সোমবার ● ৬ আগস্ট ২০১২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভারতে টুজি স্পেকট্রামের ভিত্তিমূল্য ১৪ হাজার কোটি রুপি নির্ধারণ
ভারতে টুজি স্পেকট্রামের ভিত্তিমূল্য ১৪ হাজার কোটি রুপি নির্ধারণ
টুজি লাইসেন্সের নিলাম নতুন করে আয়োজনের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ গত শুক্রবার স্পেকট্রামের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করেছে ১৪ হাজার কোটি রুপি। এ ছাড়া এ নিলামকাজ পরিচালনার জন্য দ্রুত একটি নিলামকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী প্রক্রিয়া নিলাম আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানটি সম্পন্ন করবে। সংবাদ সম্মেলনে টুজি লাইসেন্সের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন দেশটির তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী কপিল শিবাল। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
কপিল শিবাল সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিপরিষদে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ৫ মেগাহার্টজ প্যান ইন্ডিয়া স্পেকট্রামের দাম ১৪ হাজার কোটি রুপি ভিত্তিদর নির্ধারণ করা হয়েছে। টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রস্তাবের চেয়ে এ দাম ২২ শতাংশ কম।
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে টুজি স্পেকট্রামের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণের বিষয়ে কাজ করা ভারতের তথ্য ও প্রচারমন্ত্রী আম্বিকা সনি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনি স্পেকট্রামের দাম ১৫ হাজার কোটি রুপি নির্ধারণ করার পরামর্শ দেন। মন্ত্রিপরিষদের অন্য কয়েক মন্ত্রীও এতে সমর্থন দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই দুই মন্ত্রী টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্ধারিত ১৮ হাজার কোটি রুপির কাছাকাছি ভিত্তিদর ঠিক করতে বলেছেন। শেষ পর্যন্ত এটি ১৪ হাজার কোটিতে নির্ধারণ হয়।
মন্ত্রিপরিষদ ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ভিত্তিমূল্য বিষয়েও প্রস্তাব দিয়েছেন। সিডিএমএ অপারেটরদের জন্য প্রয়োজনীয় এ তরঙ্গের দাম ১৮০০ মেগাহার্টজের চেয়ে ১ দশমিক ৩ গুণ বেশি দামে নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া ৯০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের দাম ১৮০০ মেগাহার্টজের ভিত্তিমূল্যের দ্বিগুণ করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ ঘোষণার মাধ্যমে দেশটিতে দীর্ঘদিনের একটি প্রতীক্ষার অবসান শুরুর ইঙ্গিত দিল। এর জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন বিনিয়োগকারীরা। দেশটির আলোচিত টুজি কেলেঙ্কারির পর টেলিকম খাতের অচলাবস্থা তৈরি হয়। এ বছরের শুরুতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ১২২টি টুজি টেলিকম লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ২০০৮ সালে দুর্নীতির মাধ্যমে লাইসেন্সগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। ওই কেলেঙ্কারির পর এ প্রথমবারের মতো সরকার মুক্তভাবে টুজি স্পেকট্রাম নিলামে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে কপিল শিবাল বলেন, এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখা। দেশীয় বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারী আকর্ষণে সরকারের ইচ্ছার কথা
জানান তিনি।
শিবাল আরও বলেন, কয়েক মন্ত্রী এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তাদের সুপারিশগুলো আলোচনার পর মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতভাবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। নতুন করে স্পেকট্রাম বরাদ্দের ফলে কেউ অতিরিক্ত কোনো সুবিধা পাবে না।
দাম নিয়ে নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছে ভারতে জিএসএম অপারেটরদের সংগঠন সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই)। এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংরক্ষিত দর ১৪ হাজার কোটি রুপি নির্ধারণ করা অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত। এটা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতাকে ব্যাহত করবে। ব্যাংকের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে সেবা সম্প্রসারণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। চলমান আর্থিক সংকট খাতটির বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে।
শিবাল আরও জানান, এ বিষয়টি নিয়ে এত দিন মামলা চলার কারণে স্পেকট্রামের দাম নির্ধারণের বিষয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে মন্ত্রিপরিষদ। ভিত্তিমূল্য নির্ধারণের আগে মন্ত্রীরা এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নিলাম সম্পন্ন হলে অতিরিক্ত স্পেকট্রাম, অন্যান্য মূল্য ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। তার ভাষায়, এ নিলাম থেকে আমরা একটি ভালো অর্থ আয় করতে পারব।
২০১২-১৩ অর্থবছরে স্পেকট্রাম নিলাম থেকে সম্ভাব্য আয় ৪০ হাজার কোটি রুপি। এ আয় সরকারের আর্থিক সংকট কাটাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার গণস্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন বাড়ানোর পাশাপাশি জিডিপি ঘাটতি ৫ দশমিক ১ শতাংশে সীমিত রাখতে পারবে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, শিগগিরই বিকল্প সুপারিশ করে মন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ বৈঠকে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর পর ওই প্রতিষ্ঠানই নিলামের তারিখ
নির্ধারণ করবে।
শিবাল আরও জানান, নিলাম প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সরকার বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভিত্তিদর কমানো, স্পেকট্রাম উন্মুক্তকরণ ও নিরপেক্ষকরণ, স্পেকট্রাম বন্ধক রাখার সুবিধা এবং অপারেটরদের অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থা সহজ করা। তিনি আরও জানান, এতে ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো হয়েছে। যেসব অপারেটর স্পেকট্রাম কিনতে সমর্থ হবে, তারা এক-তৃতীয়াংশ অর্থ নগদ পরিশোধ করবে। বাকিটা পরবর্তী দুই বছরে পরিশোধ করবে। ১০ কিস্তিতে শোধ করতে হবে সমুদয় অর্থ।
টেলিকম খাতের অচলাবস্থায় ব্যাংকগুলো অপারেটরদের আর্থিক সুবিধা দেবে কি না জানতে চাইলে শিবাল বলেন, ব্যাংকগুলো পুরোপুরি নিরাপদ। টুজি কেলেঙ্কারির পর এ খাত নিয়ে ব্যাংকগুলোর অনীহা তৈরি হয়েছে। মন্ত্রীর আশা, নিলামে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাবে। তার ভাষায়, ‘আমি নিশ্চিত, অনেক অপারেটর নিলামে অংশ নেবে।’ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের স্বাগত জানানো হবে।-SBB