শপথ নেওয়া হয়।
‘এসো পৃথিবীর পাঠশালায়…’ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব শুরু হয়েছে।
গতকাল উৎসবটি হয় নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, সান্তাহার সরকারি কলেজ, গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিশ্বনাথ উপজেলার রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চবিদ্যালয়ে।
সকালে প্রতিটি কেন্দ্রে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জনকে আই-জিনিয়াস প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়। ওই ১০ জনকে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। ওই ১০ জনের মধ্যে সেরা আই-জিনিয়াস পায় মেডেল। উৎসবের কেন্দ্র-প্রধানকে দেওয়া হয় একটি ঘড়ি ও প্রথম আলোর মগ।
ইন্টারনেট উৎসবের খবর জানাচ্ছেন ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা-
নরসিংদী: ‘ইন্টারনেট বলতে আমরা শুধু ই-মেইল আর ফেসবুককেই বুঝি। এখন দেখছি, এর মাধ্যমে জানা যায় না এমন জিনিস নেই।’ নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আয়োজিত উৎসবে যোগ দিয়ে গতকাল এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানায় শাহীন ক্যাডেট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ফজলুল করিম।
এর আগে শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করানোর মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম চন্দ্র মিত্র। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও উৎসবে অংশ নেয় আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ, হাজী আবেদ আলী কলেজ, মাধবদী এসপি ইনস্টিটিউট, এনকেএম হাইস্কুল অ্যান্ড হোমস, নরসিংদী সরকারি কলেজ, নরসিংদী রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, নরসিংদী প্রেসিডেন্সি কলেজ, স্কলাস্টিকা মডেল কলেজ, ইউরিয়া সার কারখানা কলেজ ও শাহীন ক্যাডেট স্কুলের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত ১৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আফ্রানুল কাদের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান, গ্রামীণফোনের নরসিংদীর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আবদুর রাজ্জাক, প্রথম আলোর নরসিংদী প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান, নরসিংদী বন্ধুসভার সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন।
টেকনাফ (কক্সবাজার): টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, মলকাবানু উচ্চবিদ্যালয়, টেকনাফ এজাহার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, টেকনাফ ডিগ্রি কলেজ, সাবরাং উচ্চবিদ্যালয়, হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয়, লেদা নিম্নমাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয় ও বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুলের দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেয়।
নিবন্ধন করা ২৩৫ জন প্রতিযোগীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় টেকনাফ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মহি উদ্দিন।
মলকাবানু উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শারমীন রিমা বলে, ‘বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্বদক্ষিণের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ সংবাদপত্রের শিরোনাম হয় ইয়াবা-মাদক পাচার নিয়ে। আমরা তরুণ প্রজন্ম টেকনাফের এই দুর্নাম ঘুচাতে চাই। আমরা শপথ নিলাম, আজ থেকে আর ইয়াবা-মাদক নয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই।’ একই কথা বলে টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র শামীমুল কায়সার।
এর আগে শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুসের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন টেকনাফ এজাহার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি রানী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, গ্রামীণফোনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো. জহির রায়হান, টেকনাফ বন্ধুসভার সভাপতি সন্তোষ কুমার শীল।
বিশ্বনাথ (সিলেট): বিশ্বনাথ উপজেলার রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চবিদ্যালয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল বারী। গতকাল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই উপজেলার ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উৎসবে অংশ নেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো: রামসুন্দর অগ্রগামী উচ্চবিদ্যালয়, রাগীব-রাবেয়া ডিগ্রি কলেজ, বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজ, উত্তর বিশ্বনাথ কলেজ, বিশ্বনাথ কলেজিয়েট স্কুল, দেওকলস দ্বিপাক্ষিক উচ্চবিদ্যালয়, হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, একলিমিয়া উচ্চবিদ্যালয়, সফাতউল্লা উচ্চবিদ্যালয়, শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চবিদ্যালয়, বাউসি-কাশিমপুর উচ্চবিদ্যালয়, উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চবিদ্যালয় ও শাহপিন উচ্চবিদ্যালয়।
আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় বিশ্বনাথ কলেজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ইমরান হোসেন। প্রতিক্রিয়ায় ইমরান বলে, ‘ইন্টারনেটের আলোয় বিশ্বটাকে দেখার পাশাপাশি নিজেকে একজন স্থপতি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করব। কারণ, জ্ঞান অর্জনের জন্যই আমি ইন্টারনেট ব্যবহার করি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আকবর কবির মো. নিয়ামুল হুদা, উত্তর বিশ্বনাথ কলেজের অধ্যক্ষ নেছার আহমদ, দেওকলস দ্বিপাক্ষিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মুকিদ, প্রথম আলোর বিশ্বনাথ প্রতিনিধি প্রনঞ্জয় বৈদ্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্বনাথ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াকুর রহমান ও গ্রামীণফোনের চৌধুরী জুনায়েদ। সমাপনী বক্তব্য দেন বন্ধুসভার সভাপতি প্রবীর কান্তি দে।
গলাচিপা (পটুয়াখালী): গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) সজল কুমার দত্ত বলেছেন, ‘আমাদের সবার প্রচেষ্টায় প্রতিটি মানুষকে, সারা দেশকে ইন্টারনেটের আলোয়ে উদ্ভাসিত করতে হবে। তা হলেই আমরা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।’ গতকাল উৎসবের উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন।
বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে গলাচিপা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উলানিয়া হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, গলাচিপা ডিগ্রি কলেজ, গলাচিপা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গলাচিপা এন জেড আলিম মাদ্রাসার প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী উৎসবে যোগ দেয়। ১৭৪ জন প্রতিযোগীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় গলাচিপা ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ।
এর আগে বন্ধুসভার সদস্য নুরুল আবরারের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের বরিশাল অঞ্চলের ব্যবস্থাপক সুভাষ চন্দ্র লোদ, প্রথম আলোর গলাচিপা প্রতিনিধি ইশরাত হোসেন, গলাচিপা বন্ধুসভার সভাপতি মু. জাহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুইজপর্ব পরিচালনা করেন গ্রামীণফোনের কর্মকর্তা মো. সায়েম ও ব্যবস্থাপক সুভাষ চন্দ্র লোদ।
আদমদীঘি (বগুড়া): বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায়ও গতকাল বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো: সান্তাহার সরকারি কলেজ, বিপি উচ্চবিদ্যালয়, হার্ভে সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আহসানউল্লাহ ইনস্টিটিউশন, শহীদ আহসানুল হক ডিগ্রি কলেজ, এস এম আই একাডেমি, সান্তাহার মহিলা কলেজ, সান্তাহার পৌর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সিরাজ খান মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়।
উৎসবের উদ্বোধন এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শপথবাক্য পাঠ করান সান্তাহার সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ হামিদুল হক। বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের বগুড়ার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আশফাকুজ্জামান চৌধুরী, সান্তাহার বন্ধুসভার সভাপতি এস এম জুয়েল, প্রথম আলোর আদমদীঘি প্রতিনিধি মো. খায়রুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বন্ধুসভার ওমর ফারুক ও গ্রামীণফোনের সামিউল হক।
নিবন্ধন করা ১৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে আই-জিনিয়াস নির্বাচিত হয় সান্তাহার সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া ইসলাম।
এ বছর সারা দেশে ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো ইন্টারনেট উৎসব করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর যৌথ আয়োজনে এই উৎসবের সহযোগী হিসেবে রয়েছে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি। সহায়তা দিচ্ছে গুগল, অপেরা, নকিয়া, ফেসবুক, চ্যানেল আই ও রেডিও ফুর্তি। উৎসবের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করছে এশিয়াটিক ইভেন্ট মার্কেটিং লিমিটেড। সার্বিক সহযোগিতা করছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
আজ উৎসব হবে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে।